জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) কলা অনুষদের ভর্তি পরীক্ষায় এক অনন্য নজির সৃষ্টি করলেন নওগাঁর মো. তাওহিদুর রহমান তাকু (৫০)।
বয়সকে কোনো বাধা মনে না করে প্রবল ইচ্ছাশক্তির জোরে তিনি অংশগ্রহণ করেছেন এই ভর্তি পরীক্ষায়। শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সাজিদ ভবনের চতুর্থ তলার মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের ৪১৮ নম্বর কক্ষে তিনি পরীক্ষা দেন। তার এই অংশগ্রহণ প্রমাণ করে দিয়েছে, শিক্ষার কোনো বয়স নেই।
পরীক্ষা শুরুর আগে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা বলেন তাকু। তিনি জানান, “বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার তীব্র বাসনা নিয়েই একের পর এক ভর্তিপরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে যাচ্ছি। আমি আমার চেষ্টা অব্যাহত রাখব।” তার এই সংকল্প ও অধ্যবসায় যেকোনো বয়সের মানুষের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হতে পারে।
তাকু আরও জানান, ১৯৮৯ সালে তিনি একটি গুরুতর অসুস্থতায় আক্রান্ত হন। এরপর দীর্ঘদিন অসুস্থতার মধ্যেই কাটাতে হয়েছে তাকে। পুরোপুরি সুস্থ হতে তার প্রায় দুই দশকেরও বেশি সময় লেগে যায়। ২০১৪/১৫ সাল নাগাদ তিনি মোটামুটি সুস্থ হন এবং তখন থেকেই পুনরায় পড়াশোনায় মনোযোগী হন। তিনি বলেন, “সুস্থ হওয়ার পর আমি ২০১৬ সালে ভর্তি পরীক্ষা দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু পরে আর দেওয়া হয়নি। তবে ২০১৯ সালে আবার পড়াশোনা শুরু করি। এরপর থেকে নিয়মিত ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছি।”
তিনি আরও জানান, নিয়মিত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে থেকে তিনি ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন এবং কোনো ধরনের ছাড় বা বিশেষ সুবিধা ছাড়াই পরীক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন। তার এই অধ্যবসায় শিক্ষার প্রতি নিঃশর্ত ভালোবাসার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
তাকুর এই ব্যতিক্রমী প্রচেষ্টার খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন, “আজ কলা অনুষদে এমন একজন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করছেন, এটি আমি শুনেছি। তিনি গতকালও পরীক্ষা দিয়েছেন। তার এই চেষ্টাকে আমরা সাধুবাদ জানাই। শিক্ষার প্রতি এমন আগ্রহ সত্যিই বিরল।”
তবে তিনি আরও বলেন, “কোনো ধরনের অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছেন কিনা তা আমরা খতিয়ে দেখব। যদি সব কিছু নিয়মমাফিক হয়, তাহলে তাকে অবশ্যই অভিনন্দন জানাব।” বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এমন সহযোগিতামূলক মনোভাব তাকুর জন্য উৎসাহব্যঞ্জক।
তাকু তার প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেছেন এনায়েতপুর দাখিল মাদরাসা থেকে। পরে গইরা তেঁতুলদিয়া দাখিল মাদরাসা, নওগাঁ থেকে আলিম পাস করেন। যদিও তার শারীরিক অসুস্থতার কারণে অনেক দিন পড়াশোনা বন্ধ ছিল, তবুও তিনি কখনোই হাল ছাড়েননি। সুস্থ হওয়ার পর তিনি আবার পড়াশোনা শুরু করেন এবং নিজের স্বপ্ন পূরণের পথে হাঁটতে থাকেন।
তাকুর এই অদম্য প্রচেষ্টা এবং অধ্যবসায় শিক্ষার প্রতি তার ভালোবাসার অনন্য উদাহরণ। তার এই ইচ্ছাশক্তি ও মানসিক দৃঢ়তা অন্যদের জন্যও একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। যেকোনো বয়সে শিক্ষার প্রতি আগ্রহ থাকলে যে কিছুই অসম্ভব নয়, তাকুর জীবন সেই বার্তাই বহন করছে।
তাকুর মতো ব্যক্তিত্বরা দেখিয়ে দেন, সঠিক ইচ্ছাশক্তি ও প্রচেষ্টা থাকলে বয়স কিংবা পরিস্থিতি কোনো বাধাই নয়। তার এই প্রচেষ্টা শুধু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়, দেশের শিক্ষাব্যবস্থার ইতিহাসেও স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
আপনার মতামত লিখুন :