দেশের সব সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং মহানগর ও জেলা সদর উপজেলায় অবস্থিত বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রথম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী ভর্তি লটারি পদ্ধতিতে করা হবে। আজ (১২ নভেম্বর) সকাল ১১টা থেকে স্কুলে ভর্তি প্রক্রিয়ার জন্য অনলাইনে আবেদন গ্রহণ শুরু হয়েছে। আবেদন প্রক্রিয়া চলবে ৩০ নভেম্বর বিকেল ৫টা পর্যন্ত। ডিসেম্বর মাসে ভর্তির লটারি অনুষ্ঠিত হবে। ভর্তির পর জানুয়ারিতে নতুন শিক্ষাবর্ষের ক্লাস শুরু হবে।
আবেদন প্রক্রিয়া ও সময়সূচি
আবেদন পদ্ধতি: ভর্তিতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন এই লিংক থেকে।
আবেদন ফি: আবেদন ফি ১১০ টাকা, যা টেলিটক প্রিপেইড মোবাইল থেকে এসএমএস-এর মাধ্যমে প্রদান করতে হবে।
আবেদন সময়সীমা: আবেদনপত্র গ্রহণ চলবে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত এবং ডিসেম্বর মাসে লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী বাছাই করা হবে।
লটারির মাধ্যমে ভর্তি
কোভিড-১৯ মহামারির পর থেকে লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি প্রক্রিয়া চালু হয়েছে এবং ২০২৫ শিক্ষাবর্ষেও ১ম থেকে ৯ম শ্রেণি পর্যন্ত একই পদ্ধতিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। লটারির বাইরে অন্য কোনো পদ্ধতিতে ভর্তি করা যাবে না।
ভর্তির বয়সের শর্তাবলি
জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ অনুযায়ী, প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীর বয়স ৬ বছরের বেশি হতে হবে। ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীর বয়স ৫ বছর থেকে ৭ বছরের মধ্যে হতে হবে। অর্থাৎ শিক্ষার্থীর জন্ম তারিখ ১ জানুয়ারি ২০১৭ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ এর মধ্যে হতে হবে। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে বয়স নির্ধারণে সর্বোচ্চ ৫ বছরের অতিরিক্ত সুবিধা দেওয়া যাবে। বয়স যাচাইয়ের জন্য অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদের সত্যায়িত কপি জমা দিতে হবে।
কোটা সংরক্ষণ পদ্ধতি
বিভিন্ন কোটার ভিত্তিতে শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য বিশেষ সুবিধা সংরক্ষিত থাকবে। এবারের কোটার নিয়মাবলিতে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে, যা নিচে উল্লেখ করা হলো:
১. ক্যাচমেন্ট এরিয়া কোটা: ঢাকা মহানগরের সরকারি বিদ্যালয়ের কাছাকাছি এলাকায় বসবাসরত শিক্ষার্থীদের জন্য ৪০ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ করতে হবে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর নির্দিষ্ট করে দেওয়া ক্যাচমেন্ট এরিয়ার জন্য এই কোটা প্রযোজ্য।
২. মুক্তিযোদ্ধা কোটা: মুক্তিযোদ্ধা বা শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ করা হবে। পূর্বে নাতি-নাতনিদের জন্যও কোটা সংরক্ষণের নিয়ম ছিল, যা বর্তমানে বাতিল করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান পাওয়া না গেলে এই আসন মেধাতালিকা থেকে পূরণ করা হবে।
৩. সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কোটা: সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের জন্য ষষ্ঠ শ্রেণির মোট আসনের ১০ শতাংশ কোটা সংরক্ষিত থাকবে।
৪. বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থী কোটা: বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের মূল শিক্ষার ধারায় সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে তাদের জন্য ন্যূনতম যোগ্যতা থাকা সাপেক্ষে ২ শতাংশ কোটা সংরক্ষিত থাকবে। এই কোটা পূরণ না হলে অপেক্ষমান তালিকা থেকে আসন পূরণ করা হবে।
৫. কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীর সন্তানদের কোটা: মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ ও অধীনস্থ দপ্তর/সংস্থায় কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য মহানগর, বিভাগীয়, এবং জেলা সদরের বিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য ন্যূনতম যোগ্যতা সাপেক্ষে ২ শতাংশ কোটা সংরক্ষিত থাকবে। আবেদনকারী বেশি হলে নিজেদের মধ্যে লটারির মাধ্যমে আসন নির্ধারণ করা হবে।
৬. সহোদর ও যমজ শিক্ষার্থীদের কোটা: কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যদি একজন শিক্ষার্থীর সহোদর/সহোদরা বা যমজ ভাই-বোন আগে থেকে অধ্যয়নরত থাকে, তবে তার জন্য ৩ শতাংশ কোটা সংরক্ষিত থাকবে। তবে এই সুবিধা সর্বোচ্চ দুটি সন্তানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।
বিদ্যালয় পছন্দক্রম নিয়মাবলি
প্রতি শিক্ষার্থী সর্বাধিক ৫টি বিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য পছন্দক্রম দিতে পারবেন। তবে যদি কোনো শিক্ষার্থী একই বিদ্যালয়ের দুই শিফট পছন্দ করে, তা হলে তা দুটি আলাদা পছন্দক্রম হিসেবে গণ্য হবে। শিক্ষার্থীর পছন্দ অনুযায়ী একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চূড়ান্তভাবে নির্ধারণ করতে হবে এবং তা ভর্তি সফটওয়্যারে অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এই নীতিমালার ভিত্তিতে ভর্তি প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :