সরকার দেশের ৪৮টি জেলায় শিক্ষিত যুব ও যুব নারীদের ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ প্রদানের লক্ষ্যে একটি নতুন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব পেয়েছে “ই-লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং লিমিটেড” নামের একটি প্রতিষ্ঠান। প্রকল্পের লক্ষ্য হচ্ছে শিক্ষিত বেকারদের ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ প্রদান করে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা। প্রকল্পের আওতায় ২৮,৮০০ জন যুবক ও যুব নারীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে, যার মোট বাজেট প্রায় ৩০০ কোটি টাকা।
প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো শিক্ষিত বেকারদের ফ্রিল্যান্সিং দক্ষতা প্রদান করে তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা। প্রশিক্ষণ নেওয়ার মাধ্যমে তারা ঘরে বসেই বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাজ করতে পারবেন, যা দেশের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পথ খুলে দেবে। প্রশিক্ষণটি বিনামূল্যে দেওয়া হবে এবং প্রশিক্ষণার্থীকে প্রতিদিন ৫০০ টাকা ভাতা দেওয়া হবে।
প্রকল্পের মেয়াদ
এ প্রকল্পটি ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন বছর ধরে পরিচালিত হবে। এর আগে সরকার ২০২২ সালে ১৬টি জেলায় পরীক্ষামূলকভাবে একই ধরনের একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছিল, যার বাজেট ছিল ৪৭ কোটি টাকা। সেই প্রকল্পে অংশগ্রহণকারী ৬৪ শতাংশ বা ৮১৩ জন প্রশিক্ষণ শেষে উপার্জনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পেরেছিলেন এবং ২১ শতাংশ বিভিন্ন চাকরিতে নিযুক্ত হন।
প্রশিক্ষণ প্রক্রিয়া ও সুযোগ-সুবিধা
প্রতিটি জেলায় দুটি ল্যাব স্থাপন করা হবে, যেখানে ২৫টি কম্পিউটার এবং উচ্চগতির ইন্টারনেট সুবিধা থাকবে। একেকটি ল্যাবে ২৫ জন করে প্রশিক্ষণার্থী প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারবে। প্রতিটি ব্যাচে ৫০ জন ভর্তি হতে পারবেন। প্রশিক্ষণের সময়কাল হবে তিন মাস, এবং প্রতিদিনের ভাতা হিসেবে প্রশিক্ষণার্থীকে ২০০ টাকা এবং খাবারের জন্য ৩০০ টাকা দেওয়া হবে। প্রশিক্ষণে অংশ নিতে ইচ্ছুকদের অনলাইনে আবেদন করতে হবে এবং তাঁদের বয়স হতে হবে ১৮ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে উচ্চমাধ্যমিক পাস বাধ্যতামূলক।
প্রশিক্ষণের কার্যকারিতা ও ভবিষ্যৎ নজরদারি
সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান এ উদ্যোগকে সমর্থন করেছেন। তবে তিনি মনে করেন প্রশিক্ষণের পর তরুণরা দক্ষতাগুলো ব্যবহার করতে পারছে কিনা সে বিষয়ে নজরদারি করা গুরুত্বপূর্ণ। সরকারি তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে দেশের ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী প্রায় ৩ কোটি ১৬ লাখ তরুণ রয়েছেন, যাদের মধ্যে ৪০.৬৭ শতাংশ এখনও নিষ্ক্রিয়।
প্রশিক্ষক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ প্রক্রিয়া
ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রায় ২০টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র জমা দেয়। তবে কারিগরি ও আর্থিক মূল্যায়নে “ই-লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং লিমিটেড” প্রতিষ্ঠানটি প্রথম হয়। অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ছিল বাংলাদেশ আইটি ইনস্টিটিউট, এসইও এক্সপেইট বাংলাদেশ লিমিটেড এবং নিউ হরাইজনস সিএলসি অব বাংলাদেশ। সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে এই প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগের প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে। অনুমোদন পেলেই প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হবে। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী জানিয়েছেন, আগের পরীক্ষামূলক প্রকল্পের সফলতার ভিত্তিতেই নতুন এই প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে এবং এটি দেশের জন্য একটি ভালো উদ্যোগ বলে বিবেচনা করা হচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :