অ্যামাজন কর্মীদের রিমোট জব ছেড়ে অফিসে ফেরার নির্দেশ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র প্রতিক্রিয়া। সম্প্রতি অ্যামাজনের ক্লাউড ইউনিট অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিসেস (AWS)-এর সিইও ম্যাট জার্মান সপ্তাহে পাঁচ দিন সশরীরে অফিস করার নীতি প্রনয়ন করেছেন এবং তা কার্যকর করার ঘোষণা দিয়েছেন। তবে এ নীতি কর্মীদের মধ্যে বেশ বিরোধ সৃষ্টি করেছে। ৩০ অক্টোবর (বুধবার) ৫০০ জনেরও বেশি কর্মী জার্মানকে এই নীতি প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়ে একটি খোলা চিঠি পাঠিছেন।
কর্মীদের মতে এই নীতি মোটেও বাস্তব অভিজ্ঞতা সম্পন্ন এবং পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে তৈরি হয় নি। এছাড়াও কর্মীরা জার্মানের আরো একটি মন্তব্যকে চ্যালেঞ্জ করেছেন। জার্মান দাবি করেছিলেন যে ৯০ শতাংশ কর্মী তার এই নীতির পক্ষে। তবে কর্মীদের মতে এটা সম্পুর্ন ভুল, অন্তত তাদের অভিজ্ঞতা বলছে কেউই এই নীতির পক্ষে সামিল নয়। এমনকি জার্মানের এই ভুলভাল দাবি অ্যামাজনের কাজের পরিবেশকে ভুলভাবে উপস্থাপন করছে।
অ্যামাজনের অফিসে ফেরার নীতির ঘোষণা ও কর্মীদের প্রতিক্রিয়া
অ্যামাজনের প্রধান নির্বাহী অ্যান্ডি জ্যাসি সেপ্টেম্বরে পাঁচ দিনের অফিস নীতি ঘোষণা করেন। তখনই কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। জ্যাসি বলেন, `রিমোট জবে অনেক কর্মীরাই তাদের জীবন নিজেদের মত সাজিয়ে নিয়েছেন, তবে এখন নিয়মিত অফিসে আসার নির্দেশ তাদের জীবনে এবং দৈনন্দিন সব কিছুতে পরিবর্তন প্রয়োজন হবে`। কর্মীরা রিমোট জবকেই ইতিবাচক ও উৎপাদনশীল হিসেবে মনে করেন এবং এতে তাদের কাজের ফলাফলও ভালো হয়।
কিন্তু অ্যামাজন এবার কর্মীদের কঠোরভাবে নির্দেশনা দিয়েছে, হয় সিয়াটলে স্থানান্তরিত হয়ে অফিসে ফিরতে হবে, নয়তো যারা এই নীতি মানতে পারবেন না তাদের জন্য স্বেচ্ছায় পদত্যাগের অপশন রয়েছে।
অ্যামাজন মনে করে কর্মীদের অফিসে ফিরে আসা কাজে সৃজনশীলতা, সহযোগিতা এবং সংযোগ বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। তাদের ধারণা, কর্মক্ষেত্রে উপস্থিত থেকে দলগত কাজের মাধ্যমে কর্মীরা নতুন উদ্ভাবনে আরও দক্ষ হয়ে ওঠেন, যা ব্যবসায়িক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
তবে বেশিরভাগ কর্মীরা মনে করেন এই সিদ্ধান্ত তাদের কর্মজীবনের ভারসাম্যে বিঘ্ন ঘটাবে এবং যাতায়াতের ক্ষেত্রে বাড়তি খরচ ও সময়ের অপচয় হবে।
ম্যাট জার্মান
জার্মানের প্রতিক্রিয়া ও কর্মীদের বক্তব্য
অক্টোবর মাসে এক বৈঠকে জার্মান তার কর্মীদের কিছুটা হুমকির সুরে বলেন, `যারা অফিসের পরিবেশে কাজ করতে না চান তাদের জন্য অন্য কোম্পানিতে চাকরির সুযোগ রয়েছে`। তার এই বক্তব্য কর্মীদের আরও ক্ষুব্ধ করেছে। যার ফলে তারা খোলা চিঠি দিতে বাধ্য হয়েছেন। চিঠিতে কর্মীরা তাদের বাস্তব জীবনের চ্যালেঞ্জগুলো উল্লেখ করেছেন। তার মধ্যে রয়েছে পরিবারিক বাধ্যবাধকতা, স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি এবং নিয়মিত অফিস করতে দীর্ঘ যাতায়াতের কষ্ট। এক কর্মী জানান তার নিকটস্থ অফিস বাসা থেকে চার ঘণ্টার দূরত্বে। আরেক কর্মী বলেন, যদি তারা স্থানান্তরিত হন তাহলে তার স্ত্রীকেও বর্তমান চাকরি ছেড়ে দিতে হবে।
আরেক কর্মী চিঠিতে উল্লেখ করেন, “একসময় আমি আমার কাজ নিয়ে গর্বিত ছিলাম এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেক আশাবাদী ছিলাম। কিন্তু এখন আর তা অনুভব করি না।”
অ্যামাজনের ম্যানেজমেন্টের ব্যবস্থা ও কর্মীদের মতামত
অ্যামাজনের মুখপাত্র মার্গারেট ক্যালাহান কর্মীদের জন্য কিছু সহায়ক ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানান। যেমন: বয়স্ক কর্মীদের যত্নসেবা, পোষা প্রাণীর দেখাশোনা, পরিবহন খরচে সহযোগিতা, পার্কিং সুবিধা এবং ফ্রি শাটল বাস প্রদান। কিন্তু কর্মীরা মনে করেন অ্যামাজনের এই নীতি অনেকের জীবনেই বিরূপ প্রভাব ফেলবে বিশেষ করে যাদের নিউরোডাইভারসিটি বা শিশু যত্নের প্রয়োজন। অনেক কর্মীরা বলছে অ্যামাজনের এই সিদ্ধান্ত তাদের `বিশ্বের সেরা নিয়োগদাতা` ইমেজের সঙ্গে মানানসই নয়। জার্মানের বক্তব্য কোম্পানির প্রতি তাদের আস্তা ভঙ্গ করেছে।
অ্যামাজনের কর্মীদের আগামী ২ জানুয়ারি থেকে প্রতি সপ্তাহে পাঁচ দিন অফিসে ফেরার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। যদিও কর্মীরা এখনও নীতির পরিবর্তনের দাবি জানাচ্ছেন। তবে ম্যানেজমেন্ট তাদের অবস্থানে অটল থেকে কর্মীদের অফিসে ফিরিয়ে আনার পক্ষেই রয়ে গেছে।
আপনার মতামত লিখুন :