কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে মিয়ানমার থেকে আসা পণ্যবাহী একটি কার্গো বোট এখনো আরাকান আর্মির হেফাজতে রয়েছে, যা স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। দশ দিন পেরিয়ে গেলেও বোটটি মুক্তি পায়নি, এতে প্রায় ৩০ হাজার বস্তা পণ্যবাহী মালামাল রয়েছে। পণ্যবাহী কার্গো বোটটির আটকে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন টেকনাফ স্থলবন্দর ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্টের ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন।
তিনি জানান, এর আগে আরাকান আর্মির হেফাজত থেকে মুক্তি পাওয়া দুটি কার্গো বোট ইতোমধ্যে টেকনাফ স্থলবন্দরে পৌঁছেছে এবং পণ্য খালাস কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তবে, একটি বড় কার্গো বোট এখনও মুক্তি পায়নি। এ বিষয়ে ব্যবসায়ীরা বেশ চিন্তিত। তাদের দাবি, আরাকান আর্মির এই ধরনের তৎপরতা সীমান্ত বাণিজ্যের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলছে এবং তারা এ ধরনের সমস্যার দ্রুত সমাধান চান।
টেকনাফ স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এহতেশামুল হক বাহাদুর বলেন, “বোটটি মুক্তি না পাওয়ায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে উদ্বেগ ও হতাশা বেড়েছে। আরাকান আর্মি তল্লাশির নামে বোটটি আটকে রেখেছে, যা সীমান্ত বাণিজ্যের জন্য একটি বড় সংকট। আমরা সবাই মিলে এ ধরনের সমস্যা সমাধানে কাজ করতে চাই। কিন্তু যদি এটি দীর্ঘায়িত হয়, তাহলে অনেক ব্যবসায়ী টেকনাফে তাদের কার্যক্রম গুটিয়ে নিতে বাধ্য হবেন।”
জানা গেছে, দেড় মাসের বিরতির পর গত ১১ জানুয়ারি মিয়ানমারের ইয়াংগুন থেকে পণ্যবাহী কার্গো বোটগুলো টেকনাফ স্থলবন্দরের উদ্দেশে রওনা দেয়। তবে ১৬ জানুয়ারি দুপুরে নাফ নদের মোহনায় নাইক্ষ্যংকদিয়া এলাকায় আরাকান আর্মি তল্লাশির নামে তিনটি বোট আটক করে। এই তিনটি বোটে ৫০ হাজারেরও বেশি বস্তা মালামাল ছিল, যার মধ্যে আচার, শুঁটকি, সুপারি, কপিসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য রয়েছে। এসব পণ্য স্থানীয় ব্যবসায়ীদের, যেমন শওকত আলী, ওমর ফারুক, মো. আয়াছ, এমএ হাসেম, মো. ওমর ওয়াহিদ, আবদুর শুক্কুর সাদ্দামের মতো আমদানিকারকদের।
পরে গত সোমবার সকাল বেলায় সাতুরু এবং এমবি হারিকিউ লেছ নামে দুটি কার্গো বোট ফেরত দেওয়া হয়। এই দুই বোটে ২৭,২২২ বস্তা মালামাল ছিল, যা বর্তমানে খালাস করা হচ্ছে। তবে একটি বড় কার্গো বোট এখনও আরাকান আর্মির হেফাজতে রয়েছে।
বন্দর সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, আরাকান আর্মির এই আটকের পেছনে রাজনৈতিক এবং আর্থিক স্বার্থ জড়িত। তাদের মতে, বোটটির মালিক মিয়ানমারের একটি শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তার ঘনিষ্ঠজন হওয়ায় আরাকান আর্মি চাপ প্রয়োগের উদ্দেশ্যে এটি আটকে রেখেছে। এ ছাড়া, আরাকান আর্মি সীমান্ত বাণিজ্যে নিজেদের অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করতে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বলেন, “তল্লাশির নামে আরাকান আর্মি বোটে থাকা কিছু মালামাল খালাস করেছে এবং এটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে। তাদের তল্লাশি এখনও শেষ হয়নি। দুই-এক দিনের মধ্যেই এটি মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।”
এ বিষয়ে আমদানিকারক কায়েছ এন্টারপ্রাইজের মালিক নুরুল কায়েছ সাদ্দাম বলেন, “আমার অনেক মালামাল ওই বোটে রয়েছে। আগের দুটি বোট মুক্তি পেলেও এটি কেন এখনো ছাড়েনি, তা বুঝতে পারছি না। আমরা আশা করছি, দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হবে।”
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন জানান, “আমরা বিষয়টি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। এখনও একটি পণ্যবাহী বোট মুক্তি পায়নি। এটি নিয়ে সংশ্লিষ্ট পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে।”
অন্যদিকে, স্থানীয় ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন যে এ ধরনের তৎপরতা সীমান্ত বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তারা বলেন, “এভাবে যদি কার্গো বোট আটকে রাখা হয়, তাহলে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা অসম্ভব হয়ে পড়বে। সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত এই সমস্যা দ্রুত সমাধান করা।”
অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের জন্য এই ধরনের জটিলতা একটি বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যবসায়ীরা আশাবাদী যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং সীমান্ত প্রশাসনের কার্যকর উদ্যোগের মাধ্যমে এই সংকট সমাধান হবে।
আপনার মতামত লিখুন :