টেকনাফ-মিয়ানমার সীমান্তে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উপস্থিতি নিয়ে এলাকাজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক আলোচনা। শনিবার (২৫ জানুয়ারি) সকালে টেকনাফের সমুদ্রসৈকত ও শাহপরীর দ্বীপের সীমান্ত এলাকা ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় জাতীয় রাজনীতির অন্যতম শীর্ষ এই নেতাকে। তার সঙ্গেই ছিলেন স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা, যাঁদের সঙ্গে কথা বলার এবং ছবি তোলার দৃশ্য সেখানে উপস্থিত সাধারণ মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে।
মির্জা ফখরুলের সাম্প্রতিক বিবিসি বাংলার একটি সাক্ষাৎকার দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। সেই সাক্ষাৎকারে তিনি বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে নির্বাচন এবং গণতন্ত্র রক্ষার বিষয়ে কঠোর মনোভাব প্রকাশ করেন। তাঁর এই সফর, যা দলীয়ভাবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ছাড়াই অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেটি দলীয় কর্মীদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে।
জেলা বিএনপির অর্থ সম্পাদক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ জানান, মহাসচিবের উপস্থিতির খবর পেয়ে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান। এই সাক্ষাৎকালে মির্জা ফখরুল সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান এবং যেকোনও ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করার প্রস্তুতি নিতে বলেন। বিশেষ করে তিনি ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে এবং বাকস্বাধীনতা রক্ষার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
টেকনাফ সদর ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানসহ স্থানীয় অন্যান্য নেতাকর্মীরাও মহাসচিবের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা টেকনাফের সমুদ্রসৈকতে স্থানীয় জেলেদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের খোঁজখবর নেন। জেলেদের জীবনযাত্রা এবং তাদের নানা সমস্যার বিষয়ে মহাসচিবকে জানানো হয়। জেলেদের দাবি, তারা নানা ধরনের আর্থিক ও প্রশাসনিক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন, যা সমাধানে কেন্দ্রীয় নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা প্রয়োজন।
মির্জা ফখরুলের এই সফরকে কেন্দ্র করে স্থানীয় এলাকায় উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়। তাকে দেখতে দূরদূরান্ত থেকে বিএনপির নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণ ছুটে আসেন। তবে বিএনপির কেন্দ্র থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি না আসায় অনেকে একে ব্যক্তিগত সফর হিসেবে দেখছেন। বিএনপির এক কেন্দ্রীয় নেতার মতে, মির্জা ফখরুল মূলত পরিবারের সঙ্গে কিছু সময় কাটানোর জন্য টেকনাফ এসেছেন।
রাজনীতির বাইরে মহাসচিবের এই সফর কিছুটা ভিন্ন রকম আবেদন সৃষ্টি করেছে। তাকে সস্ত্রীক শাহপরীর দ্বীপের বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে দেখা গেছে। এলাকাবাসী তার সঙ্গে স্বতঃস্ফূর্তভাবে কথা বলার সুযোগ পেয়ে উচ্ছ্বসিত। অনেকেই তাদের নেতা মহাসচিবের কাছ থেকে রাজনৈতিক দিকনির্দেশনার পাশাপাশি ব্যক্তিগত পরামর্শও গ্রহণ করেছেন।
এদিকে, সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির আন্দোলন এবং সরকার বিরোধী অবস্থান দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। মির্জা ফখরুলের এই সফর দলের কর্মীদের মনোবল বাড়াতে এবং আন্দোলনের প্রতি তাদের আরও দৃঢ়ভাবে সংযুক্ত রাখতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন স্থানীয় নেতারা।
তবে রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় মহাসচিবের এই সফরকে অনেকেই একটি কৌশলগত পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। স্থানীয় জনগণের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন এবং তাদের অভাব-অভিযোগ শোনার মধ্য দিয়ে দলীয় শক্তিকে আরও সুসংহত করার প্রচেষ্টা এটি হতে পারে বলে অনেকে মন্তব্য করেছেন।
উল্লেখ্য, টেকনাফ-মিয়ানমার সীমান্ত এলাকা দীর্ঘদিন ধরেই দেশের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। এই এলাকায় মির্জা ফখরুলের উপস্থিতি বিএনপির স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনার সঞ্চার করেছে।
আপনার মতামত লিখুন :