বাংলাদেশ বুধবার, ১৯ মার্চ, ২০২৫, ৫ চৈত্র ১৪৩১
আজ ভালোবাসা দিবস

গোলাপের বাজারে ধস, বিপাকে চকরিয়ার চাষিরা

দৈনিক প্রথম সংবাদ ডেস্ক

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৫, ১০:৫৭ এএম

গোলাপের বাজারে ধস, বিপাকে চকরিয়ার চাষিরা

গোলাপ বাগান থেকে গোলাপ তুলছে বাগানি আব্দুল্লাহর কিশোরী মেয়ে সামিহা। গতকাল বিকেলে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বরইতলীর মাইজপাড়া এলাকায়

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বরইতলীর গোলাপ চাষিদের মুখে হাসি নেই এবার। আবহাওয়ার অনুকূল পরিস্থিতিতে গোলাপের বাম্পার ফলন হলেও বাজারে চাহিদা কম থাকায় আশানুরূপ বিক্রি হয়নি। গোলাপবাগান মালিক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ জানিয়েছেন, এবার ভালোবাসা দিবসে মাত্র ৯০০ গোলাপ বিক্রি করেছেন। প্রতিটি গোলাপের দাম ৩ থেকে ৫ টাকার মধ্যে নেমে এসেছে। গত বছর এই সময়ে তিনি ৭ হাজার গোলাপ ১৫ টাকায় বিক্রি করেছিলেন। এখন তাঁর বাগানে প্রায় আড়াই হাজার গোলাপ অবিক্রীত অবস্থায় পড়ে রয়েছে।

চকরিয়া গোলাপবাগান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মঈনুল ইসলাম জানিয়েছেন, গত বছর ভালোবাসা দিবসকে কেন্দ্র করে চার লাখ গোলাপ বিক্রি হয়েছিল। কিন্তু এ বছর মাত্র ১ লাখ ১০ হাজার গোলাপ বিক্রি হয়েছে। গ্ল্যাডিওলাসের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং পবিত্র শবে বরাত একই সময়ে হওয়ায় ফুলের চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। এ কারণে গোলাপ ও গ্ল্যাডিওলাসের বড় দরপতন হয়েছে।

বরইতলী ইউনিয়নের ওপর পাড়া, নামার পাড়া, খয়রাতি পাড়া, নতুন রাস্তার মাথা ও মাইজ পাড়াসহ ১০ থেকে ১২টি গ্রামে প্রায় ১০৫ একর জমিতে গোলাপ ও গ্ল্যাডিওলাস চাষ করা হয়েছে। এসব বাগানে প্রায় তিন থেকে চার শ শ্রমিক কাজ করেন। ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে প্রতিটি বাগান থেকে ২ থেকে ১০ হাজার গোলাপ কাটার প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু পাইকারি ক্রেতার অভাবে অধিকাংশ ফুল অবিক্রীত রয়ে গেছে।

ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে তেমন বিক্রি হয়নি গোলাপ।
ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে তেমন বিক্রি হয়নি গোলাপ। কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বরইতলীর পুরোনো রাস্তার মাথায় একটি দোকানে গোলাপ গুছিয়ে রাখছেন এক চাষি। গতকাল সন্ধ্যা ছয়টার দিকে

চকরিয়া গোলাপবাগান মালিক সমিতির তথ্যমতে, বরইতলী থেকে প্রতিদিন যে গোলাপ ও গ্ল্যাডিওলাস কাটা হয়, তার ৯০ শতাংশ চট্টগ্রাম নগরের চেরাগী পাহাড় এলাকার ফুলের দোকানে সরবরাহ করা হয়। বাকি গোলাপ ও গ্ল্যাডিওলাস স্থানীয় বাজার এবং ঢাকার বিভিন্ন আড়তে সরবরাহ করা হয়। তবে এ বছর সরবরাহ অনেক কম হয়েছে বলে জানান চাষিরা।

বাগান মালিক রুসিলা বেগম ও শেফায়েত উল্লাহ জানান, গোলাপের চাহিদা কমে যাওয়ায় তাদের বাগানের অধিকাংশ ফুল অবিক্রীত রয়ে গেছে। এমনকি অন্যান্য বছরের মতো ভালো দামে ফুল বিক্রির সুযোগও হয়নি। চাষিরা সাধারণত ৮ থেকে ১৫ টাকায় প্রতিটি গোলাপ বিক্রি করেন। কিন্তু এবার সেই দাম ৩ থেকে ৫ টাকায় নেমে এসেছে।

চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্যমতে, বরইতলীর গোলাপবাগান থেকে প্রতিবছর ভালোবাসা দিবসে প্রায় চার লাখ গোলাপ বিক্রি হয়। এ বছর সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ায় চাষি ও বাগানমালিকদের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে। এই ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে আগামী পয়লা বৈশাখ, ২১ ফেব্রুয়ারি ও ঈদের মতো উৎসবে ভালো চাহিদা থাকলেই চাষিরা ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন।

এ বছর ভালোবাসা দিবসে তেমন বিক্রি হয়নি
এ বছর ভালোবাসা দিবসে তেমন বিক্রি হয়নি বরইতলীর বাগানের গোলাপ। গতকাল সন্ধ্যা ছয়টার দিকে

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় বরইতলী পুরোনো রাস্তার মাথায় গিয়ে দেখা যায়, চাষিরা গোলাপ ও গ্ল্যাডিওলাস আঁটি বাঁধছেন। আঁটি বাঁধার পর এসব গোলাপ রাত আটটার দিকে চট্টগ্রামের গাড়িতে তুলে দেবেন।

চকরিয়া গোলাপবাগান মালিক সমিতি সূত্র জানায়, বরইতলী ইউনিয়ন থেকে প্রতিদিন যেসব গোলাপ ও গ্ল্যাডিওলাস কাটা হয়, এর ৯০ শতাংশ সরবরাহ করা হয় চট্টগ্রাম নগরের চেরাগী পাহাড় এলাকার ফুলের দোকানগুলোয়। অবশিষ্ট গোলাপ চকরিয়া, কক্সবাজারের বিভিন্ন দোকান ও ঢাকার আড়তগুলোতে সরবরাহ করা হচ্ছে।

চকরিয়া গোলাপ বাগান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মঈনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, গত বছর ভালোবাসা দিবসকে কেন্দ্র করে চার লাখ গোলাপ ও এক লাখ গ্ল্যাডিওলাস বিক্রি হলেও এবার ১ লাখ ১০ হাজার গোলাপ ও ৫০ হাজার গ্ল্যাডিওলাস বিক্রি হয়েছে। এতে চাষি ও বাগানমালিকদের কপালে ভাঁজ পড়েছে। এই ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে সময় লাগবে বলে জানান। বাগান মালিকরা জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে গোলাপের বাজার পুনরুদ্ধারে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে ফুলের বাজার সম্প্রসারণে উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি সরকারি সহযোগিতা ও নতুন বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে তারা ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে চান।

চকরিয়ার গোলাপচাষিদের এই সংকটপূর্ণ অবস্থায় সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।

 

Link copied!

সর্বশেষ :