গত মৌসুমে ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় এবার জয়পুরহাট জেলায় সরিষার আবাদ বেশি হয়েছে। মাঠে মাঠে সরিষার ফুলের সমারোহ দেখে বাম্পার ফলনের আশা করলেও এবার আশানুরূপ ফলন পাননি কৃষক। এমনকি গতবারের তুলনায় এবার দামও কম পাচ্ছেন সরিষা চাষিরা।
ভোজ্যতেলের দাম বেড়ে যাওয়ার পর থেকে এ জেলায় সরিষার আবাদ বেড়েছে। গত দুই মৌসুমের তুলনায় এবার ৬ হাজার ২৩০ হেক্টর বেশি জমিতে সরিষা চাষ করেছেন স্থানীয় কৃষকরা।
তারা জানান, প্রতি বিঘা জমিতে সরিষা চাষে ছয় হাজার থেকে আট হাজার টাকা খরচ হয়। আর সরিষা উৎপাদন হয় ৬ মণ থেকে ৮ মণ। বাজারে দাম ভালো থাকলে প্রতি বিঘায় ১৮ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা বিক্রি সম্ভব। এতে খরচ বাদে বেশি অংশই লাভ থাকে। কিন্তু এবার সরিষার ফলন কম ও দাম কম থাকায় তেমন লাভবান হতে পারছেন না সেখানকার চাষিরা।
ক্ষেতলাল উপজেলার জিয়াপুর গ্রামের কৃষক নাসির উদ্দিন বলেন, গত বছর সরিষার ফলন ও দাম ভালো ছিল। এ কারণে এবার সাড়ে ৩ বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছি। তবে ফলন ও দাম কম। এবার ২ হাজার ২৫০ টাকা দরে সরিষা বিক্রি করেছি। গতবারের চেয়ে এবার প্রতি মণে অন্তত ৬শ টাকা থেকে ৮শ টাকা কম দরে সরিষা বিক্রি হচ্ছে।
গত মৌসুমে তিন বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছিলেন মহব্বতপুর এলাকার কৃষক ফিরোজ হোসেন। এবার তিনি দুই বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছেন। এই কৃষক বলেন, এবার ফলন কম হয়েছে। গত বছর বিঘায় ৭ মণ থেকে ৮ মণ ফলন হয়েছিল। কিন্তু এবার বিঘায় ৫ মণ থেকে ৭ মণ পর্যন্ত ফলন হয়েছে। গত বছর কাঁচা সরিষা ২ হাজার ৮শ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। আর শুকনো সরিষা বিক্রি করেছি ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ২শ টাকায়। কিন্তু এবার দাম খুবই কম। কাঁচা সরিষা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার টাকা থেকে ২ হাজার একশ টাকায়। একটু ভালো মানের হলে ২ হাজার ২শ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। আর শুকনো প্রতি মণ সরিষা সর্বোচ্চ ২ হাজার ৪শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এই দামে সরিষা বিক্রি করায় তেমন লাভ করা যাচ্ছে না।
গত মৌসুমে বিঘায় ফলন হয়েছে ৭ মণ থেকে ৮ মণ। মান ও প্রকারভেদে প্রতি মণ সরিষার দাম ছিল ২ হাজার ৮শ টাকা থেকে ৩ হাজার ২শ টাকা। আর এই মৌসুমে বিঘায় ফলন হয়েছে ৫ মণ থেকে ৭ মণ। এবার প্রতি মণ সরিষার দাম ২ হাজার টাকা থেকে ২ হাজার ৪শ টাকা।
সপ্তাহের প্রতি মঙ্গলবার ও শুক্রবার জয়পুরহাট সদরের জামালপুরে সরিষার পাইকারি বাজার লাগে। সেখানে স্থানীয় কৃষকরা সরিষা বিক্রি করেন। ওই বাজারে পাইকারিতে সরিষা কেনেন ব্যবসায়ী জহুরুল ইসলাম
তিনি বলেন, এবার অনেক কৃষক সরিষা আবাদ করেছে। তাছাড়া গত বছর দাম বেশি থাকায় বড় বড় ব্যবসায়ীরা ভালো দাম পাওয়ার আশায় সরিষা মজুত করেছিল। সেসব সরিষা অনেকে বিক্রি করতে পারেননি। তাই এবার অনেক ব্যবসায়ী সরিষা তেমন কেনেননি। এজন্য বাজারে এবার সরিষার দাম কম।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০২১-২২ মৌসুমে জেলায় ১২ হাজার ২০৫ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছিল। এরপরের ২০২২-২৩ মৌসুমে ২ হাজার ৪৫৫ হেক্টর জমিতে আবাদ বেড়ে ১৪ হাজার ৬৬০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছিল। আর গত মৌসুমে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৪ হাজার ১৮৯ মেট্রিক টন। এবার সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২১ হাজার ৩৪৯ হেক্টর জমিতে। চাষ হয়েছে ১৮ হাজার ৮৩৫ হেক্টর জমিতে। যা গতবারের তুলনায় ৪ হাজার ১১৭ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ বেশি হয়েছে। এই মৌসুমে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৬ হাজার ২৯৪ মেট্রিক টন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রাহেলা পারভীন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এবার চাষিরা বিলম্ব করে সরিষা চাষ শুরু করেছেন। আর আবহাওয়াও অনুকূলে ছিল না। এ কারণে এবার সরিষার উৎপাদন গতবারের তুলনায় কিছুটা কম হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :