বাংলাদেশ সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ৪ ফাল্গুন ১৪৩১

পাইকগাছায় প্রায় সাড়ে ৬ শত হেক্টর জমিতে সৌরভ ছড়াচ্ছে আম গাছের মুকুল

দৈনিক প্রথম সংবাদ ডেস্ক

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২২, ২০২৫, ১১:১২ পিএম

পাইকগাছায় প্রায় সাড়ে ৬ শত হেক্টর জমিতে সৌরভ ছড়াচ্ছে আম গাছের মুকুল

আমের মুকুল।

 

রঙিন বনফুলের সমারোহ প্রকৃতি যেন সেজেছে বর্ণিল সাজে। চোখ জুড়ানো আমের মুকুলে সেজেছে গ্ৰাম মহল্লা। ফটো প্রেমীরা আমের মুকুলে সাথে সেলফি তুলে ছবি পোস্ট করে জানান দিচ্ছে বাহারী ফুলের। খুলনার পাইকগাছায় মুকুলে মুকুলে ভরে গেছে আম গাছ। বসন্তের আগমনের মধ্য দিয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সৌরভ ছড়াচ্ছে আমের মুকুল। সু-মিষ্টি ঘ্রাণে মৌ মৌ করছে প্রকৃতি। এ যেন মুকুলের স্বর্গরাজ্য। বসন্তের শুরু থেকেই মুকুলে মুকুলে শোভা পাচ্ছে পুরো উপজেলার আমগাছ গুলো। ষড়ঋতুর এই বাংলাদেশে পাতাঝরা ঋতু’র রাজা বসন্ত। প্রতি বারের ন্যায় শীতের জড়তা কাটিয়ে কোকিলের সেই সুমধুর কুহুতানে মাতাল করতে আবারও ফিরে এলো ঋতুরাজ বসন্ত।পাইকগাছার কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার মধ্যে ৪টি ইউনিয়ন গদাইপুর, হরিঢালী, কপিলমুুনি, রাড়ুলী ও পৌরসভা ছাড়া বাকী ইউয়িন গুলিতে সীমিত আমের গাছ রয়েছে।

উপজেলায় ৬১৫ হেক্টর জমিতে মোট আম গাছ রয়েছে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার। প্রায় ৭ শতাধিক আম বাগান রয়েছে। এসব বাগানে সর্বনিন্ম ২০টি গাছ রয়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন ইউনিয়নে ছড়ানো ছিটানো ছোট ছোট আম গাছ আছে। আম বাগান থেকে চলতি মৌসুমে সাড়ে ৮  হাজার  মেট্রিকটন আমের ফলন পাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।

রঙিন বনফুলের সমারোহ প্রকৃতি যেমন সেজেছে বর্ণিল সমাজে। গ্রামবাংলার সর্বত্রই এখন এমনই দৃশ্য। মৌমাছির গুনগুন শব্দে ফুলের রেনুকা থেকে মধু সংগ্রহ আর প্রজাপতির এক ফুল থেকে আরেক ফুলে পদার্পণ এ অনুরুপ প্রাকৃতিক দৃশ্য সত্যিই যেন মনোমুগ্ধকর এক মুহূর্ত।

পাইকগাছা বিভিন্ন এলাকায় সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সদ্য মুকুল ফোটান দৃশ্য এখন ইট পাথরের শহর থেকে শুরু করে বিস্তৃত পাইকগাছার গ্রাম্য জনপদেও। উপজেলার প্রায় বেশীর ভাগ ইউনিয়ানের গ্রাম গুলোতে মুকুলে ছেয়ে গেছে। মুকুলে মুকুলে ভরে গেছে বাগান গুলোর প্রায় ৬০-৭০ শতাংশ। বাগান মালিক, কৃষিবিদ, আমচাষিরা আশা করছেন বড় ধরণের কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে উপজেলায় আমের বাম্পার ফলন হবে।

আম চাষি ও বাগান মালিকরা বাগানের পরিচর্যা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। অবশ্য গাছে মুকুল আশার আগে থেকেই গাছের পরিচর্যা করে আসছেন তারা। যাতে করে গাছে মুকুল বা গুটি বাঁধার সময় কোন সমস্যার সৃষ্টি না হয়। সারি বদ্ধ গাছে আমের মুকুল বেশ শোভা ছড়াচ্ছে তার নিজস্ব মহিমায়।জাতীয় অর্থনীতি আম লাভ জনক ফল হওয়ায় প্রতি বছর বাগানের সংখ্যা বাড়ছে। উপজেলা মল্লিকা, চুষা, আশ্বিনা, ল্যাংড়া, হিমসাগর, ফজলি, লতা, মোহনা, বারি ৪, আম্ররূপালি, গোপালভোগ সহ অন্যান্য জাতের আম চাষের উপযোক্ত হওয়ায় চাষীরা নিজ উদ্যোগে প্রথমে উপজেলা বিভিন্ন নার্সারি থেকে চারা সংগ্রহ করে আমের বাগান সৃজন করলেও বর্তমানে তারা নিজেরাই চারা উৎপাদন করে তাদের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য প্রাণপন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এর সুফলও পেয়েছেন অনেকেই।

মৌমাছির দল গুনগুন করে ভিড়তে শুরু করছে আম্রমুকুলে। মুকুলের সেই সু-মিষ্টি সুবাসে আন্দোলিত হয়ে উঠেছে চাষীর মনও। উপজেলার কপিলমুনি,গদাইপুর, হরিঢালী, রাড়ুলী, পৌরসভা, চাঁদখালীসহ বিভিন্ন এলাকা পর্যবেক্ষণে এমনই চিত্র দেখা গেছে। কপিলমুনি ইউনিয়নের পুরস্কারপ্রাপ্ত অখিল বন্ধু ঘোষ জানান, বর্তমানে আবহাওয়া অনুকূলে রয়েছ। বাগানের আম গাছে মুকুল আসা শুরু করেছে। আমরা কৃষি বিভাগে গিয়ে বিভিন্ন পরামর্শ গ্রহণ করছি। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারাও আমাদের বাগানে এসে আমের বাগান ভাল হওয়ার জন্য বিভিন্ন দিক নির্দেশনা প্রদান করেছেন।

এদিকে আমের আগাম মুকুলে চাষীরা খুঁশি হলেও বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা শঙ্কার কথা উল্লেখ করে বলেন, পুরোপুরিভাবে শীত বিদায়ের আগেই মুকুল আসা ভাল নয়, ঘন কুয়াশায় মুকুল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। যদিও ফাগুনে কুয়াশার আশংকা কম তারপরও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে প্রকৃতির বিরূপ আচারণে আমের মুকুল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। হরিঢালীর মোঃ মাহবুর সরদার, গদাইপুরের খায়রুল গাজী, কপিলমুনি মুক্তার মনিসহ বিভিন্ন এলাকার আম ব্যবসায়ীরা জানান, সারা বছরের খরচ জোগাড় করেন এবং ঋণ পরিশোধ করেন, অনেক চাষী আম বিক্রি করে মেয়ের বিবাহসহ অর্থনৈতিক অনেক বিষয় এ মৌসুমের সাথে জড়িত।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জানান, আমাদের পাইকগাছায় ৬০-৭০ ভাগ মুকুল চলে এসেছে, চাষীদের বলছি ফুল ফোটার অবস্থায় কোন ঔষধ বা কীটনাশক ব্যবহার না করার জন্য নিষেধ করছি। তবে ফুল ফোটার সময় মেঘলা ও কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়া থাকলে পুষ্প মঞ্জুরি তে পাউডারি মিলডিউও অ্যানত্রাকনোজ রোগের আক্রমন হতে পারে।

তিনি আরও জানান, এ সময়ে বাগানে হপার এবং ফুদকী পোকা গুলো গাছের বাকলে লুকিয়ে থাকে। এ ধরনের পোকা খুব বেশী দেখা দিলে অনুমোদিত কীটনাশক নাশক স্প্রে করার পরামর্শ প্রদান করছি। তিনি আরও বলেন,কুয়াশার কারণে আমের মুকুল ক্ষতিগ্রস্ত হতেপারে। এজন্য অনুমোদিত সালফার বা বালাই নাশক স্প্রে’র পরামর্শ দিয়েছেন। আবহাওয়া যদি রৌদ্রজ্জ্বল হয় এবং তাপমাত্রা একটু একটু করে পড়ে তবে ফলন ভালো হবে বলে জানান কৃষি কর্মকর্তারা।

 

Link copied!

সর্বশেষ :