বাংলাদেশ রবিবার, ২৩ মার্চ, ২০২৫, ৮ চৈত্র ১৪৩১

নোয়াখালীতে অপারেশন ডেভিল হান্টে আ. লীগের ১৩ নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার

দৈনিক প্রথম সংবাদ ডেস্ক

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৫, ১১:০৪ এএম

নোয়াখালীতে অপারেশন ডেভিল হান্টে আ. লীগের ১৩ নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার

২৪ ঘণ্টায় আওয়ামী লীগের ১৩ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার

">

নোয়াখালীতে যৌথ বাহিনীর অভিযানে গত ২৪ ঘণ্টায় আওয়ামী লীগের ১৩ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ অভিযানের বিষয়ে বুধবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে নোয়াখালীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) মোহাম্মদ ইব্রাহীম ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মঙ্গলবার জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় পরিচালিত ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ নামে বিশেষ এই অভিযানে যৌথবাহিনী নোয়াখালীর ৯ উপজেলায় একযোগে অভিযান চালায়। অভিযানের অংশ হিসেবে সুধারাম থানা এলাকা থেকে তিনজন, হাতিয়া থানা এলাকা থেকে আটজন, কোম্পানীগঞ্জ থানা এলাকা থেকে একজন এবং চাটখিল থানা এলাকা থেকে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

অভিযানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, পুলিশ ও নৌ পুলিশ একসঙ্গে কাজ করেছে। অভিযানে অংশগ্রহণকারীরা জানিয়েছেন, অপরাধ দমন ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত তল্লাশি ও গ্রেপ্তার কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইব্রাহীম বলেন, “নোয়াখালীতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এই অভিযান অব্যাহত থাকবে। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। তাদের মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র হত্যার মামলাসহ আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মামলা রয়েছে।”

তিনি আরও জানান, “যৌথবাহিনী এই অভিযান চালানোর সময় কোনো ধরনের অরাজকতা বা সহিংসতা এড়াতে সতর্ক অবস্থানে ছিল। অভিযানের সময় কোনো বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। তল্লাশি ও নজরদারি কার্যক্রম আরও জোরদার করা হবে।”

স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নোয়াখালীর বিভিন্ন থানা এলাকায় অপরাধীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করতে যৌথবাহিনী ধারাবাহিকভাবে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের গতিবিধি নজরদারি করা হচ্ছে এবং অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত থাকার প্রমাণ মিললেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

অপারেশন ডেভিল হান্ট শুরুর পর থেকে জেলার বিভিন্ন স্থানে এই ধরনের অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। এ অভিযানের উদ্দেশ্য হলো, অপরাধমুক্ত একটি সমাজ গড়ে তোলা এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা। স্থানীয় জনগণ এ ধরনের উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও কেউ কেউ অভিযান পরিচালনার পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাদের দাবি, অভিযান পরিচালনার সময় নিরীহ ব্যক্তিরা যেন ভুক্তভোগী না হন।

এদিকে গ্রেপ্তারকৃতদের পরিবারের সদস্যরা ও আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “অভিযান সঠিকভাবে পরিচালিত হলে দলের পক্ষ থেকে কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু যদি কোনো নির্দোষ ব্যক্তি হয়রানির শিকার হয়, তবে সেটি মেনে নেওয়া যাবে না।”

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইব্রাহীম অভিযানের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ কার্যক্রম পরিচালনার আশ্বাস দিয়ে বলেন, “অপরাধীদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে। তবে নির্দোষ কাউকে হয়রানি করা হবে না। প্রতিটি গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট তথ্য ও প্রমাণের ভিত্তিতেই অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।”

নোয়াখালী জেলার বিভিন্ন স্থানে অপরাধ দমনে এমন অভিযান নিয়মিত চালানো হবে বলে জানিয়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। তারা জানিয়েছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় যেকোনো ধরনের প্রয়াস নেওয়া হবে এবং অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড কঠোরভাবে দমন করা হবে।

অভিযানের কারণে স্থানীয় জনগণের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ কেউ অভিযানের প্রশংসা করলেও, কেউ কেউ এর কার্যকারিতা ও উদ্দেশ্য নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। তবে অধিকাংশ মানুষই আশা করছেন, এই অভিযানের মাধ্যমে অপরাধ প্রবণতা কমবে এবং নোয়াখালীতে শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।

এ ধরনের অভিযান যে কোনো ধরনের রাজনৈতিক বা সামাজিক সহিংসতা প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রচারণা চালানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। প্রশাসন আশা করছে, এই ধরনের অভিযানের মাধ্যমে অপরাধের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে এবং জনগণ আরও নিরাপদ জীবনযাপন করতে পারবে।

আপনার মতামত লিখুন :

Link copied!

সর্বশেষ :