সাম্প্রতিক গবেষণা অবশ্য বলছে ভিন্ন কথা। গবেষণায় প্রকাশ, সার্চ ইঞ্জিন মানেই যে গুগলের আধিপত্য, তা কিন্তু নয়; বদ্ধ ধারণাটা এখন রীতিমতো পাল্টে যাচ্ছে। যার প্রভাব অবশ্য সুদূরপ্রসারী। গুগলসাম্রাজ্যে জোরেশোরে ধাক্কা লেগেছে। আধিপত্য খর্বের পেছনে আছে বিশেষায়িত কিছু সোশ্যাল সাইট।
ইউটিউব, টিকটক, হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক, এক্স ও ইনস্টা– সব অ্যাপই এখন দিয়েছে সার্চ সুবিধা। নতুন প্রজন্ম এখন আর শুধু গুগলকেন্দ্রিক সার্চে সীমাবদ্ধ নেই। যথার্থ কিছু খোঁজের প্রয়োজনে জেন জি এখন অ্যাপনির্ভর। সার্চ ইঞ্জিনে দারুণ এক প্রতিযোগিতার আবহ সৃষ্টি করেছে প্রযুক্তি নির্মাতারা। কম যাচ্ছে না কেউ কারও চেয়ে। সার্চ ইঞ্জিনের ভবিষ্যৎ এখন কোন পথে এগোবে?
ইন্টারনেট দুনিয়ার প্রয়োজনীয়তা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ার পেছনে তথ্যের খোঁজ প্রধানতম কারণ। আর হ্যাঁ, সার্চ মানেই যেন গুগল।
নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধিরা ধীরে ধীরে গুগল থেকে সরে গিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া নির্ভর হয়ে পড়ছেন। অর্থাৎ খোঁজ বা অনুসন্ধানে শুধু গুগল করার প্রবণতা থেকে তরুণরা বেরিয়ে আসছেন।
গবেষণাসূত্রে জানা গেছে, সার্চ ইঞ্জিন মানেই গুগল, ধারণাটা বদলাতে চলেছে দ্রুত। কারণটা হলো, ইন্টারনেটে কোনো কিছু সার্চ করার প্রয়োজন হলেই মাথায় যে নামটা সবার আগে হাজির হয়, সেটাই
হলো গুগল।
ল্যাপটপ, স্মার্টফোন বা ডেস্কটপ– সবখানে ডিফল্ট ব্রাউজার মানেই সরবে উপস্থিত গুগল। ডিজিটাল বিশ্লেষকরা বলছেন, অপ্রতিরোধ্য গুগলের জয়রথ কিছুটা হলেও থামিয়ে দিয়েছে বিশেষায়িত কিছু সামাজিক সাইট। নাছোড়বান্দা গুগল হাল ছাড়তে রাজি নয়। সেও মরিয়া হয়ে ডেভেলপ করে চলেছে একের পর এক সুবিধা। তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) দৌরাত্ম্যে গুগল আলাদাভাবে বিশেষ কিছু সুবিধা করতে পারছে না।
সব প্রযুক্তি নির্মাতাই এআই সুবিধা উন্নয়নে উঠেপড়ে গবেষণা করছে।
জেন জির গন্তব্য কী
নতুন প্রজন্মের সংক্ষিপ্ত নামান্তর জেন জি। তারা সবকিছুতেই অগ্রগামী। শুধু তাই নয়, হ্যাংআউট প্লেস থেকে সাশ্রয় দামে বৈচিত্র্যপূর্ণ খাবারের খোঁজ– সবই জেন জি খোঁজ করছে সোশ্যাল সাইটে। ইনস্টাগ্রাম এ ক্ষেত্রে গুগলকে প্রতিযোগিতার মুখোমুখি করেছে। অন্যদিকে কোনোভাবেই পিছিয়ে নেই টিকটক। গবেষণায় জানা গেছে, গুগল ছেড়ে যে কোনো সার্চের প্রয়োজনে এখন ৪৫ শতাংশ জেন জি টিকটক বা ইনস্টাগ্রাম সার্চের দ্বারস্থ হয়ে পড়ছে। নির্দিষ্ট দূরত্বে হোটেল বা রেস্তোরার খোঁজে গুগল করছে না। জেন জি খোঁজ করছে টিকটকে। সারাবিশ্বে তথ্য-উপাত্তের খোঁজে গুগল নয়, সার্চের প্রয়োজনে সোশ্যাল মিডিয়ার ওপরই ভরসা করছে জেন জি। ২০১৬ সালে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী জেন জি ছিল ৪০ শতাংশ। ২০২৩ সালে ওই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫২ শতাংশ। সুযোগটা পূর্ণমাত্রায় কাজে লাগিয়েছে টিকটক।টিকটক চলতি অর্থবর্ষে ১ হাজার ১০০ কোটি ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ডেভেলপ কাজ করছে। জেন জি পছন্দ করে এমন ধরনের পণ্যসেবা নিজস্ব সাইটে প্রমোশনের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে টিকটক। সমীক্ষা বলছে, শুধু জেন জি নয়, নবীন ও প্রবীণরা গুগলের বদলে নিয়মিত সোশ্যাল মিডিয়ায় সার্চের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন।
প্রবণতা কেন এমন
ডিজিটাল ট্রেন্ড বিশ্লেষকরা বলছেন, সবার ধারণায় (কনসেপ্ট) গুগল নাম যেমনটা ভরসার জায়গা ছিল, তা এখন অনেকাংশেই দখলে নিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া। পরিবর্তনটা ঘটেছে প্রত্যাশার চেয়ে দ্রুত। অনেকের অভিমত, গুগলে সার্চ করলে যে ফল দৃশ্যমান হয়, সোশ্যাল মিডিয়ায় তার থেকে ভালো ফল মিলছে। কারণ টিকটক বা ইনস্টাগ্রামে যেহেতু গ্রাহক পোস্ট করেন, তাই সেই তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা অনেকাংশেই বাড়তি গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করছে। অন্তত চলমান জেন জি ‘ট্রেন্ড’ সে ধরনের ইঙ্গিতই প্রকাশ করছে।
চলতি (জেন জি) প্রবণতা বিবেচনা করে কিছুটা পেছনে সরে গেলেও সহজে হাল ছাড়ার পাত্র নয় গুগল। সময়ের প্রয়োজনে বেশ কিছু নতুন ফিচার ডেভেলপ করে গুগল হারানো রাজত্ব ফিরে পেতে এখন দারুণ কার্যকর ও উদগ্রীব। মাল্টি সার্চ ফ্যাসিলিটি তার মধ্যে অন্যতম। যার অর্থ হলো ছবি ও টেক্সট দুটো দিয়েই সার্চ। টেক্সট সার্চ খুবই সাধারণ প্রয়াস। হালসময়ে গুগল এখন বেশি জোর দিচ্ছে ইমেজ সার্চের কলাকৌশলে। ছবি আপলোড করে সার্চ করলে গুগলের এআই ওই ছবির (ইমেজ) সংশ্লিষ্ট তথ্য উপস্থাপন করবে।
সব মিলিয়ে সার্চ ইঞ্জিনের লড়াইটা এখন দারুণ জমজমাট। টানটান প্রতিযোগিতা থেকে ফল যা-ই আসবে, তা কিন্তু ডিজিটাল অনুসন্ধানীদের কাজের গতি আর তথ্য খোঁজার পথ সমৃদ্ধ করে তুলবে।
আপনার মতামত লিখুন :