মোবাইল অপারেটর টেলিটক, গ্রামীণফোন ও রবির পর অপর বেসরকারি টেলিকম প্রতিষ্ঠান বাংলালিংক ডিজিটাল কমিউনিকেশন লিমিটেডের অনুকূলে একীভূত লাইসেন্স হস্তান্তর করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওস্থ বিটিআরসি কার্যালয়ে কমিশনের চেয়ারম্যান প্রকৌ: মো: মহিউদ্দিন আহমেদ এর কাছ থেকে লাইসেন্স গ্রহণ করেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এরিক অস (Erik Aas)।
ইউনিফাইড লাইসেন্সের মেয়াদ ১৫ বছর, যা দিয়ে বাংলালিংক ৫জিসহ সকল প্রকার ওয়্যারলেস মোবাইল সেবা দিতে পারবে। ‘রেগুলেটরি অ্যান্ড লাইসেন্সিং’ নীতিমালার আলোকে অপারেটরগুলোকে ‘সেলুলার মোবাইল সার্ভিসেস অপারেটর লাইসেন্স’ এবং ‘রেডিও কমিউনিকেশন্স অ্যাপারেটাস লাইসেন্স ফর সেলুলার মোবাইল সার্ভিসেস’ এর আওতায় এই একীভূত লাইসেন্স দেওয়া হয়।
লাইসেন্স হাতে পেয়ে বাংলালিংক-এর প্রধান নির্বাহী উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, “এটি সারা দেশে উদ্ভাবনী ডিজিটাল সেবা বিস্তৃতির পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য। এই পদক্ষেপটি বাংলালিংক-এর জন্য গ্রাহকের পরিবর্তিত চাহিদা অনুযায়ী আরো বেশি ডিজিটাল সেবা প্রদানের পথ সহজ করে দিল।”
এ নিয়ে বাংলালিংক থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বাংলালিংক-এর মূল কোম্পানি ভিওন-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কান তেরজিওগ্লু বলেন, “উচ্চ মানসম্মত গ্রাহকসেবার প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে একীভূত লাইসেন্স সুবিধাটি আমাদের জন্য একটি অত্যন্ত সময়োপযোগী প্রাপ্তি। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার যৌথ লক্ষ্যে কাজ করতে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের এই সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণে বাংলালিংকে সহযোগিতা করার জন্য বিটিআরসি-কে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই।”
বিটিআরসি জানিয়েছে, গত ১৩ ফেব্রুয়ারিতে ‘রেগুলেটরি অ্যান্ড লাইসেন্সিং গাইডলাইনস ফর সেলুলার মোবাইল সার্ভিস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক গাইডলাইন অনুমোদন হয়। সেই সূত্রধরে গত সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসির ভবনে তিন অপারেটরকে এ লাইসেন্স হস্তান্তর করা হয়। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক গ্রামীণফোন, রবি আজিয়াটা ও টেলিটককে এ লাইসেন্স দেন।
লাইসেন্স হস্তান্তর অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে স্পেকট্রাম বিভাগের কমিশনার প্রকৌ: শেখ রিয়াজ আহমেদ, অর্থ, হিসাব ও রাজস্ব বিভাগের কমিশনার ড. মুশফিক মান্নান চৌধুরী, লিগ্যাল এন্ড লাইসেন্সিং বিভাগের কমিশনার মো: আমিনুল হক, প্রশাসন বিভাগের মহাপরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন, স্পেকট্রাম বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মাদ মনিরুজ্জামান জুয়েল, ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড অপারেশন্স বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী মুস্তাফিজুর রহমান, লিগ্যাল এন্ড লাইসেন্সিং বিভাগের মহাপরিচালক আশীষ কুমার কুন্ডু, সচিব (বিটিআরসি) মো: নূরুল হাফিজ, পরিচালক (লাইসেন্সিং) সাজেদা পারভীন, পরিচালক (রেডিও কমিউনিকেশন স্ট্যাডি এন্ড রিসার্চ) ড. মোঃ সোহেল রানা, বাংলালিংক এর চিফ কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমানসহ উক্ত প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৬ সালে প্রথমবারের মতো টুজি (2G) লাইসেন্স নামে বাণিজ্যিকভিত্তিতে সেলুলার মোবাইল সেবা সংক্রান্ত লাইসেন্স প্রদান করা হয়, যা ২০১১ সালে ১৫ বছরের জন্য ২০২৬ সাল পর্যন্ত নবায়ন প্রদান করা হয়। ২০১৩ সালে চার মোবাইল অপারেটরকে ২০২৮ সাল মেয়াদ পর্যন্ত 3G লাইসেন্স প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে ২০৩৩ সাল পর্যন্ত চার অপারেটরের অনুকূলে 4G লাইসেন্স প্রদান করা হয়। বর্তমানে উক্ত লাইসেন্সসমূহের আওতায় দেশে সেলুলার মোবাইল সেবা প্রদান করছে অপারেটরগুলো।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ফাইভজি (5G) প্রযুক্তির মাধ্যমে মোবাইল ব্রডব্যান্ড, ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি) এবং অধিক নির্ভরযোগ্য ও নিম্নতর বিলম্বের নেটওয়ার্কে প্রায়োগিক দিক বিবেচনায় নিয়ে বহুমুখী সেবার বাণিজ্যিক বাস্তবায়নের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। বাংলাদেশেও 5G প্রযুক্তির সেবা প্রদানের জন্য ইতোমধ্যে ২.৩ গিগাহার্জ, ২.৬ গিগাহার্জ ও ৩.৫ গিগাহার্জ ব্যান্ড নির্বাচন করা হয়েছে। গত ৩১ মার্চ ২০২২ তারিখে ২.৩ গিগাহার্জ ব্যান্ড হতে ৭০.০০ মেগাহার্জ এবং ২.৬ গিগাহার্জ ব্যান্ড হতে ১২০.০০ মেগাহার্জ তরঙ্গ ৪টি মোবাইল অপারেটরের অনুকূলে নিলামের মাধ্যমে বরাদ্দ প্রদান করা হয়, যা বর্তমানে ৪জি (4G ) সেবা প্রদানে ব্যবহৃত হচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :