যুক্তরাজ্য সরকারের চাপের মুখে আইক্লাউডের এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন সেবা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অ্যাপল। দেশটির সরকার ব্যবহারকারীদের এনক্রিপ্ট করা ক্লাউড ডেটায় প্রবেশাধিকার দেওয়ার জন্য অ্যাপলকে ‘ব্যাকডোর’ তৈরির নির্দেশ দেয়। এর ফলে শুক্রবার থেকে যুক্তরাজ্যের নতুন ব্যবহারকারীদের জন্য আইক্লাউডের ‘অ্যাডভান্সড ডেটা প্রোটেকশন’ (এডিপি) সুবিধা বন্ধ করে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
২০২২ সালের ডিসেম্বরে চালু হওয়া ‘অ্যাডভান্সড ডেটা প্রোটেকশন’ (এডিপি) সুবিধাটি আইক্লাউড ডেটাকে এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশনের মাধ্যমে সুরক্ষা দেয়। এই প্রযুক্তির ফলে ব্যবহারকারীরা কেবলমাত্র তাঁদের নির্ভরযোগ্য ডিভাইস থেকে ডেটা ডিক্রিপ্ট করতে পারেন।
তবে যুক্তরাজ্য সরকার অ্যাপলকে একটি ব্যাকডোর তৈরির আদেশ দেয়, যা কোনো অ্যাপল ব্যবহারকারীর এনক্রিপ্ট করা ডেটায় প্রবেশের সুযোগ করে দেবে। এর ফলে ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত থাকবে না এবং তৃতীয় পক্ষের কাছে চলে যেতে পারে।
অ্যাপলের এক মুখপাত্র বলেন,
“ক্রমবর্ধমান ডেটা লিক এবং গ্রাহকের গোপনীয়তার প্রতি নানা হুমকির মধ্যে যুক্তরাজ্যের গ্রাহকদের জন্য এডিপি সুবিধার সুরক্ষা দিতে না পারায় আমরা অত্যন্ত হতাশ। ক্লাউড স্টোরেজের নিরাপত্তা বাড়াতে এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশনের গুরুত্ব এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি।”
তিনি আরও বলেন,
“ব্যক্তিগত ডেটার সর্বোচ্চ সুরক্ষা নিশ্চিত করতে অ্যাপল প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং আশা করি ভবিষ্যতে যুক্তরাজ্যে এডিপি সেবা পুনরায় চালু করতে পারব।”
সরকারি অনুরোধ ও ভবিষ্যৎ নির্দেশনা
অ্যাপলের ‘গভর্নমেন্ট ইনফরমেশন রিকোয়েস্টস’ পেজে উল্লেখ রয়েছে,
- অ্যাপল কখনোই কোনো পণ্য বা সেবায় ব্যাকডোর বা মাস্টার কি তৈরি করেনি।
- কোনো সরকারকে সরাসরি অ্যাপল সার্ভারে প্রবেশের অনুমতি দেয়নি এবং ভবিষ্যতেও দেবে না।
তবে বর্তমান এডিপি ব্যবহারকারীদের জন্য সেবাটি এখনই বন্ধ হচ্ছে না। তবে আইক্লাউড অ্যাকাউন্ট চালু রাখতে হলে ভবিষ্যতে তাদের এডিপি সুবিধা বন্ধ করতে হবে। অ্যাপল শিগগিরই ব্যবহারকারীদের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে।
অ্যাপলের আইমেসেজ, ফেসটাইম, স্বাস্থ্য ও আইক্লাউড কিচেইন ডেটা যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বজুড়ে এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশনের সুরক্ষায় থাকবে। তবে ক্লাউড স্টোরেজের অন্যান্য অংশ ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।
বিশ্বব্যাপী এডিপি সুবিধার অবস্থা
অ্যাপল জানিয়েছে,
- যুক্তরাজ্য ছাড়া বিশ্বের অন্যান্য গ্রাহকেরা এডিপি সুবিধা চালু রাখতে পারবেন।
- তাঁদের এনক্রিপ্ট করা আইক্লাউড ডেটা কেবল নির্ভরযোগ্য ডিভাইসেই ডিক্রিপ্ট করা যাবে।
বিশ্বব্যাপী সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই সিদ্ধান্ত ডিজিটাল গোপনীয়তার জন্য একটি বড় ধাক্কা। ব্রিটিশ সরকারের এই পদক্ষেপ ভবিষ্যতে অন্যান্য দেশগুলোর জন্যও একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে, যা ব্যবহারকারীদের ডেটা সুরক্ষার ক্ষেত্রে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।
বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, ব্যাকডোর তৈরি হলে এটি শুধু সরকারের জন্যই নয়, হ্যাকারদের হাতেও চলে যেতে পারে। ফলে ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য চরম ঝুঁকিতে পড়বে।
অ্যাপলের এই সিদ্ধান্ত প্রযুক্তি বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল গোপনীয়তার প্রশ্নে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত রাখার বিষয়ে কতটা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ— তা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :