বাংলাদেশ সোমবার, ১২ মে, ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২

বাফুফের বিশেষ কমিটির সভায় বিদ্রোহী নারী ফুটবলারদের শুনানি

দৈনিক প্রথম সংবাদ ডেস্ক

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৫, ০৯:১৬ এএম

বাফুফের বিশেষ কমিটির সভায় বিদ্রোহী নারী ফুটবলারদের শুনানি

পরশু রাতে বাফুফের বিশেষ কমিটির প্রথম সভাতেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, বিদ্রোহী নারী ফুটবলারদের ডাকা হবে কমিটির সামনে। ১৮ জন বিদ্রোহী খেলোয়াড়কে আলাদাভাবে তাৎক্ষণিক চিঠি পাঠানো হয়। গতকাল বিকেল থেকে মতিঝিল বাফুফে ভবনে সাংবাদিকদের ভিড় জমে যায়। সাবিনা খাতুন ও তাঁর সহযোদ্ধারা বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছিলেন, পিটার বাটলার কোচ থাকলে তাঁরা জাতীয় দলে আর খেলবেন না এবং গণ–অবসরে যাবেন।

গতকাল সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত বাফুফে ভবনে বিশেষ কমিটি সাতজন বিদ্রোহী খেলোয়াড়ের কথা শুনেছে। প্রথম ধাপে সাগরিকা, সাথি বিশ্বাসের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। এরপর মাতসুসিমা সুমাইয়া, শিউলি আজিম, মনিকা চাকমা, সানজিদা আক্তার ও অধিনায়ক সাবিনা খাতুনের বক্তব্য শোনা হয়। প্রতিজন খেলোয়াড়ের সঙ্গে ১৫-২০ মিনিট ধরে আলোচনা করা হয়েছে।

সবার শেষে রাত ৯টা ২০ মিনিটে বাফুফে ভবনের দ্বিতীয় তলার সম্মেলনকক্ষে যান অধিনায়ক সাবিনা খাতুন। তিনি তুলনামূলক কম সময় সেখানে ছিলেন। সংবাদমাধ্যমের অপেক্ষা সত্ত্বেও কোনো মন্তব্য না করে তিনি ভবনের চারতলায় চলে যান।

বাফুফের এই শুনানির মাধ্যমে সংকট সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। এখন দেখার বিষয়, জাতীয় নারী ফুটবলে এই সংকট কীভাবে নিরসন হয় এবং কর্তৃপক্ষ কী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
জানা গেছে, মেয়েরা চিঠিতে যা লিখেছেন, সেটির পাশাপাশি সাফ পর্যন্ত বাটলারের ছয় মাসের দায়িত্ব পালনে কী কী সমস্যায় তাঁরা পড়েছেন, সেসব তুলে ধরেন। কোচের একাদশ নির্বাচন, সিনিয়রদের প্রতি যত্নশীল না হওয়া, বিভিন্ন সময়ে খারাপ আচরণ করা ইত্যাদি বিষয়ও এসেছে। কমিটি আলাদাভাবে সবার কাছে জানতে চেয়েছে, ‘আপনার সঙ্গে কী করেছে কোচ? ভয় পাওয়ার কিছু নেই, নিশ্চিন্তে সব বলুন।’ মেয়েরা তাঁদের সব ক্ষোভের কথাই বলেছেন।

সাত সদস্যের কমিটিতে বাফুফের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত নন, এমন তিনজন সদস্যই মূলত প্রশ্ন করেছেন মেয়েদের। বাফুফের নির্বাহী কমিটিতে থাকা চারজন শুনেছেন বেশি। তাঁরা যেহেতু মেয়েদের সঙ্গে নানাভাবে পরিচিত, তাই মেয়েদের প্রশ্ন করার ক্ষেত্রে নিজেদের একটু গুটিয়ে রেখেছেন, যাতে স্বার্থের সংঘাত না হয়। যেহেতু এই মেয়েদের অনেকেই নির্বাহী কমিটির অনেকের সঙ্গেই নানাভাবে সম্পৃক্ত।

মেয়েদের সঙ্গে কথা বলা শেষে বিশেষ কমিটির প্রধান বাফুফের সিনিয়র সহসভাপতি ইমরুল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, ১৮ জনের মধ্যে বাকি ১১ জনের কথা কমিটি আজ শুনবে। প্রথম দিনে মেয়েরা কী বলেছেন, তা নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি ইমরুল। কোচ ও খেলোয়াড়দের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে, বিষয়টি টেকনিক্যাল।
বাফুফের এই বিশেষ কমিটিতে কয়েকজন থাকলে, সেটি আরও যৌক্তিক ও শক্তিশালী হতো কি না, এ নিয়ে প্রশ্ন হলে ইমরুল বলেন, ‘বাফুফের জরুরি কমিটির সভায় সভাপতি এই কমিটি গঠন করেছেন। আমাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক তারকা ফুটবলার ও লাইসেন্সধারী কোচ (ছাইদ হাসান কানন)।’

অক্টোবরে সাফের শিরোপা ধরে রেখে নেপাল থেকে ফিরেছিলেন মেয়েরা। কিন্তু এরপর মেয়েদের সঙ্গে এখনো বাফুফে চুক্তি নবায়ন করেনি, বাফুফে ঘোষিত দেড় কোটি টাকা বোনাসও দেয়নি। এসব নিয়ে প্রশ্ন করলে ইমরুল বলেন, ‘মেয়েরা যে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে, তার মধ্যে এগুলো নেই। মেয়েদের লিখিত অভিযোগের ওপরই আমরা কাজ করছি।’

সাফ জেতার তিন মাসের মধ্যে কেন মেয়েদের এমন চরম অবস্থানে যেতে হলো? এই প্রশ্নে ইমরুলের উত্তর, ‘পেছনের কারণটা খুঁজে বের করতেই কাজ করছে কমিটি।’

এটা জানাই ছিল যে মেয়েদের কথা শুনেই কোনো রায় দিয়ে দেবে না কমিটি। কোচ পিটার বাটলারের সঙ্গেও তারা কথা বলবে। কথা বলবে নারী কমিটি ও কোচিং স্টাফদের সঙ্গেও। সবার সঙ্গে কথা বলেই আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে একটা প্রতিবেদন দেওয়ার চেষ্টা করবে কমিটি।

 

Link copied!

সর্বশেষ :