বিপিএলের ১১তম আসরের ফাইনাল ম্যাচটি ছিল একদম শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত উত্তেজনায় মোড়ানো। মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয়েছিল ফরচুন বরিশাল ও চিটাগং কিংস। ফাইনালের শুরু থেকেই ম্যাচের রাশ বারবার বদলেছে। কখনো বরিশাল এগিয়ে গেছে, আবার কখনো ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে চট্টগ্রাম। তবে শেষ ওভারের নাটকীয়তায় বরিশাল ৩ উইকেটের ব্যবধানে জয় ছিনিয়ে নেয় এবং টানা দ্বিতীয়বার বিপিএল শিরোপা নিজেদের করে নেয়।
প্রথম ইনিংসে চিটাগংয়ের ব্যাটিং দাপট, ১৯৫ রানের বিশাল লক্ষ্য
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে চিটাগং কিংসের ব্যাটসম্যানরা দেখিয়েছেন দুর্দান্ত পারফরম্যান্স। শুরু থেকেই তারা বরিশালের বোলারদের ওপর চড়াও হন। টপ অর্ডারের ব্যাটসম্যানরা দায়িত্বশীল ব্যাটিং করে দলকে বড় সংগ্রহের দিকে নিয়ে যান। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ২০ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ১৯৪ রান সংগ্রহ করে চট্টগ্রাম, যা ফাইনালের মতো হাই-প্রেশার ম্যাচে একটি বড় লক্ষ্য।
তামিম-হৃদয়ের দুর্দান্ত ওপেনিং, পাওয়ারপ্লেতে দাপট
জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে বরিশালের হয়ে ইনিংস শুরু করেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল ও তাওহীদ হৃদয়। পাওয়ার প্লেতেই তারা ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নিয়ে নেন। তামিম শুরু থেকেই চট্টগ্রামের বোলারদের ওপর চড়াও হন, অন্যদিকে হৃদয় ছিলেন কিছুটা ধীরস্থির।
এই জুটির দারুণ পারফরম্যান্সে ৫.৪ ওভারে তারা ৫০ রানের জুটি গড়েন, যা বিপিএলের ফাইনালে রান তাড়ায় উদ্বোধনী জুটিতে প্রথমবারের মতো পঞ্চাশ পেরোনো রেকর্ড। পাওয়ার প্লেতে বরিশালের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৫৭ রান, কোনো উইকেট না হারিয়ে।
তামিমের ঝড়ো ব্যাটিং, তবে বেশি দূর যেতে পারলেন না
প্রথম থেকেই আত্মবিশ্বাসী ব্যাটিং করে মাত্র ২৪ বলে অর্ধশতক তুলে নেন তামিম ইকবাল। কিন্তু অর্ধশতকের পরপরই ছন্দ হারিয়ে ফেলেন। ২৯ বলে ৫৪ রান করে শরিফুল ইসলামের বলে ক্যাচ তুলে দেন তিনি। তার বিদায়ে ৭৬ রানে ভাঙে বরিশালের ওপেনিং জুটি।
হৃদয়ের বিদায়, ধাক্কা খায় বরিশাল
তামিমের আউটের পর বরিশালের ব্যাটিং লাইনআপ কিছুটা চাপে পড়ে। পরের ওভারেই ডেভিড মালান মাত্র ১ রান করে শরিফুল ইসলামের বলে এলবিডব্লিউ হন। এরপর হৃদয় ও কাইল মেয়ার্স মিলে ইনিংস গড়ার চেষ্টা করলেও, নাঈম ইসলামের বলে হৃদয় ২৮ বলে ৩২ রান করে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন। ১৩তম ওভারে ১৩০ রানের মধ্যে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বরিশাল।
মেয়ার্স-রিয়াদের দায়িত্বশীল ব্যাটিং, ম্যাচে ফেরে বরিশাল
মুশফিকুর রহিম দ্রুত ১৬ রান করে ফিরে গেলে বরিশালের বিপদ আরও বাড়ে। তখনই ক্রিজে আসেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। কাইল মেয়ার্স একপ্রান্ত আগলে রেখে বরিশালকে জয়ের পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন। তারা দুজন একসঙ্গে দুর্দান্ত ব্যাটিং করে ম্যাচকে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত নিয়ে যান।
শেষ ওভারে বরিশালের নাটকীয় জয়
বরিশাল যখন জয়ের খুব কাছে, তখনই ম্যাচ জমে ওঠে। শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ৮ রান, বোলিংয়ে ছিলেন হোসাইন তালাত। উইকেটে ছিলেন রিশাদ হোসেন ও এবাদত হোসেন। প্রথম বলেই লং অনের ওপর দিয়ে বিশাল ছক্কা হাঁকান রিশাদ, যা বরিশালের ডাগআউটে উল্লাস ছড়িয়ে দেয়। পরের বলে একটি সিঙ্গেল নেওয়ার পর তালাত ওয়াইড বল করলে ম্যাচ আরও সহজ হয়ে যায়। এরপর তিন বল বাকি থাকতেই বরিশাল লক্ষ্যে পৌঁছে যায়, ৭ উইকেট হারিয়ে জয় নিশ্চিত করে।
শেষ কথা
শ্বাসরুদ্ধকর এই ফাইনালে বরিশাল দেখিয়েছে দারুণ লড়াই। প্রথম ইনিংসে চট্টগ্রামের ব্যাটিং দাপটে বড় লক্ষ্য পেলেও, তামিমের ঝড়ো ইনিংস, মেয়ার্স-রিয়াদের দৃঢ় পার্টনারশিপ এবং শেষ ওভারের রিশাদের সাহসী ব্যাটিং বরিশালকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেয়। বিপিএলের ইতিহাসে এটি এক অবিস্মরণীয় ফাইনাল হয়ে থাকবে, যেখানে বরিশাল দেখিয়েছে তাদের চ্যাম্পিয়নসুলভ মানসিকতা।
আপনার মতামত লিখুন :