বাংলাদেশ সোমবার, ১৭ মার্চ, ২০২৫, ৩ চৈত্র ১৪৩১

বিপিএলে আবারও চ্যাম্পিয়ন ফরচুন বরিশাল

দৈনিক প্রথম সংবাদ ডেস্ক

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২৫, ১০:১৯ পিএম

বিপিএলে আবারও চ্যাম্পিয়ন ফরচুন বরিশাল

চ্যাম্পিয়ন নিশ্চিত হতেই শূন্যে লাফ দিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন তানভীর ইসলাম। ছবি : মীর ফরিদ, মিরপুর থেকে

বিপিএল (বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ) ২০২৫-এর ফাইনালে, ফরচুন বরিশাল চিটাগাং কিংসকে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা জয় করেছে। ফাইনাল ম্যাচটি ছিল একেবারে নাটকীয়তায় ভরপুর, যেখানে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত কিছুই বলা যাচ্ছিল না। শেষ ৬ বলে ৮ রান প্রয়োজন ছিল, এমন অবস্থায় সবার নজর ছিল কেবল দুই দলের পারফরম্যান্সের দিকে। শেষ ওভারে বোলিং করতে আসেন চিটাগাং কিংসের হুসাইন তালাত। একদিকে ম্যাচের উত্তেজনা ছিল তুঙ্গে, অন্যদিকে বরিশালকে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য প্রয়োজন ছিল মাত্র ৮ রান।

তবে, রিশাদ প্রথম বলেই ছক্কা হাঁকিয়ে সেই চাপ মেটাতে সক্ষম হন। এরপর ফিরতি বল থেকে এক রান নিয়ে পরিস্থিতি সমতায় নিয়ে আসেন। চতুর্থ বলটি ওয়াইড হলে ৩ বল হাতে রেখেই বরিশাল চ্যাম্পিয়ন হয়ে যায়। এই ম্যাচের মাধ্যমে তারা শিরোপা ধরে রাখার সফলতা অর্জন করে। তামিম ইকবালের নেতৃত্বে বরিশাল সাফল্য অর্জন করে, ৩ উইকেটে চিটাগাং কিংসকে হারিয়ে তারা দ্বিতীয়বারের মতো বিপিএল চ্যাম্পিয়ন হয়।

ফাইনালে বরিশালের সামনে ছিল ১৯৫ রানের বিশাল লক্ষ্য। এটি সত্যিই একটা কঠিন লক্ষ্য ছিল, কিন্তু তামিম ইকবাল এবং তাওহিদ হৃদয়ের ব্যাটিং শক্তি সেই লক্ষ্যকে সহজ করে তোলে। তাদের উদ্বোধনী জুটি ৭৬ রানের দারুণ একটি পার্টনারশিপ গড়েছিল। তামিম ইকবাল দলের জন্য দায়িত্ব নিয়ে মাঠে নামেন এবং একটি দারুণ ইনিংস খেলে ৫৪ রান করেন, যাতে ৯টি চার এবং ১টি ছক্কা ছিল। তার স্ট্রাইকরেট ছিল ১৮৬.২০, যা তার আত্মবিশ্বাসী এবং আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের প্রমাণ। তার এই ইনিংসটি ছিল টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা ইনিংস। তবে, চিটাগাং কিংস তাদের শক্তি দেখিয়ে তামিমের আউট হওয়ার পর ম্যাচে ফিরতে শুরু করে।

শরিফুল ইসলাম নবমতম ওভারের চতুর্থ বলেই ডেভিড মালানকে আউট করে চিটাগাংকে ম্যাচে ফেরান। এরপর, আরও একটি বড় ধাক্কা খায় বরিশাল যখন হৃদয় আউট হয়ে যান। এর পর, নাঈম ইসলাম মুশফিকুর রহিমকেও আউট করে দেন। এই সময়ে চিটাগাং কিংসের খেলোয়াড়রা বেশ উজ্জীবিত হয়ে ওঠে, কারণ তারা বিশ্বাস করতে শুরু করেছিল যে তারা শিরোপার কাছে পৌঁছে যেতে পারে।

তবে, শেষ মুহূর্তে কাইল মায়ার্স ৪৬ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেললেও চিটাগাং কিংসের জন্য শিরোপা জয় সম্ভব হয়নি। মায়ার্সের ব্যাটিং, যা একপাশ থেকে স্রেফ রান সংগ্রহ করে যাচ্ছিল, তাও শেষ পর্যন্ত তাদের জয়ের স্বপ্ন বাস্তবায়িত করতে পারেনি। যখন দলের জন্য ২৩ রান প্রয়োজন ছিল, তখন শরিফুল ইসলাম কাইল মায়ার্সকে আউট করেন, যা চিটাগাং কিংসের আশা শেষ করে দেয়। এক বল পরেই মাহমুদ উল্লাহ রিয়াদকে আউট করে শরিফুল তার দলের জয় আরো নিশ্চিত করে দেন।

অবশেষে, ফরচুন বরিশালকে চ্যাম্পিয়ন করে শেষ ১২ বলে ২০ রানের সমীকরণ মিলিয়ে দেন রিশাদ। ৬ বলে ১৮ রান করে তিনি দলকে চ্যাম্পিয়ন বানিয়ে দেন। এই অনবদ্য পারফরম্যান্সের কারণে রিশাদকে ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। তার ব্যাটিং ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি নিশ্চিত করেছে যে বরিশাল চ্যাম্পিয়ন হবে। চিটাগাং কিংস, যাদের প্রথম শিরোপা জয় ১২ বছর পরও সম্ভব হয়নি, তারা হতাশা নিয়ে মাঠ ছেড়ে চলে যায়।

এই বিপিএল ফাইনাল ম্যাচটি ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে এক স্মরণীয় মুহূর্ত হিসেবে চিহ্নিত হবে। দু’টি দলের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা, উত্তেজনা এবং নাটকীয়তা ছিল পুরো ম্যাচে। তামিম ইকবালের নেতৃত্বে ফরচুন বরিশাল একটি দুর্দান্ত সংগ্রাম করে শিরোপা ধরে রেখেছে, এবং চিটাগাং কিংস, যদিও তারা শিরোপার খুব কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল, তবে শেষ পর্যন্ত তাদের স্বপ্ন অধরা রয়ে গেছে।

এই বিপিএল ফাইনালটি শুধু এক টুর্নামেন্টের জয়-পরাজয়ের চিত্রই নয়, বরং এটি দলের সংগ্রাম, একে অপরের সঙ্গে সহযোগিতা এবং শেষ পর্যন্ত জয়ী হওয়ার জন্য আত্মবিশ্বাসের একটি শক্তিশালী উদাহরণ হয়ে থাকবে। চ্যাম্পিয়ন হওয়া ফরচুন বরিশাল তাদের ঐতিহ্য ধরে রেখে এক অনন্য মর্যাদা অর্জন করেছে, এবং তাদের দলীয় পারফরম্যান্স ক্রিকেট ইতিহাসে বিশেষ স্থান পাবে।

Link copied!

সর্বশেষ :