শীতকাল বাংলাদেশের জন্য এক বিশেষ ঋতু। শিশির জমা বৃক্ষরাজি, হিমেল হাওয়া আর ঠান্ডার স্পর্শে এদেশের দিন ও রাতগুলো হয়ে ওঠে মনোমুগ্ধকর। আর এই সুন্দর পরিবেশে দেশের সকল পাড়া-মহল্লার ছোট- বড় মাঠ, আঙিনা কিংবা ফাঁকা জায়গাগুলোতে হিড়িক পরে যায় ব্যাডমিন্টন খেলার। সারা শীতকাল জুড়ে ব্যাডমিন্টন হয়ে ওঠে বিনোদনের এক অসাধারণ মাধ্যম। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে চারদিক আলোকিত হয়ে ওঠে ফ্লাডলাইটের আলোয়। শীতের ঠান্ডা আমেজ ভুলে র্যাকেট হাতে একত্র হয়ে শাটলের ঠাস ঠাস শব্দে মেতে ওঠে সবাই।
শীতের রাতে ব্যাডমিন্টন খেলা কেবল শরীরচর্চা নয়, এ যেন ঠান্ডার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের এক চমৎকার উপায়। একবার র্যাকেট হাতে তুলে নিলে শীতের জড়তা আর অনুভূত হয় না। ছোট-বড়, তরুণ-তরুণী কিংবা বয়স্করা সবাই এই খেলায় অংশ নেয়।এ যেন আনন্দ ভাগাভাগি করার এবং সামাজিক বন্ধন দৃঢ় করার এক অনন্য সুযোগ। যারা খেলায় অংশ নেয় না তারাও দর্শক হয়ে খেলা দেখার আনন্দ উপভোগ করে।
ব্যাডমিন্টনের ইতিহাস
ব্যাডমিন্টনের ইতিহাসও বেশ পুরোনো এবং সমৃদ্ধ। এ খেলার উৎপত্তি ১৮৭৩ সালে ইংল্যান্ডের গ্লুচেস্টারশায়ারের একটি ছোট গ্রাম "ব্যাডমিন্টন" থেকে। এই গ্রামের নাম অনুসারেই খেলার নাম রাখা হয় "ব্যাডমিন্টন"। ধারণা করা হয় ভারতে ব্রিটিশ সেনারা একটি প্রাচীন খেলা "পুনাই" থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এটি ইংল্যান্ডে নিয়ে আসেন। প্রথমদিকে এটি এক ধরনের সামাজিক খেলা হিসেবে জনপ্রিয় ছিল।
পরবর্তীতে ১৮৭৭ সালে ব্যাডমিন্টনের প্রথম নিয়ম তৈরি করা হয় এবং একই বছর ইংল্যান্ডের বাথ শহরে প্রথম ব্যাডমিন্টন ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর ১৯৩৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক ব্যাডমিন্টন ফেডারেশন, যা বর্তমানে ব্যাডমিন্টন ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন (BWF) নামে পরিচিত। আধুনিক ব্যাডমিন্টনের একটি বড় মাইলফলক হলো ১৯৯২ সালে বার্সেলোনা অলিম্পিকে খেলার অন্তর্ভুক্তি। পাঁচটি ইভেন্ট নিয়ে শুরু হওয়া এই খেলা আজ বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় র্যাকেট খেলা।
পাড়া-মহল্লায় ব্যাডমিন্টনের আয়োজন
শীতের রাতে ব্যাডমিন্টন খেলার আয়োজন খুব সাদামাটা হলেও এর আনন্দের মাত্রা অসীম। সবাই মিলে চাঁদা তুলে নেট কেনা, ফাঁকা জায়গা নির্বাচন করে নেট টাঙিয়ে খেলার উপযোগী কোর্ট তৈরি করা যেন এক হৈ হৈ কান্ড। এরপর সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে র্যাকেট, শাটলকক হাতে নিয়ে একের পর এক দল মেতে ওঠে চিরাচরিত এই ব্যাডমিন্টন খেলায়। ফ্লাডলাইটের আলোর নিচে শাটলকক উড়ে বেড়ায় আর র্যাকেটের বাড়ি খেয়ে যেন নতুন প্রাণ পায় পুরো পরিবেশ।
ব্যাডমিন্টন আয়োজনে অসুবিধা
বর্তমানে এই খেলার আয়োজন করতে কিছু অসুবিধাও রয়েছে। অনেক জায়গায় পর্যাপ্ত আলোর অভাব দেখা দেয়। খেলার সরঞ্জামের অতিরিক্ত দামও কখনো কখনো খেলোয়াড়দের জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। এছাড়াও শহর অঞ্চলে খেলার জায়গার সংকট আরেকটি বড় প্রতিবন্ধকতা। এছাড়াও আলোর ব্যবস্থা করতে গিয়ে অনেক সময় অসদুপায় অবলম্বন করে অনেকেই, যেটা বেশ ঝুঁকিপূর্ন। তবে এর পরেও শীতকালে ব্যাডমিন্টন খেলার জনপ্রিয়তা থেমে থাকে না। বড় বড় শহরের গলি গলি রাস্তায় নেট টাঙ্গিয়েও খেলতে দেখা যায় র্যাকেট প্রিয় মানুষদের।
শীতের রাতের এই খেলা শরীরকে যেমন উষ্ণ রাখে তেমনি মনেও প্রশান্তি আনে। দিনের ক্লান্তি ভুলে সবাই রাতের ব্যাডমিন্টন কোর্টে একত্র হয়। এ যেন এক অনন্য সামাজিক উৎসব। তাই শীতকাল মানেই শুধু লেপের উষ্ণতা নয়, র্যাকেট হাতে ব্যাডমিন্টনের উচ্ছ্বাসও।
আপনার মতামত লিখুন :