বাংলাদেশ রবিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৫, ১৪ বৈশাখ ১৪৩২

২৫ বছর ধরে নদীপাড়ের মানুষদের স্বাস্থ্যসেবায় ভাসমান হাসপাতাল

দৈনিক প্রথম সংবাদ ডেস্ক

প্রকাশিত: মার্চ ২২, ২০২৪, ০৯:৫২ এএম

২৫ বছর ধরে নদীপাড়ের মানুষদের স্বাস্থ্যসেবায় ভাসমান হাসপাতাল

নদ-নদী তীরবর্তী মানুষের দৌড়গোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার লক্ষ্যে লঞ্চের আদলেই নির্মাণ করা হয়েছে ভাসমান হাসপাতাল। মাত্র ৫০ টাকার বিনিময়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা নিতে পারছেন অসহায় মানুষরা। ২৫ বছর ধরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে হাজার হাজার মানুষকে সেবা প্রদান করা জীবনতরী লঞ্চটি দেড় মাস ধরে নোঙ্গর করা মাদারীপুরের আড়িয়াল খাঁ নদের ওপর। হতদরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়াতে পেরে খুশি সংস্থার কর্মকর্তারাও।

ভাসমান হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, এটি একটি লঞ্চ যেন যাত্রীদের জন্য অপেক্ষা করছে, কিন্তু না। এটি একটি ভাসমান হাসপাতাল। যেখানে নূন্যতম টাকার বিনিময়ে স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হয় নদনদী তীরবর্তী এলাকার মানুষকে। মাদারীপুর সদর উপজেলার পুরাতন কাজীরটেক ফেরিঘাট এলাকায় গত দেড় মাস ধরে ইমপ্যাক্ট জীবনতরী ভাসমান হাসপাতালটি আড়িয়াল খাঁ নদের ওপরে নোঙর করে রাখা হয়েছে। এই হাসপাতালে প্রতিদিনই স্বাস্থ্যসেবা নিতে ভিড় করছেন শত শত মানুষ। মাত্র ৫০ টাকার বিনিময়ে স্বাস্থ্যসেবা নিতে পারছেন রোগীরা। স্বল্প টাকায় হাতের কাছে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা পেয়ে খুশি তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মানবতার সেবায় নদনদীতে ভাসমান অবস্থায় নাক-কান গলা ও চোখের অপারশেন, জন্মগত ঠোঁটকাটা, হাত-পা পাকা ঠিক করা, ভাঙা অঙ্গের চিকিৎসা ও চোখের অপারেশনসহ জটিল রোগের চিকিৎসায় বছরের পর বছর কাজ করে যাচ্ছেন এ চিকিৎসকরা।ইমপ্যাক্ট ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ নামের একটি বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে ২৫ বছর ধরে দেয়া হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা। সব মানুষকে স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আনাই মূল লক্ষ্য বলে জানান কর্মকর্তারা। তিনজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও ৪ জন নার্সসহ মোট ৩২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী ২৪ ঘণ্টাই হাসপাতালটি কর্মরত রয়েছে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেলে ৫টা পর্যন্ত রোগী দেখছেন চিকিৎসকরা। গত জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়ায় এই কার্যক্রম চলবে আগামী জুন মাসব্যাপী।

ট্রাকস্ট্যান্ড এলাকার থেকে ভাসমান হাসপাতালে সেবা নিতে আসা নূপুর বেগম বলেন, ‘অন্য জায়গায় ডাক্তার দেখাতে ৫০০-১০০০ টাকা ফি লাগে। আর ভাসমান হাসপাতালে মাত্র ৫০ টাকার বিনিময়ে স্বাস্থ্যসেবা নিতে পারছি, এটা তো গরীবের জন্য সুসংবাদ।’

জাফরাবাদ এলাকা থেকে আসা আরেক রোগী সুমন হাওলাদার বলেন, ‘৫০ টাকা দিয়ে চোখের ডাক্তার দেখানোর পর ২০০ টাকার বিনিময়ে পরীক্ষা করিয়েছে। এখন চোখের সমস্যার সমাধান পেয়েছি। আমাদের জন্য এটি একটি বড় পাওয়া।’

ভাসমান হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগী ৭০ বছরের বৃদ্ধা হামিদা বেগম বলেন, ‘এখানে বেশি টাকা লাগে না। সবার মুখে মুখে খবর ছড়িয়ে পড়েছে। তাই ছুটে এসেছি। এখানকার চিকিৎসকরাও ভাল। রোগীর সমস্যা শুনে তারা ওষুধ লিখে দিয়েছে।’
ইমপ্যাক্ট জীবনতরী ভাসমান হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মোফাজ্জেল হোসাইন বলেন, ‘এ হাসপাতালে তিনটি বিভাগে চিকিৎসা দেয়া হয়। আমি দেখি নাক, কান ও গলা। অন্য আরও দুইজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছে। এখানে মাত্র ৫০ টাকা ফি’র বিনিময়ে রোগী দেখা হয়। জটিল রোগী হলে নির্দিষ্ট সময়ে অপারেশনের জন্য বলা হয়। সাশ্রয়ী টাকায় ভাসমান হাসপাতালে অপারেশনেরও ব্যবস্থা রয়েছে।’

আরেক চিকিৎসক ডা. রিয়াদুল ইসলাম বলেন, ‘জন্মগত হাত-পা বাঁকা রোগীর চিকিৎসা এখানে করানো হয়। এখানে অল্প খরচে অপারশেন হয়। মূল উদ্দেশ্য হলো, নদ-নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষ যাতে স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আসতে পারে, সেজন্য এ চিকিৎসা ব্যবস্থা।’

ডা. সুজল আলী বলেন, ‘চোখের সমস্যা নিয়ে এখানে আসা রোগীরা সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছে। ৫০ টাকার টিকিট কেটে প্রাথমিক চিকিৎসা নিতে পারেন রোগীরা। পরে প্রয়োজন বোধে কম টাকায় চোখের ফ্যাকো অপারেশনও করানো হয়।’

ইমপ্যাক্ট জীবনতরী ভাসমান হাসপাতালের প্রশাসক মোহাম্মদ রুহুল আমিন বলেন, ‘নদ-নদীতে ভাসমান অবস্থায় প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ৩২ জন মানুষ নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকি। মানবতার সেবা দেয়াই আমাদের মূল লক্ষ্য। নদনদী তীরবর্তী এলাকার মানুষ বেশির ভাগই তুলনামূলক দরিদ্র হয়। তাদের পক্ষে বেশি টাকা খরচ করে শহরে গিয়ে আধুনিক চিকিৎসা নেয়া কঠিন, তাই তাদের সুবিধার্থে হাতের কাছেই আমরা ২৫ বছর ধরে চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছি। এক এক এলাকায় দুই থেকে ৬ মাস আমরা অবস্থান করে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করে থাকি।’

Link copied!

সর্বশেষ :