কালেমাখচিত কালো পতাকা কিসের ইঙ্গিত বহন করে!

কালেমাখচিত কালো পতাকা মূলত খোরাসানের কালো পতাকাবাহী দল সম্পর্কে ধারনা প্রদান করে। এই দল সম্পর্কে  জানা এবং এর গুরুত্ব অনুধাবন করা প্রতিটি সচেতন মুসলমানের জন্য অপরিহার্য। ইসলামিক ঐতিহ্য ও হাদিসে এই দলের আগমন সম্পর্কে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভবিষ্যদ্বাণী। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্পষ্টভাবে মুসলমানদেরকে নির্দেশনা দিয়েছেবহনন যখন খোরাসানের কালো পতাকাবাহী দলের উত্থান হবে তখন তাদের সাথে যোগদান করা হবে মুসলমানদের জন্য এক প্রকারের ওয়াজিব। এমনকি যদি বরফের উপর হামাগুড়ি দিয়েও যেতে হয় তবুও এই নির্দেশ পালন করতে হবে।

খোরাসান ও কালো পতাকার প্রতীক

খোরাসান একটি ঐতিহাসিক ও ভৌগোলিক অঞ্চল। যা বর্তমান ইরান, আফগানিস্তান, এবং তুর্কমেনিস্তানের কিছু অংশকে অন্তর্ভুক্ত করে। ইসলামিক ইতিহাস ও ভবিষ্যদ্বাণীতে এই অঞ্চলকে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এখান থেকেই ইসলামি পুনরুত্থান ও খিলাফতের একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলন শুরু হবে বলে ধারণা করা হয়। কালো পতাকা এমন একটি প্রতীক যা ইসলামী খিলাফত প্রতিষ্ঠা এবং বিশ্বব্যাপী ন্যায়বিচার ও ইসলামী শাসনের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

কালো পতাকাবাহী দলের গুরুত্ব

একাধিক হাদিসে খোরাসানের কালো পতাকাবাহী দলকে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাহাবীগণ থেকে বর্ণিত হাদিসে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এই দলটি ইসলামের পূর্ণ প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করবে এবং তাদের মধ্যে আল্লাহর খলিফা ইমাম মাহদি থাকবেন। এর মধ্যে মুসলিম উম্মাহর জন্য রয়েছে একটি সুস্পষ্ট নির্দেশনা। এই দল প্রকাশ পাওয়া মাত্রই এই দলের সাথে যুক্ত হওয়া এবং তাদের সাথে শামিল হওয়া মুসলমানদের ধর্মীয় দায়িত্ব।

হযরত ছওবান (রাঃ) এর বর্ণনা

হযরত ছওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ‍‍`যখন তোমরা দেখবে কালো পতাকাগুলো খোরাসানের দিক থেকে এসেছে তখন তাদের সাথে যুক্ত হয়ে যেও। কেননা তাদেরই মাঝে আল্লাহর খলিফা মাহদি থাকবেন‍‍`।

এই হাদিসে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, খলিফা মাহদির আগমন এই দলের মধ্য থেকে হবে এবং তাদের সাথে যোগদান করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে হারিস (রাঃ) এর বর্ণনা

একই ধরনের বর্ণনা এসেছে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে হারিস (রাঃ) থেকে। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ‍‍`পূর্বদিক (খোরাসান) থেকে কিছু লোক বের হয়ে আসবে যারা ইমাম মাহদির খিলাফত প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করবে এবং খিলাফত প্রতিষ্ঠা সহজ করে দিবে‍‍`।

এখানে পূর্বদিক বলতে খোরাসান অঞ্চলকেই বোঝানো হয়েছে এবং এই দলটি ইমাম মাহদির নেতৃত্বে খিলাফত প্রতিষ্ঠার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) এর বর্ণনা

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন যে, একদিন নবী করীম (সা.) আমাদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলছিলেন: ‍‍`ঐ দিক থেকে একটি দল আসবে (হাত দিয়ে তিনি পূর্ব দিকে ইশারা করলেন)। তারা কালো পতাকাবাহী হবে। তারা সত্যের (পূর্ণ ইসলামী শাসনের) দাবী জানাবে, কিন্তু তাদেরকে তা দেওয়া হবে না। দুই বা তিনবার তারা এই দাবী জানাবে, কিন্তু তখনকার শাসকরা তা মেনে নিবে না। শেষ পর্যন্ত তারা ইসলামী শাসন ব্যবস্থার দায়িত্ব আমার পরিবারস্থ একজন লোকের (ইমাম মাহদির) হাতে সোপর্দ করে দিবে। সে জমিনকে ন্যায়বিচার ও নিষ্ঠার মাধ্যমে ভরিয়ে তুলবে, যেমনটি আগে জমিন অন্যায় ও অবিচারে পূর্ণ ছিল‍‍`।

এই হাদিস থেকে স্পষ্ট হয় যে, এই দলটি ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠার দাবিতে দৃঢ়ভাবে অবস্থান করবে এবং শেষ পর্যন্ত তারা ইমাম মাহদির অধীনে এই লক্ষ্য অর্জন করতে সক্ষম হবে। মুসলমানদের উদ্দেশ্যে নবী করীম (সা.) নির্দেশ দিয়েছেন যে, এই সময় যদি কেউ জীবিত থাকে তাকে অবশ্যই তাদের সাথে যোগদান করতে হবে। তাতে যদি বরফের উপর হামাগুড়ি দিয়েও যেতে হয় তাও যাবে।

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) এর বর্ণনা

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: ‍‍` যখন কালো পতাকাগুলো পূর্ব দিক (খোরাসান) থেকে বের হবে তখন কোন বস্তু তাদেরকে প্রতিহত করতে পারবে না। এমনকি এই পতাকা বাইতুল মুকাদ্দাসে উত্তোলিত হবে‍‍`।

এই হাদিসে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে যে, খোরাসানের কালো পতাকাবাহী দলকে প্রতিহত করার মত শক্তি কোনো রাষ্ট্র বা দল রাখবে না এবং যখন বাইতুল মুকাদ্দাসে এই পতাকা উত্তোলিত হবে তখন তাদের খিলাফত প্রতিষ্ঠার চূড়ান্ত লক্ষ্য পূর্ণ হবে।

উপরোল্লিখিত হাদিসগুলো থেকে বোঝা যায় খোরাসানের কালো পতাকাবাহী দল ইসলামের ভবিষ্যৎ ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তাদের সাথে সংযুক্ত হওয়া এবং তাদের সহযোগিতা করা মুসলমানদের জন্য একটি ধার্মিক দায়িত্ব। এই দলের ভূমিকা হবে ইমাম মাহদির অধীনে ইসলামের পূর্ণ শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা এবং পৃথিবীতে ন্যায়বিচার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। তাই সচেতন মুসলমানদের উচিত এই বিষয়টি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা এবং এই দলের সাথে যুক্ত হওয়ার গুরুত্ব উপলব্ধি করা যাতে তারা এই মহৎ কাজে শরীক হতে পারেন।