রমজান মাসে তারাবিহ নামাজ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা এশার নামাজের পর থেকে বিতরের আগে আদায় করা হয়। এটি সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ এবং অত্যন্ত সওয়াবের কাজ।
তারাবিহ নামাজের নিয়ম
১. এশার চার রাকাত ফরজ এবং দুই রাকাত সুন্নতের পর তারাবিহ`র নামাজ শুরু হয়।
২. এটি দুই রাকাত করে মোট ২০ রাকাত আদায় করা হয় (১০ সালামে)।
৩. প্রতি চার রাকাত পরপর কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেওয়া হয়, যা ‘তারাবিহ’ শব্দের অর্থের সাথেও সম্পর্কিত।
৪. নামাজের পর জামাতে বিতর নামাজ পড়া উত্তম।
তারাবিহ নামাজের নিয়ত
আরবি নিয়ত:
نَوَيْتُ اَنْ اُصَلِّيَ للهِ تَعَالَى رَكْعَتَيْنِ صَلَاةَ التَّرَاوِيْحِ سُنَّةَ رَسُوْلِ اللهِ تَعَالَى، مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ، اللهُ اَكْبَرْ
উচ্চারণ:
নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা`আলা, রাক’আতাই সালাতিত তারাবিহ, সুন্নাতু রাসূলিল্লাহি তা`আলা, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা`বাতিশ শারিফাতি, আল্লাহু আকবার।
বাংলায়:
"আমি কেবলামুখী হয়ে দুই রাকাত তারাবিহ`র সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ নামাজ আদায়ের নিয়ত করছি। আল্লাহু আকবার।"
(যদি জামাতে পড়েন, তবে "ইমামের অনুসরণে" বাক্যটি যোগ করতে হবে।)
তারাবির নামাজ পড়ার পদ্ধতি
১. দুই রাকাত নামাজ আদায় করে সালাম ফেরাবেন।
২. আবার নতুন নিয়তে দুই রাকাত নামাজ আদায় করবেন।
৩. এভাবে চার রাকাত আদায় করার পর কিছু সময় বসে বিশ্রাম নেবেন এবং দোয়া, জিকির বা তাসবিহ পড়বেন।
৪. আবার একইভাবে ২০ রাকাত সম্পন্ন করবেন।
তারাবির নামাজের দোয়া
প্রতি চার রাকাত পর নিচের দোয়া পড়ার প্রচলন আছে, তবে এটি পড়া বাধ্যতামূলক নয়।
আরবি দোয়া:
سُبْحَانَ ذِي الْمُلْكِ وَالْمَلَكُوتِ سُبْحَانَ ذِي الْعِزَّةِ وَالْعَظْمَةِ وَالْهَيْبَةِ وَالْقُدْرَةِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْجَبَرُوْتِ، سُبْحَانَ الْمَلِكِ الْحَيِّ الَّذِيْ لَا يَنَامُ وَلَا يَمُوْتُ أَبَدًا أَبَدَ، سُبُّوْحٌ قُدُّوْسٌ رَبُّنَا وَرَبُّ الْمَلَائِكَةِ وَالرُّوْحِ
উচ্চারণ:
সুবহানা জিল মুলকি ওয়াল মালাকুতি, সুবহানা জিল ইযযাতি ওয়াল আঝমাতি ওয়াল হায়বাতি ওয়াল কুদরাতি ওয়াল কিবরিয়ায়ি ওয়াল জাবারুতি। সুবহানাল মালিকিল হাইয়্যিল্লাজি লা ইয়ানামু ওয়ালা ইয়ামুতু আবাদান আবাদা। সুব্বুহুন কুদ্দুসুন রাব্বুনা ওয়া রাব্বুল মালাইকাতি ওয়ার রূহ।
তারাবির নামাজের মোনাজাত
অনেকে চার রাকাত পরপর বা পুরো নামাজ শেষে নিচের দোয়া পড়েন:
আরবি মোনাজাত:
اَللَّهُمَّ اِنَّا نَسْئَالُكَ الْجَنَّةَ وَ نَعُوْذُبِكَ مِنَ النَّارِ، يَا خَالِقَ الْجَنَّةِ وَالنَّارِ، بِرَحْمَتِكَ يَا عَزِيْزُ يَا غَفَّارُ يَا كَرِيْمُ يَا سَتَّارُ يَا رَحِيْمُ يَا جَبَّارُ يَا خَالِقُ يَا بَارُّ، اَللَّهُمَّ أَجِرْنَا مِنَ النَّارِ، يَا مُجِيْرُ يَا مُجِيْرُ يَا مُجِيْرُ، بِرَحْمَتِكَ يَا أَرْحَمَ الرَّاحِمِيْنَ
উচ্চারণ:
আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকাল জান্নাতা ওয়া নাউজুবিকা মিনাননার। ইয়া খালিকাল জান্নাতি ওয়ান নার। বিরাহমাতিকা ইয়া আজিজু ইয়া গাফফার, ইয়া কারিমু ইয়া সাত্তার, ইয়া রাহিমু ইয়া জাব্বার, ইয়া খালিকু ইয়া বাররু। আল্লাহুম্মা আজিরনা মিনান নার। ইয়া মুজিরু, ইয়া মুজিরু, ইয়া মুজির। বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমিন।
তারাবিহ নামাজ সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন: তারাবিহ`র নামাজ কত রাকাত?
উত্তর: সাধারণত ২০ রাকাত পড়া হয়, তবে ৮ রাকাতও অনেক জায়গায় প্রচলিত।
প্রশ্ন: খতম তারাবিহ ও সূরা তারাবিহ`র পার্থক্য কী?
উত্তর:
- খতম তারাবিহ: পুরো রমজান মাসে কুরআন খতম করে তারাবিহ আদায় করা।
- সূরা তারাবিহ: যে কোনো সূরা দিয়ে তারাবিহ পড়া।
প্রশ্ন: নারীরা কি ঘরে তারাবিহ`র নামাজ পড়তে পারেন?
উত্তর: হ্যাঁ, নারীরা ঘরে একা বা জামাতে তারাবিহ পড়তে পারেন।
প্রশ্ন: তারাবিহ`র নামাজ কি ফরজ?
উত্তর: না, এটি সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। তবে না পড়লে গুনাহ হবে।
তারাবিহ নামাজের ফজিলত
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
"যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে এবং সওয়াবের আশায় রমজানে তারাবিহ`র নামাজ আদায় করবে, তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।" (বুখারি ও মুসলিম)
উপসংহার
তারাবিহ`র নামাজ রমজানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি আমাদের অতীতের গুনাহ মোচনের সুযোগ এনে দেয় এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে সহায়তা করে। তাই যথাযথ নিয়ম ও আন্তরিকতা সহকারে এই নামাজ আদায় করা উচিত।
আপনার মতামত লিখুন :