গাইবান্ধা জেলার তরুণদের সামাজিক সংগঠন “ইয়ুথ ফাউন্ডেশন গাইবান্ধা” সম্প্রতি সমাজে নৈতিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তারা ফেব্রুয়ারির অশ্লীলতা ও বেহায়াপনার বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টি ও সামাজিক প্রতিরোধের জন্য সংগঠনের সদস্যরা বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য লিফলেট বিতরণ ও পোস্টারিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
তাদের লক্ষ্য সমাজকে ব্যভিচার ও নৈতিক অবক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করা এবং তরুণ প্রজন্মকে ইসলামের নৈতিক আদর্শের প্রতি অনুপ্রাণিত করা।

ফাউন্ডেশনের এক সদস্য বলেন, “বর্তমানে তরুণ সমাজ বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ছে, যা পরিবার ও সমাজের জন্য ক্ষতিকর। আমরা চাই, সবাই ইসলামের সুন্দর আদর্শ গ্রহণ করুক এবং নৈতিকভাবে শক্তিশালী সমাজ গড়ে তুলুক।”
ইসলামের দৃষ্টিতে যিনা ও ব্যভিচার
ইসলাম ধর্মে নৈতিকতা ও পবিত্রতার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। যিনা (ব্যভিচার) ও বেহায়াপনা সমাজকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়, তাই কুরআন ও হাদিসে এগুলো কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন—
কুরআন:
“আর তোমরা ব্যভিচারের নিকটেও যেয়ো না। নিশ্চয়ই এটা অশ্লীল কাজ ও নিকৃষ্ট পথ।”
(সুরা আল-ইসরা: ৩২)
এই আয়াত স্পষ্ট করে দেয় যে, শুধুমাত্র যিনা করা নয়, বরং যিনার কাছাকাছি যাওয়া, এর কারণ সৃষ্টি করা বা এমন কোনো কর্মকাণ্ডে জড়ানো যা যিনার দিকে ধাবিত করে— তা সম্পূর্ণ হারাম।
যিনার পরিণতি: কুরআনের কঠোর হুঁশিয়ারি
আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন—
“ব্যভিচারিণী নারী ও ব্যভিচারী পুরুষ— তাদের প্রত্যেককে একশত বেত্রাঘাত করো। এবং আল্লাহর বিধান কার্যকর করতে তোমাদের মনে দয়ার উদ্রেক যেন না হয়, যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি ঈমান আনো। তাদের শাস্তির সময় মু’মিনদের একটি দল উপস্থিত থাকবে।” (সুরা আন-নূর: ২)
এখান থেকে বোঝা যায়, যিনা এমন এক জঘন্য পাপ, যা ব্যক্তি ও সমাজকে ধ্বংস করে। ইসলামে এ ধরনের অপরাধের জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে।
যিনা ও ব্যভিচার সমাজের জন্য কেন ক্ষতিকর?
১. নৈতিক অবক্ষয় সৃষ্টি করে: যিনা সমাজের নৈতিকতা ধ্বংস করে, ফলে পরিবারব্যবস্থা দুর্বল হয়ে যায়।
২. অবৈধ সন্তান জন্মের হার বৃদ্ধি: অবৈধ সম্পর্ক থেকে জন্ম নেওয়া সন্তানদের পরিচয়হীনতা ও সামাজিক নিরাপত্তার অভাব তৈরি হয়।
৩. রোগ-বালাই ছড়িয়ে পড়ে: যিনার কারণে এইডস, সিফিলিসসহ বিভিন্ন যৌনরোগ সমাজে ছড়িয়ে পড়ে।
৪. পারিবারিক সম্পর্ক দুর্বল হয়: ব্যভিচার সংসার জীবনে অবিশ্বাস ও অস্থিরতা তৈরি করে, যার ফলে বিবাহবিচ্ছেদ ও পারিবারিক সমস্যা বাড়ে।
৫. সামাজিক অপরাধ বৃদ্ধি: ধর্ষণ, যৌন হয়রানি, হত্যাকাণ্ডের মতো অপরাধসমূহ বেড়ে যায়, যা সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে।

ইয়ুথ ফাউন্ডেশন গাইবান্ধা সংগঠনের সাথে সাক্ষাৎ
সামাজিক সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই উদ্যোগ সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে তারা আরও বড় পরিসরে সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করবে। তারা আরও বলেন, যিনা ও ব্যভিচার শুধু একটি ব্যক্তিগত গুনাহ নয়, এটি সমাজকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। ইসলামে এই পাপ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং এর বিকল্প হিসেবে বৈধ ও পবিত্র জীবনধারার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আমাদের সকলের উচিত নিজেদের ও আমাদের সমাজকে এ পাপমুক্ত রাখা এবং ইসলামের সঠিক আদর্শ অনুসরণ করা।
আপনার মতামত লিখুন :