পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁর মুনতিজ মুহাম্মদ (সা.)-এর পূর্ববর্তী নবী, দাউদ (আ.)-এর জীবনধারা ও কর্মের প্রতি বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছেন। দাউদ (আ.) ছিলেন একজন মহান নবী, যিনি শুধু একজন ধর্মপ্রচারকই নন, বরং একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক এবং কর্মকারও ছিলেন।
দাউদ (আ.) তাঁর সময়কার এক বিশাল সাম্রাজ্যের অধিকারী ছিলেন। তাঁর রাজ্য ছিল শক্তিশালী, তবে তিনি রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে কোনো ভাতা গ্রহণ করতেন না। তিনি নিজের হাতের শ্রমে জীবিকা নির্বাহ করতেন, যা তাঁর পরিশ্রমী এবং কর্মঠ চরিত্রের একটি নিদর্শন।
দাউদ (আ.) ছিলেন একজন অত্যন্ত দক্ষ কর্মকার, বিশেষ করে তিনি শত্রুদের মোকাবেলা করার জন্য উন্নতমানের বর্ম নির্মাণে বিশেষ দক্ষতা অর্জন করেছিলেন। আল্লাহ তাঁকে লৌহশিল্পের শৈল্পিক উন্নয়ন দান করেছিলেন। এর আগে লোহার ব্যবহার ছিল, তবে তা নিখুঁত ও শৈল্পিক ছিল না, কিন্তু দাউদ (আ.)-এর হাতে লোহাকে নরম করে উন্নতমানের বর্ম তৈরি করা সম্ভব হয়।
এ সম্পর্কে কোরআনে আল্লাহ বলেন, “আমি তাঁর জন্য লোহাকে নরম করেছিলাম এবং তাঁকে বলেছিলাম, প্রশস্ত বর্ম নির্মাণ কোরো, কড়াসমূহ যথাযথভাবে সংযুক্ত কোরো এবং ভালো কাজ কোরো।” (সূরা সাবা, আয়াত : ১০)
এভাবে দাউদ (আ.)-এর হাতের তৈরি বর্ম ছিল একদম শৈল্পিক এবং কার্যকরী, যা তাঁকে শুধু শত্রুদের মোকাবেলায় নয়, বরং তাঁর জীবিকার জন্যও সহায়ক ছিল। এই বর্ম নির্মাণের মাধ্যমে তিনি নিজের সংসার পরিচালনা করতেন এবং অন্যদের জন্যও কাজ দিতেন।
দাউদ (আ.) একজন মহান আল্লাহর ইবাদতকারী ছিলেন এবং তিনি অত্যন্ত মধুর কণ্ঠে জাবুর পাঠ করতেন। তাঁর কণ্ঠ ছিল এতই মধুর যে, পশু, পাখি এমনকি মাছও বিমোহিত হয়ে শুনত। এমনকি রাসুলুল্লাহ (সা.)-ও আবু মুসা আশআরি (রা.)-এর তিলাওয়াত পছন্দ করতেন এবং প্রশংসা করে বলতেন, “আল্লাহ তাঁকে দাউদি কণ্ঠ দান করেছেন।” (সুনানে তিরমিজি)
দাউদ (আ.)-এর এই কণ্ঠস্বর প্রবাদের মর্যাদা লাভ করেছে, যা মুসলিম সমাজে `দাউদি কণ্ঠ` নামে পরিচিত। তাঁর কণ্ঠের সুর এবং সংগীত যেমন ছিল আকর্ষণীয়, তেমনি তাঁর জীবনও ছিল উদাহরণমূলক।
দাউদ (আ.)-এর জীবন ছিল পরিশ্রমী, আত্মনির্ভরশীল এবং সৃষ্টিকর্তার প্রতি গভীর আনুগত্যের প্রদর্শন। তিনি নিজ হাতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন, যা শুধুমাত্র তাঁর আত্মসম্মান ও সততার পরিচায়ক নয়, বরং আল্লাহর দেয়া সৃষ্টির প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা এবং ন্যায্য উপার্জনের প্রতি প্রতিশ্রুতির বহি:প্রকাশ ছিল।
আপনার মতামত লিখুন :