বাংলাদেশের আকাশে আজ কোথাও ১৪৪৬ হিজরি সনের পবিত্র শাবান মাসের চাঁদ দেখা যায়নি। ফলে আগামীকাল ৩১ জানুয়ারি পবিত্র রজব মাস ৩০ দিন পূর্ণ হবে এবং আগামী ১ ফেব্রুয়ারি শনিবার থেকে পবিত্র শাবান মাস গণনা করা হবে। এই পরিপ্রেক্ষিতে, আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে সারাদেশে পবিত্র শবে বরাত পালিত হবে। মুসলমানদের কাছে শবে বরাত অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ একটি রাত। এ রাতকে ‘লাইলাতুল বরাত’ বা ‘বড় রাত’ বলা হয়, যা রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের এক মহিমান্বিত রজনী।
জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভার সিদ্ধান্ত
আজ সন্ধ্যায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন বায়তুল মোকাররম সভাকক্ষে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। সভায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাওয়া চাঁদ দেখার তথ্য পর্যালোচনা করা হয়। সব জেলা প্রশাসন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রধান কার্যালয়, বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়সমূহ, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর এবং মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বাংলাদেশের কোথাও শাবান মাসের চাঁদ দেখা যায়নি। ফলে ধর্ম মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে শবে বরাত পালিত হবে।
সভায় উপস্থিত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা
এই সভায় উপস্থিত ছিলেন—
- ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক (সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ) আ. ছালাম খান
- তথ্য অধিদপ্তরের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা মো. নিজামূল কবীর
- বাংলাদেশ ওয়াক্ফ প্রশাসনের প্রশাসক মো. ফখরুল ইসলাম
- ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. সাইফুল ইসলাম
- ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মু. আ. আউয়াল হাওলাদার
- মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খান
- তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. ইব্রাহিম ভূঞা
- বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠানের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মুহাম্মদ শহিদুল ইসলাম
- বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আ. রহমান খান
- বাংলাদেশ টেলিভিশনের অতিরিক্ত পরিচালক মো. রুহূল আমিন
- বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মুহাম্মদ মিজানুর রহমান
- সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়ার অধ্যক্ষ মো. আশরাফুল কবীর
- লালবাগ শাহী জামে মসজিদের খতিব মোহাম্মদ নেয়ামতুল্লাহ
- চকবাজার শাহী জামে মসজিদের খতিব মুফতি শেখ নাঈম রেজওয়ান
এছাড়াও ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ধর্ম মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ওয়াক্ফ প্রশাসন, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর এবং মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এই সভায় অংশ নেন।
শবে বরাতের গুরুত্ব ও তাৎপর্য
শবে বরাত ইসলামী বর্ষপঞ্জির একটি গুরুত্বপূর্ণ রাত। ‘শব’ শব্দের অর্থ রাত, আর ‘বরাত’ শব্দের অর্থ মুক্তি বা নাজাত। এই রাতকে রহমত, মাগফিরাত ও মুক্তির রাত বলা হয়। বিশ্বাস করা হয়, এই রাতে মহান আল্লাহ বান্দাদের গুনাহ ক্ষমা করেন, দোয়া কবুল করেন এবং রিজিক নির্ধারণ করেন। এই রাতে মুসলমানরা ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাত কামনা করে থাকেন। এ রাতের ফজিলত সম্পর্কে বিভিন্ন হাদিসে বলা হয়েছে, এই রাতে আল্লাহ বান্দাদের প্রতি অসীম দয়া প্রদর্শন করেন। মুসলমানরা এই রাতে বিশেষ নামাজ আদায় করেন, কোরআন তেলাওয়াত করেন, দোয়া-দরুদ পাঠ করেন এবং আত্মশুদ্ধির জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান।
শবে বরাত উপলক্ষে সরকার ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রস্তুতি
পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষে বাংলাদেশ সরকার ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন নানা উদ্যোগ গ্রহণ করবে। যেমন:
১. দেশজুড়ে মসজিদ, ইসলামিক কেন্দ্র ও মাদ্রাসাগুলোতে বিশেষ ওয়াজ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হবে।
২. ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক বিশেষ দোয়া ও মিলাদের আয়োজন করা হবে।
৩. ঢাকার বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে বিশেষ নামাজ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
৪. সারাদেশে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
৫. শবে বরাত উপলক্ষে জাতীয় ছুটি ঘোষণা করা হতে পারে।
সাধারণ জনগণের করণীয়
পবিত্র শবে বরাতের রাত ইবাদতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ উপলক্ষে—
- আত্মশুদ্ধির জন্য বেশি বেশি ইবাদত করা উচিত।
- তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা যেতে পারে।
- আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী ও গরীব-দুঃখীদের সাহায্য করা উত্তম কাজ।
- আত্মীয়তার সম্পর্ক দৃঢ় করার জন্য দোয়া করা যেতে পারে।
- কবর জিয়ারত করে মৃত আত্মীয়দের জন্য দোয়া করা যেতে পারে।
উপসংহার
১৪৪৬ হিজরি সনের শাবান মাসের চাঁদ বাংলাদেশে দেখা না যাওয়ায়, আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে সারাদেশে পবিত্র শবে বরাত পালিত হবে। মুসলমানদের কাছে এই রাত অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ, কারণ এটি রহমত, মাগফিরাত ও মুক্তির রাত। তাই ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এই রাতে বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের চেষ্টা করবেন। এমন পবিত্র ও ফজিলতপূর্ণ রাতে মুসলিম উম্মাহর উচিত নিজেদের ভুল-ত্রুটি থেকে মুক্তি চেয়ে আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করা এবং ভালো কাজের মাধ্যমে নিজেদের জীবনকে সুন্দর করে তোলা।
আপনার মতামত লিখুন :