দেশের সাড়ে তিন লাখ মসজিদের ১৭ লাখ ইমাম-মুয়াজ্জিন এবং খাদেমদের জন্য সম্মানী ভাতা প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীনে এই কর্মসূচি সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় পরিচালিত হবে।
ভাতা কার্যক্রমের পরিকল্পনা
সরকার প্রথম পর্যায়ে দেশের মোট মসজিদের ১০ শতাংশে এই কর্মসূচি চালু করবে। পর্যায়ক্রমে সব মসজিদই এই উদ্যোগের অন্তর্ভুক্ত হবে।
- ইমাম: প্রতি মাসে ৫,০০০ টাকা
- মুয়াজ্জিন: প্রতি মাসে ৪,০০০ টাকা
- খাদেম: প্রতি মাসে ৩,০০০ টাকা
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কমিটি গঠন
এই উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশন (ইফা) সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে।
কমিটির প্রধান: মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন (ইফার সচিব)
অন্যান্য সদস্যরা:
১. মো. মহিউদ্দিন (পরিচালক, সমন্বয়)
২. মোহাম্মদ তৌহিদুল আনোয়ার (পরিচালক, প্রকাশনা)
৩. মো. রেজ্জাকুল হায়দার (পরিচালক, ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমি)
৪. মো. জাকির হোসেন (উপ-পরিচালক, মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম)
৫. মো. মোস্তাফিজুর রহমান (সহকারী পরিচালক, প্রশাসন)
৬. এ কে এম মুজাহিদুল ইসলাম (উপ-পরিচালক, প্রশাসন)
কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে দেশের মসজিদগুলোর তালিকা তৈরির কাজ সম্পন্ন করে একটি প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
নীতিমালা ও প্রাসঙ্গিক তথ্য
সরকার মসজিদ ব্যবস্থাপনা নীতিমালা ২০০৬ যুগোপযোগী করার পাশাপাশি ২০২৪ সালের জেলা প্রশাসক সম্মেলনে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি চালুর সিদ্ধান্ত নেয়। এই উদ্যোগের আওতায় মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন এবং খাদেমদের জন্য সম্মানী প্রদান নিশ্চিত করা হবে।
মসজিদের সংখ্যা ও বর্তমান অবস্থা
দেশে প্রায় সাড়ে তিন লাখ মসজিদে ১৭ লাখ ইমাম ও মুয়াজ্জিন কর্মরত। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু মসজিদের যেমন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ, আন্দরকিল্লা শাহি জামে মসজিদ এবং জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদে কর্মরত খতিব, ইমাম ও মুয়াজ্জিনরা রাজস্ব খাতভুক্ত বেতন পান।
এর আগে, মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্পে কর্মরত ৪৯,৭১৯ জন ইমাম ও মুয়াজ্জিনকে মাসিক ৫,০০০ টাকা সম্মানী প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া ৫৬৪টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র প্রকল্পের আওতায় ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেম নিয়োগ এবং তাদের জন্য রাজস্ব খাতভুক্ত পদ সৃষ্টির প্রস্তাবও রয়েছে।
ভাতা কার্যক্রমের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
কর্মসূচির আওতায় প্রতিটি মসজিদকে ১২,০০০ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হবে। এই অর্থ থেকে ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেমের সম্মানী প্রদান করা হবে। এক্ষেত্রে মন্দির, গির্জা ও অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ের কর্মীদেরও এই কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
পূর্ববর্তী উদ্যোগ ও নির্দেশনা
২০২৪ সালের ৪ মার্চ জেলা প্রশাসক সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানিয়েছিলেন, প্রতিটি জেলার ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তিদের তালিকা প্রস্তুত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এসব তালিকা অনুযায়ী সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
উপসংহার
ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেমদের সামাজিক নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সুরক্ষার জন্য সরকারের এই উদ্যোগ একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। দেশের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে কার্যকর ও মানসম্পন্ন সেবা প্রদানের পাশাপাশি এই কর্মসূচি ধর্মীয় কর্মীদের মর্যাদা ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে।
আপনার মতামত লিখুন :