রোজা মানুষের ব্যক্তি জীবনেও প্রভাব ফেলে। আত্মিক উপকারের সঙ্গে সঙ্গে রোজার রয়েছে শারীরিক উপকারিত। রমজান মাস চলে গেলেও রোজা আমাদের জীবনে অন্যতম প্রভাব বিস্তার করতে পারে নানাভাবে। মাহে রমজানের পরও এমন কিছু রোজা রয়েছে, যেগুলোর সওয়াব রয়েছে অফুরন্ত।
রসলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
مَنْ صَامَ رَمَضَانَ ثُمّ أَتْبَعَهُ سِتّا مِنْ شَوّالٍ، كَانَ كَصِيَامِ الدّهْرِ.
যে ব্যক্তি রমযান মাসের রোজা রাখল। অতপর শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখল, সে যেন সারা বছর রোজা রাখল। (মুসলিম ১১৬৪)প্রতি চান্দ্রমাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তিন দিনের রোজা (আইয়ামে বীযের রোজা) রাখাও নবীজির নিয়মিত আমল ছিলো।
নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- ثَلَاثٌ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ، وَرَمَضَانُ إِلَى رَمَضَانَ، فَهَذَا صِيَامُ الدّهْرِ كُلِّهِ প্রতি মাসে তিন দিন রোযা রাখা এবং রমযান মাসের রোজা সারা বছর রোজা রাখার সমতুল্য। (মুসলিম ১১৬২)
অন্য বর্ণনায় আছে, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
صَوْمُ ثَلَاثَةِ أَيّامٍ مِنَ الشّهْرِ، صَوْمُ الشّهْرِ كُلِّهِ মাসে তিন দিন রোজা রাখা পুরো মাস রোজা রাখার সমান। (মুসলিম ১১৫৯)
আর এ রোজা প্রতি চান্দ্রমাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রাখা উত্তম। পরিভাষায় এ দিনগুলো ‘আইয়ামে বীয’ নামে পরিচিত। ‘বীয’ আরবী শব্দ, এর অর্থ : সাদা, উজ্জ্বল। প্রত্যেক চান্দ্রমাসের এ দিনগুলোতে যেহেতু চাঁদের আলো পূর্ণ উজ্জ্বল থাকে এজন্য এই তারিখগুলোকে ‘আইয়ামে বীয’ বলা হয়। হাদীস শরীফে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার হযরত আবু যর গিফারী রা.-কে লক্ষ্য করে বলেন-
يَا أَبَا ذَرٍّ، إِذَا صُمْتَ مِنَ الشّهْرِ ثَلَاثَةَ أَيّامٍ فَصُمْ ثَلَاثَ عَشْرَةَ، وَأَرْبَعَ عَشْرَةَ، وَخَمْسَ عَشْرَةَ.
قال الترمذي: ﺣﺪﻳﺚ ﺣﺴﻦ হে আবু যর! তুমি যদি মাসে তিন দিন রোজা রাখ তবে তের, চৌদ্দ ও পনের তারিখে রাখ। -জামে তিরমিযী, হাদীস ৭৬১
প্রতি বৃহস্পতিবার ও সোমবার রোজা রাখা
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
تُعْرَضُ الأَعْمَالُ يَوْمَ الِاثْنَيْنِ وَالخَمِيسِ، فَأُحِبّ أَنْ يُعْرَضَ عَمَلِي وَأَنَا صَائِمٌ.
حَدِيثُ أَبِي هُرَيْرَةَ فِي هَذَا البَابِ حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ.
সোম ও বৃহস্পতিবার বান্দার আমলসমূহ আল্লাহর নিকট পেশ করা হয়। তাই আমি পছন্দ করি যে, আমার আমল পেশ হোক এমতাবস্থায় যে, আমি তখন রোজাদার। (জামে তিরমিজি ৭৪৭)
আরাফার দিনের রোজা
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
صِيَامُ يَوْمِ عَرَفَةَ، أَحْتَسِبُ عَلَى اللهِ أَنْ يُكَفِّرَ السّنَةَ الّتِي قَبْلَهُ، وَالسَّنَةَ الّتِي بَعْدَهُ
আরাফার দিনের রোজার বিষয়ে আমি আল্লাহর কাছে প্রত্যাশা করি যে, (এর দ্বারা) বিগত বছরের এবং পরবর্তী বছরের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। (মুসলিম ১১৬২)
আশুরার রোজা
হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
صِيَامُ يَوْمِ عَاشُورَاءَ، أَحْتَسِبُ عَلَى اللهِ أَنْ يُكَفِّرَ السّنَةَ الّتِي قَبْلَهُ আশুরার রোজা সম্পর্কে আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী যে, এর দ্বারা তিনি বিগত বছরের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দিবেন। (মুসলিম ১১৬২)
শাবান মাসে বেশি বেশি রোজা রাখা
শাবান মাসে অধিক পরিমাণে রোজা রাখা উত্তম। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রা. বলেন-
لَمْ يَكُنْ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ فِي الشّهْرِ مِنَ السّنَةِ أَكْثَرَ صِيَامًا مِنْهُ فِي شَعْبَانَ.
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শাবান মাস ব্যতীত বছরের অন্য কোনো মাসে এত অধিক (নফল) রোজা রাখতেন না। (মুসলিম ৭৮২)
অন্য বর্ণনায় আছে, হযরত আয়েশা রা. বলেন-
وَلَمْ أَرَهُ صَائِمًا مِنْ شَهْرٍ قَطُّ، أَكْثَرَ مِنْ صِيَامِهِ مِنْ شَعْبَانَ كَانَ يَصُومُ شَعْبَانَ كُلّهُ، كَانَ يَصُومُ شَعْبَانَ إِلّا قَلِيلًا আমি তাকে শাবান মাস ছাড়া অন্য কোনো মাসে এত অধিক রোজা রাখতে দেখিনি। তিনি (যেন) গোটা শাবান মাসই রোজা রাখতেন। তিনি সামান্য (কয়টি দিন) ব্যতীত পুরো শাবান মাস রোজা রাখতেন। (মুসলিম ৭৮১)
আপনার মতামত লিখুন :