বাংলাদেশ রবিবার, ১৬ মার্চ, ২০২৫, ২ চৈত্র ১৪৩১

জুমার দিনের শ্রেষ্ঠ আমলসমূহ ও ফজিলত

দৈনিক প্রথম সংবাদ ডেস্ক

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৫, ২০২৪, ০১:৩৪ পিএম

জুমার দিনের শ্রেষ্ঠ আমলসমূহ ও ফজিলত

জুমার দিনের আমলসমূহ। ছবি: সংগৃহীত

জুমার দিন ইসলামি জীবনধারায় সপ্তাহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ একটি দিন এবং কোরআন ও হাদিসে এ দিনের মর্যাদা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। আজ আমরা জুমার দিনের আমলগুলো ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করবো।

জুমার দিনের ফজিলত

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, “জুমার দিন সপ্তাহের মধ্যে শ্রেষ্ঠ এবং তা আল্লাহর নিকট অধিক সম্মানিত।” (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১০৮৪)
আরেক হাদিসে তিনি বলেন, “সূর্য উদিত হওয়ার দিনগুলোর মধ্যে জুমার দিন সর্বোত্তম। এই দিনে আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে, জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে এবং জান্নাত থেকে বের করা হয়েছে।” (মুসলিম, হাদিস : ৮৫৪)

ইসলামি ইতিহাসে জুমার দিনটির গুরুত্ব আরও বাড়িয়েছে নিম্নলিখিত কারণগুলো।

১. আল্লাহ তাআলা এই দিনে প্রথম মানব হজরত আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করেছেন।
২. জুমার দিনেই তাকে জমিনে প্রেরণ করা হয়।
৩. এ দিনেই আদম (আ.)-এর ইন্তেকাল হয়েছে।
৪. এই দিনে এমন একটি মুহূর্ত আছে, যখন বান্দা আল্লাহর কাছে যা প্রার্থনা করবে, তা কবুল হবে।
৫. কিয়ামত সংঘটিত হবে এ দিনেই। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৮৯৫)

জুমার দিনের ৮টি বিশেষ আমল

১. গোসল করা, উত্তম পোশাক পরা ও সুগন্ধি ব্যবহার

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: “যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করবে, উত্তম পোশাক পরিধান করবে এবং সুগন্ধি ব্যবহার করবে, জুমার নামাজে গিয়ে খুতবা মনোযোগ দিয়ে শুনবে, তার এই আমল পূর্ববর্তী জুমা থেকে পরবর্তী জুমা পর্যন্ত ছোট গুনাহর জন্য কাফফারা হবে।” (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৪৩)

২. আগেভাগে মসজিদে যাওয়া

আল্লাহ বলেন: “হে মুমিনগণ! জুমার দিনে যখন নামাজের আজান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে দ্রুত ছুটে যাও এবং বেচাকেনা বন্ধ করো। এটি তোমাদের জন্য উত্তম।” (সূরা জুমা : ৯)

রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন:
“জুমার দিন মসজিদের দরজায় ফেরেশতারা অবস্থান করেন এবং আগমনকারীদের ক্রমানুসারে নাম লিখতে থাকেন। প্রথম আগমনকারী একজন উট কোরবানি করার সমান সওয়াব পান। এরপর গরু, ছাগল, মুরগি, ডিম দানের মতো সওয়াব পাওয়া যায়। ইমাম খুতবা শুরু করলে ফেরেশতারা তাদের লেখা বন্ধ করেন।” (বুখারি, হাদিস : ৯২৯)

৩. মনোযোগ দিয়ে খুতবা শোনা

ইমামের খুতবা মনোযোগ দিয়ে শোনা এবং নামাজের সময় চুপ থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি সগিরা গুনাহ মোচনে সহায়তা করে।

৪. সুরা কাহাফ তিলাওয়াত করা

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন: “যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহাফ পাঠ করবে, তার জন্য দুই জুমার মধ্যবর্তী সময় নূর উজ্জ্বল হবে।” (আমালুল ইয়াওমী ওয়াল লাইল, হাদিস : ৯৫২)

৫. বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন: “জুমার দিন আমার ওপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করো। কেননা, এই দিনে তোমাদের দরুদ আমার সামনে পেশ করা হয়।” (আবু দাউদ, হাদিস : ১০৪৭)

৬. বিশেষ মুহূর্তে দোয়া করা

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন: “জুমার দিনে এমন একটি মুহূর্ত আছে, যখন কোনো মুসলমান আল্লাহর কাছে দোয়া করলে তা কবুল হয়। মূলত আছরের পরের সময়টাকে এই বিশেষ সময় বলা হয়।” (আবু দাউদ, হাদিস : ১০৪৮)

৭. নখ কাটা ও পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা

শুক্রবারে নখ কাটা, গায়ের অনাকাঙ্ক্ষিত লোম পরিষ্কার করা এবং পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার ফজিলত রয়েছে।

৮. অতিরিক্ত নফল ইবাদত ও পবিত্রতা রক্ষা

জুমার দিন অতিরিক্ত নফল নামাজ ও অন্যান্য ইবাদতের জন্য বিশেষভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে।

নারীদের জন্য জুমার দিনের আমল

নারীদের জুমার নামাজ মসজিদে পড়ার বাধ্যবাধকতা নেই। তারা ঘরে জোহরের নামাজ আদায় করবেন। তবে নিম্নোক্ত আমলগুলো পুরুষের মতো নারীরাও করতে পারেন:
১. গোসল করা।
২. সুরা কাহাফ তিলাওয়াত।
৩. বেশি বেশি দরুদ পাঠ।
৪. নখ কাটা ও পরিচ্ছন্ন থাকা।
৫. বিশেষ মুহূর্তে দোয়া করা।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: “নারীদের নামাজের উত্তম জায়গা হলো তাদের ঘরের নির্জন কোণ।” (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২৬৫৪২)

উপসংহার

জুমার দিন ইসলামে বরকতপূর্ণ একটি দিন এবং এই দিনের আমলগুলো আখিরাতের সঞ্চয়ের এক বিশেষ সুযোগ। এই দিনটি যথাযথভাবে পালন করলে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বরকত নেমে আসবে। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের উচিত জুমার দিনের ফজিলত গ্রহণে মনোযোগী হওয়া।

 

Link copied!

সর্বশেষ :