বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম এর নতুন খতিব হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বিশিষ্ট ইসলামী আইন বিশেষজ্ঞ এবং হাদিস বিশারদ মুফতি আবদুল মালেক। বর্তমান খতিব ওয়ালিউর রহমান খানের স্থলাভিষিক্ত হয়ে দায়িত্ব পালন করবেন তিনি। ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই নিয়োগের ঘোষণা দেওয়া হয়। আবদুল মালেক একজন ইসলামী পণ্ডিত যিনি ইসলামিক স্টাডিজ, হাদিস এবং ফিকহের ওপর দেশ-বিদেশের প্রসিদ্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেছেন।
জন্ম ও প্রাথমিক শিক্ষা
মুফতি আবদুল মালেক ১৯৬৯ সালের ২৯ আগস্ট কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার মনোহরগঞ্জ ইউনিয়নের সারাশপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে দ্বিতীয়। তার পিতা মাওলানা শামসুল হক একজন বিশিষ্ট আলেম ছিলেন।
উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা
১৯৮৮ সালে মুফতি আবদুল মালেক পাকিস্তানের করাচির জামিয়া উলুমুল ইসলামিয়া মাদ্রাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস সমাপ্ত করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি এই মাদ্রাসায় আল্লামা আব্দুর রশীদ নোমানীর তত্ত্বাবধানে তিন বছর হাদিসশাস্ত্রে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করেন। ১৯৯২ সালে তিনি দারুল উলুম করাচিতে মুফতি তাকি উসমানির তত্ত্বাবধানে দুই বছর ধরে উচ্চতর ফিকহ ও ফতোয়া অধ্যয়ন করেন।
সৌদি আরবে তিনি শায়খ আবদুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহর তত্ত্বাবধানে দুই বছর ধরে হাদিস ও ইসলামি আইন নিয়ে উচ্চতর গবেষণা চালিয়েছেন। এ সময় তিনি রিয়াদের ইমাম মোহাম্মদ ইবনে সাউদ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের উসুলুদ্দীন অনুষদের অধীনে পড়াশোনা করেন।
কর্মজীবন ও অবদান
মুফতি আবদুল মালেক ১৯৯৬ সালে ঢাকায় তার বড় ভাই মুফতি আবুল হাসান মুহাম্মদ আবদুলের সঙ্গে মিলে উচ্চতর ইসলামী শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান মারকাযুদ দাওয়াহ আল ইসলামিয়া প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে তিনি এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাসচিব ও উচ্চতর হাদিস গবেষণা বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও তিনি ঢাকার জামিয়াতুল উলুম আল ইসলামিয়ার শায়খুল হাদিস ছিলেন।
২০১২ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গঠিত কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কমিশনের সদস্য হিসেবে নিয়োগ পান। ২০১৯ সালে তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের জাতীয় চাঁদ দেখা উপকমিটির প্রধান মনোনীত হন।
ব্যক্তিগত জীবন ও আন্তর্জাতিক সম্মেলন
মুফতি আবদুল মালেক ইসলামের প্রচার ও গবেষণার জন্য মক্কা-মদিনা, পাকিস্তান, ভারত ও তুরস্কসহ বেশ কয়েকটি দেশ সফর করেছেন। বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তিনি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছেন। তিনি বাংলা, আরবি, ইংরেজি এবং উর্দু ভাষায় মোট ১৬টি গ্রন্থ রচনা করেছেন।
প্রকাশনা ও প্রবন্ধ
২০০৫ সালে মুফতি আবদুল মালেকের তত্ত্বাবধানে মারকাযুদ দাওয়াহ আল ইসলামিয়া থেকে মাসিক পত্রিকা আলকাউসার প্রকাশিত হয়। এতে হাদিসশাস্ত্র নিয়ে বিভ্রান্তি দূর করার উদ্দেশ্যে তার লেখা নিবন্ধ এবং সমসাময়িক বিষয়াবলীর উপর গবেষণা প্রকাশিত হয়।
বায়তুল মোকাররমের সংকটময় সময়
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বায়তুল মোকাররমের তৎকালীন খতিব রুহুল আমিন আত্মগোপনে চলে যান। তখন থেকে ওয়ালিউর রহমান খান খতিবের দায়িত্ব পালন করছিলেন। কিন্তু রুহুল আমিন ফিরে এলে, ২০ সেপ্টেম্বর জুমার নামাজের সময় দুই পক্ষের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ধর্ম মন্ত্রণালয় ২ দিন পর রুহুল আমিনকে অপসারণ করে ওয়ালিউর রহমান খান-কে তার স্থলাভিষিক্ত করে।
উপসংহার
মুফতি আবদুল মালেকের দীর্ঘ গবেষণার পরিধি এবং ইসলামের বিভিন্ন শাখায় তার উচ্চতর ডিগ্রি তাকে একজন গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী ব্যক্তিত্বে পরিণত করেছে। আশা করা হচ্ছে তার নেতৃত্ব বায়তুল মোকাররমের ধর্মীয় কার্যক্রমকে সমৃদ্ধ করবে এবং ইসলামের সঠিক দিকনির্দেশনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
আপনার মতামত লিখুন :