বাংলাদেশ শুক্রবার, ১৩ জুন, ২০২৫, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

আলেম-মাশায়েখদের ইসলামিক সম্মেলনে ৯ দফার দাবিসমূহ

দৈনিক প্রথম সংবাদ ডেস্ক

প্রকাশিত: নভেম্বর ৬, ২০২৪, ১০:১৫ এএম

আলেম-মাশায়েখদের ইসলামিক সম্মেলনে ৯ দফার দাবিসমূহ

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইসলামিক সম্মেলন। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিশাল ইসলামিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে ওলামা-মাশায়েখরা ইসলামের সংরক্ষণে ৯ দফা দাবি ঘোষণা করেছেন। এই সম্মেলনে কওমি মাদ্রাসা, তাবলিগ জামাত এবং ইসলাম রক্ষায় বিশিষ্ট আলেম ও নেতারা বক্তব্য রাখেন। ৫ নভেম্বরের এই সম্মেলনে লাখো মানুষের জমায়েত হয়, যা সকাল ৯টায় শুরু হয়ে দুপুর ১টা ১৭ মিনিটে শেষ হয়।

সম্মেলনের মূল বক্তব্য ও দাবি

সম্মেলন থেকে আলেমরা সরকারের কাছে ৯ দফা দাবি তুলে ধরেন। তাদের দাবি ছিল:

১. কওমি শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার: দারুল উলুম দেওবন্দের নীতির আওতায় কওমি শিক্ষাকে পরিচালনা করা এবং তাবলিগ জামাতের ভেতরে থাকা বিভিন্ন গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্র বন্ধ করা।

২. ধর্মশিক্ষা বাধ্যতামূলক: সাধারণ শিক্ষাক্রমে ধর্মশিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করার দাবিও জানান তারা।

৩. আলেমদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার: অতীত সরকারের সময় থেকে আলেমদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়।

৪. শাপলা চত্বরে গণহত্যার বিচার: ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে ঘটে যাওয়া ঘটনায় অভিযুক্তদের দেশে ফিরিয়ে এনে কঠোর শাস্তি এবং সারা দেশে আলেমদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার।

৫. টঙ্গী ময়দানে হামলার বিচার: ২০১৮ সালে টঙ্গীতে সাদপন্থিদের করা আক্রমণের বিচার নিশ্চিত করা।

৬. মাওলানা সাদ কান্ধলভি নিষিদ্ধ: নবী করিম (সা.) এবং সাহাবীদের সমালোচনা করায় মাওলানা সাদকে দেশে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার দাবি জানানো হয়।

৭. বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন নিয়ন্ত্রণ: বিশ্ব ইজতেমার দুটি পর্বে কেবল আলেমপন্থীদের নেতৃত্বে আয়োজনের দাবি জানান।

৮. কাকরাইল মসজিদে সাদপন্থিদের নিষেধাজ্ঞা: কাকরাইল মসজিদে সাদপন্থিদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে না দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

৯. কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণা: কাদিয়ানিদের আনুষ্ঠানিকভাবে অমুসলিম হিসেবে ঘোষণা করার দাবি করা হয়।

সম্মেলনের পটভূমি ও প্রভাব

এই সম্মেলনে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা কওমি মাদ্রাসার শত শত আলেম যোগ দেন। ভোর থেকেই আলেম ও সাধারণ জনগণ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে উপস্থিত হতে থাকেন। যা ঢাকা শহরের বিভিন্ন সড়কে যানজটের সৃষ্টি করে। সম্মেলনে উপস্থিতদের মধ্যে ছিলেন প্রখ্যাত আলেম শাহ মোহাম্মদ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী, যিনি সম্মেলনের শেষভাগে মোনাজাত পরিচালনা করেন।

সাদপন্থি ও জুবায়েরপন্থি দ্বন্দ্ব

তাবলীগ জামাতের ভেতরে দীর্ঘদিন ধরে সাদপন্থি ও জুবায়েরপন্থি আলেমদের মধ্যে বিভেদ চলে আসছে। ২০১৯ সালে দ্বন্দ্ব প্রকট হয়ে ওঠে, যার ফলে বিশ্ব ইজতেমা দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হয়। চলতি সপ্তাহে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে উভয় পক্ষের সম্মেলনের ঘোষণা দেয়ায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরে সরকারের মধ্যস্থতায় সাদপন্থিরা তাদের কর্মসূচি স্থগিত করেন।

অন্যান্য বক্তাদের বক্তব্য

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ নেজামে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব আজিজুল হক ইজতেমা ঘিরে সাদপন্থিদের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করেন। এছাড়া হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব জুনায়েদ আল হাবিব বলেন, আলেমরাই জাতির পথপ্রদর্শক এবং তাবলিগের নেতৃত্বও আলেমদের হাতেই থাকা উচিত।

সম্মেলনের সুরক্ষা ব্যবস্থা

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানমুখী রাস্তাগুলো সকাল থেকেই ব্যারিকেড দিয়ে ঘিরে রাখে পুলিশ, এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা দিয়ে যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়। শাহবাগ, মৎস্য ভবন, প্রেস ক্লাব এবং আশেপাশের রাস্তায় এই সমাবেশের প্রভাবে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।

এদিন কাকরাইল মারকাজের ইমাম মুহাম্মাদ আযীমুদ্দীন বলেন, "সম্মানিত উলামায়ে কেরামের কোনো বক্তব্যে আমরা বিচলিত নই। আল্লাহর মেহেরবাণীতে আমরা আমাদের দাওয়াতের ময়দানে অবিচল থাকব।"

 

Link copied!

সর্বশেষ :