বাংলাদেশ শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা প্রধান পদে তুলসী গ্যাবার্ড, হিন্দু হলেও তিনি ভারতীয় বংশোদ্ভূত নন

দৈনিক প্রথম সংবাদ ডেস্ক

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৭, ২০২৪, ০৮:৫৪ এএম

যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা প্রধান পদে তুলসী গ্যাবার্ড, হিন্দু হলেও তিনি ভারতীয় বংশোদ্ভূত নন

তুলসী গ্যাবার্ড।

যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের আগেই প্রশাসনিক কাঠামো ঢেলে সাজানোর কাজ শুরু করেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত পদক্ষেপ হলো হাওয়াইয়ের ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সাবেক কংগ্রেস সদস্য তুলসী গ্যাবার্ডকে মার্কিন জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক (ডিরেক্টর অব ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স) পদে মনোনয়ন দেওয়া। এই পদে গ্যাবার্ডের নিয়োগ ঘিরে যেমন আলোচনার ঝড় উঠেছে, তেমনই বাংলাদেশসহ বিভিন্ন স্থানে তুলসীকে ‍‍`ভারতীয় বংশোদ্ভূত‍‍` দাবি করে প্রচারিত তথ্য নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।

তুলসী গ্যাবার্ডের পরিচয় ও জন্মবৃত্তান্ত

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা গেছে তুলসী গ্যাবার্ড ভারতীয় বংশোদ্ভূত নন। তার জন্ম ১৯৮১ সালে আমেরিকান সামোয়ার তুতুইলা দ্বীপে। তার বাবা মাইক গ্যাবার্ড একজন সামোয়ান-আমেরিকান রাজনীতিবিদ এবং মা ক্যারোল পোর্টার গ্যাবার্ড জার্মান ও ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত। তুলসীর মা হিন্দু ধর্মে ধর্মান্তরিত হন তার জন্মের আগে। তার পরিবার হাওয়াইয়ে চলে আসে যখন তুলসীর বয়স মাত্র দুই বছর। এছাড়াও তিনি কিছু সময় ফিলিপাইনেও কাটান।

তুলসীর ধর্মীয় পরিচয়

কিশোরী বয়সে তুলসী হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করেন এবং হিন্দু শাস্ত্র ভগবদগীতা অনুসরণ করেন। মূলত কংগ্রেস সদস্য হওয়ার পর গীতার উপর হাত রেখে শপথ নেওয়ার ঘটনাই তাকে আলোচনায় আনে। তবে তিনি নিজে বারবার নিশ্চিত করেছেন যে তিনি ভারতীয় বংশোদ্ভূত নন।

ডোনাল্ড ট্রাম্প এর মনোনয়ন ও পেছনের কারণ

তুলসী গ্যাবার্ডের নিয়োগের পেছনে তার নির্ভীক মনোভাব, সামরিক অভিজ্ঞতা এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলিতে অবদানের বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়েছেন ট্রাম্প।

সামরিক অভিজ্ঞতা: ২০ বছর ধরে আর্মি ন্যাশনাল গার্ডে কাজ করেছেন তুলসী গ্যাবার্ড। তিনি ইরাক এবং কুয়েতে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং কম্ব্যাট মেডিকেল ব্যাচ সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।

রাজনৈতিক পরিচিতি: তুলসী গ্যাবার্ড কংগ্রেসে প্রথম হিন্দু সদস্য হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

গ্যাবার্ডের রাজনৈতিক জীবন

তুলসী গ্যাবার্ডের রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় হাওয়াই রাজ্য পরিষদ থেকে। ডেমোক্র্যাটিক পার্টি থেকে তিনি চারবারের জন্য হাওয়াইয়ের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হন। তবে পরবর্তীতে ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে সংঘাতে লিপ্ত হন তিনি। দলের যুদ্ধনীতি এবং বর্ণ বৈষম্য নিয়ে তিনি সমালোচনা করেন। এরপর ২০২০ সালে দল ত্যাগ করেন এবং পরে রিপাবলিকান পার্টিতে যোগ দেন।

ট্রাম্পের সহযোগী হিসেবে আবির্ভাব

২০২২ সালে ট্রাম্পের সমর্থনে এগিয়ে আসেন তুলসী। ২০২৪ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রচারণায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন এবং ট্রাম্পের নেতৃত্বে ‍‍`শক্তির মাধ্যমে শান্তি‍‍` প্রতিষ্ঠার আদর্শে বিশ্বাসী হন।

মোদীর সঙ্গে তুলসীর সম্পর্ক

তুলসীর পরিচিতি ভারতে বেশ জনপ্রিয়। এর আগে ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ভগবদগীতা উপহার দিয়ে তিনি আলোচনায় আসেন। এছাড়াও ‍‍`হাউডি মোদী‍‍` অনুষ্ঠানে তার উপস্থিতি তাকে ভারতীয় গণমাধ্যমে বিশেষভাবে আলোচিত করে তোলে।

তুলসীকে ঘিরে প্রচলিত মিথ

তুলসীকে ‍‍`ভারতীয় বংশোদ্ভূত‍‍` দাবি করে প্রচারিত বিষয়টি মিথ্যা। টাইমস অব ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, এবং যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক হেভি ডট কমের প্রতিবেদনে নিশ্চিত করা হয়েছে, তার কোনো ভারতীয় বংশ পরিচয় নেই।

শেষ কথা

তুলসী গ্যাবার্ড ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পেয়েছেন। ভারতীয় বংশোদ্ভূত বলে প্রচারিত দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। তার সামরিক অভিজ্ঞতা এবং নির্ভীক নেতৃত্ব তাকে এই দায়িত্বে উপযুক্ত করে তুলেছে।

 

Link copied!

সর্বশেষ :