বাংলাদেশ রবিবার, ১৬ মার্চ, ২০২৫, ২ চৈত্র ১৪৩১

এবার চট্টগ্রামে শেখ পরিবারের ম্যুরাল ভাঙচুরের

দৈনিক প্রথম সংবাদ ডেস্ক

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২৫, ০২:২৬ পিএম

এবার চট্টগ্রামে  শেখ পরিবারের ম্যুরাল ভাঙচুরের

চট্টগ্রামে শেখ পরিবারের ম্যুরাল ভাঙচুরের ঘটনা দেশব্যাপী এক ধরনের উত্তেজনা ও রাজনৈতিক আলোচনার সৃষ্টি করেছে। ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে জামালখান মোড়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার পরিবারের সদস্যদের ছবি সংবলিত ম্যুরাল ভাঙচুর করেছে ছাত্র-জনতা। এটি একটি প্রতীকী প্রতিবাদ, যা দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং ছাত্রসমাজের মধ্যে বিদ্যমান ক্ষোভের প্রেক্ষাপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ঘটনায় ছাত্রদের ক্ষোভের মূল কারণ সরকার, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তাদের অসন্তোষ ও অভিযোগ প্রকাশ পাচ্ছে।

শেখ মুজিবুর রহমান, বাংলাদেশের স্বাধীনতার নেতা এবং জাতির পিতা, তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক বিশেষ স্থান অধিকার করেছেন। তাদের ছবি এবং ম্যুরালগুলো সাধারণত জাতির প্রতি শ্রদ্ধা এবং জাতির পিতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন হিসেবে স্থাপন করা হয়। তবে এই ম্যুরাল ভাঙচুরের ঘটনা, যা ছাত্র-জনতার অংশ থেকে ঘটেছে, পরিষ্কারভাবে সরকারের বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদ হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। ছাত্র-জনতার মুখে শোনা গেছে, "মুজিববাদ মুর্দাবাদ", "ফ্যাসিবাদ নিপাত যাক", এবং "আওয়ামী লীগের আস্তানা জ্বালিয়ে দাও" স্লোগানগুলি, যা তাদের ক্ষোভের প্রকাশ।

এই প্রতিবাদের মাধ্যমে ছাত্ররা যে বার্তা দিচ্ছে, তা হল—তারা মনে করছে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশে ফ্যাসিবাদ এবং আওয়ামী লীগের শাসন প্রাতিষ্ঠানিক আক্রমণের শিকার। তারা অভিযোগ করছে যে, শেখ হাসিনা ছাত্রসমাজের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন এবং এই শাসন ব্যবস্থার ফলে ছাত্রদের অধিকারের প্রতি অবহেলা করা হচ্ছে। এক ছাত্র নেতা মন্তব্য করেছেন, "শেখ হাসিনা মামার বাড়ি দিল্লি গিয়ে কী বক্তব্য রাখবেন ছাত্রসমাজের বিরুদ্ধে?" এটি তার ক্ষোভের চরম প্রকাশ, যা দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রতি একটি ইঙ্গিত।

এছাড়া, ছাত্ররা তাদের প্রতিবাদের মাধ্যমে মুজিববাদ এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, তারা চান দেশের রাজনৈতিক পরিবেশে এক ধরনের পরিবর্তন, যেখানে ছাত্রসমাজের অধিকার সুরক্ষিত থাকবে এবং সরকারের প্রতি জনগণের বিশ্বাস পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে। তাদের মতে, মুজিববাদ একটি ফ্যাসিবাদী প্রথা হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা দেশের রাজনৈতিক পরিবেশে স্বৈরাচারের মতো প্রভাব ফেলছে।

এই ঘটনা কেবল একটি রাজনৈতিক প্রতিবাদ নয়, বরং এটি দেশের আইনশৃঙ্খলা এবং সামাজিক শান্তির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে। ছাত্র-জনতার এই ধরনের সহিংস প্রতিবাদ দেশের স্থিতিশীলতা এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশের জন্য হুমকি হতে পারে। সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দ্রুত এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে, যাতে দেশব্যাপী সহিংসতা এবং উত্তেজনা ছড়িয়ে না পড়ে।

এমনকি, এই ধরনের ঘটনা বিদেশে বসবাসরত মানুষের দৃষ্টিতে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এটি দেশের ভাবমূর্তি এবং রাজনৈতিক পরিবেশের প্রতি নেতিবাচক বার্তা পাঠাতে পারে, যা আন্তর্জাতিক স্তরে বাংলাদেশের প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে পারে।

এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের উচিত হবে, আন্দোলনকারীদের দাবি এবং ক্ষোভের কারণগুলো সুষ্ঠুভাবে শোনার পাশাপাশি, শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে একটি সমাধানে পৌঁছানো। তবেই দেশজুড়ে একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা সম্ভব হবে, যেখানে রাজনৈতিক বিরোধিতা সহিংসতার দিকে পরিচালিত না হয়ে একটি গঠনমূলক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করবে।

Link copied!

সর্বশেষ :