গণ-অভ্যুত্থানের ছয় মাস পার হতে না হতেই দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি নিয়ে নতুন করে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়, যেখানে শতাধিক শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হন। সংঘর্ষের আগুন কেবল কুয়েটেই থেমে থাকেনি, বরং এর উত্তাপ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ও বুয়েটেও ছড়িয়ে পড়েছে।
কুয়েটের সংঘর্ষ ছাত্র রাজনীতি কি সংকটে?
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে—
- এক পক্ষ অন্য পক্ষের ওপর ইটপাটকেল ছুড়ছে।
- লাঠিসোঁটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালানো হচ্ছে।
- সংঘর্ষের সময় স্থানীয় ও রাজনৈতিক কর্মীদের জড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে।
এই ঘটনার পর কুয়েট প্রশাসন ক্যাম্পাসে সব ধরনের ছাত্র রাজনীতি বন্ধের ঘোষণা দেয়। কিন্তু ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করলেই কি সংঘর্ষের সমাধান হবে? এই প্রশ্ন এখন দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
ছাত্র রাজনীতি সংঘর্ষের কারণ নাকি সমাধান?
একের পর এক সংঘর্ষের ঘটনায় ছাত্র রাজনীতি নিয়ে বিতর্ক আরও গভীর হচ্ছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, কুয়েটে ছাত্র রাজনীতি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হোক এবং হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
অন্যদিকে, ছাত্রদল বলছে—
“বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে ব্যবহার করে কিছু গোপন সংগঠন ক্যাম্পাসে অরাজকতা সৃষ্টি করছে।”
এই বিতর্কের মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো—
- ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ হলে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের সুযোগ কি কমে যাবে?
- নাকি ছাত্র রাজনীতি এখন শুধুই সহিংসতার উৎস?

ছাত্র রাজনীতি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কতটা নিরপেক্ষ?
সম্প্রতি কুয়েটে ছাত্রদলের হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুধু কুয়েট নয়, দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও রাজনীতির প্রভাব ব্যাপকভাবে বিদ্যমান। বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্যাম্পাসের রাজনৈতিক অস্থিরতার পেছনে মূলত প্রশাসনের দলীয়করণ ও পক্ষপাতমূলক সিদ্ধান্ত দায়ী।
উদাহরণস্বরূপ, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সম্প্রতি হল ও একাডেমিক ভবনের নাম পরিবর্তন করেছে, যা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা চলছে। কেন মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের নাম মুছে ফেলা হলো? এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ কেমন হবে, তা নির্ধারণে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক—দু’পক্ষকেই সমানভাবে ভূমিকা রাখতে হবে। কিন্তু যদি প্রশাসনই পক্ষপাতমূলক আচরণ করে, তাহলে ছাত্র রাজনীতি কি শুধুই বাহ্যিক সংকট, নাকি গভীর কোনো সমস্যার বহিঃপ্রকাশ?
ছাত্র রাজনীতি কি আদৌ প্রয়োজনীয়?
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ছাত্র রাজনীতি বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
- ভাষা আন্দোলন (১৯৫২)
- স্বাধীনতা সংগ্রাম (১৯৭১)
- স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন (১৯৯০)
এগুলোতে ছাত্র রাজনীতির ভূমিকা ছিল অপরিহার্য। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেকেই মনে করছেন, ছাত্র রাজনীতি এখন আর শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের জন্য নয়, বরং দলীয় স্বার্থ হাসিলের মাধ্যম হয়ে উঠেছে।
অন্যদিকে অনেক শিক্ষার্থী মনে করেন—
ছাত্র রাজনীতি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের ন্যায্য অধিকার নিয়ে কথা বলার সুযোগ হারাবে।
এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে, ছাত্র রাজনীতি কি সংস্কারের প্রয়োজন, নাকি একেবারে নিষিদ্ধ করা উচিত?
আপনার মতামত দিন!
আপনি কি মনে করেন, ছাত্র রাজনীতি থাকা উচিত? নাকি এটি নিষিদ্ধ করা দরকার?
আপনার মতামত লিখুন :