বাংলাদেশ রবিবার, ১৬ মার্চ, ২০২৫, ২ চৈত্র ১৪৩১

শত্রু একসময় ছিল একদিকের, এখন চারদিক থেকে ঘিরে ধরেছে – কীভাবে সামলাবেন?

দৈনিক প্রথম সংবাদ ডেস্ক

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৫, ০৮:৪৮ পিএম

শত্রু একসময় ছিল একদিকের, এখন চারদিক থেকে ঘিরে ধরেছে – কীভাবে সামলাবেন?

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীরা নতুন রাজনৈতিক দল করতে যাচ্ছে। দুজন উপদেষ্টার ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে ধারণা করা যায়, উপদেষ্টা পরিষদ থেকে পদত্যাগ করে আপনারা দলে যোগ দিতে যাচ্ছেন...

নাহিদ ইসলাম: উপদেষ্টা পরিষদ থেকে পদত্যাগের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আমরা এখনো নিইনি। হয়তো আরেকটু সময় লাগবে। আমরা একটু বোঝার চেষ্টা করছি কোথায় আমাদের ভূমিকাটা সবচেয়ে বেশি হবে— সরকারের ভেতরে নাকি বাইরে, মাঠে। শিক্ষার্থীরা অভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছেন, এই সময়ে বা সামনের দিনগুলোর জন্য তাঁদের সংহত ও ঐক্যবদ্ধ করা প্রয়োজন।

৫ আগস্টের পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নিজেদের ব্যানারে সক্রিয় হয়েছে। তাদের কর্মীরা নিজ নিজ ব্যানারে চলে গেছেন। কিন্তু যাঁদের কোনো দল নেই, তাঁদের মধ্যেও একধরনের রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা আছে। নেতৃত্ব বা রাষ্ট্র গঠনে তাঁরাও ভূমিকা রাখতে চান। এই শক্তিটাকে সংহত করার জন্য একটা রাজনৈতিক দলের প্রয়োজনীয়তা তৈরি হয়েছে। গত আগস্ট-সেপ্টেম্বর থেকেই এ ধরনের একটা আলাপ ছিল। সেই সময় আমরা ভেবেছি রাজনৈতিক দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে সরকারকে সংহত করা প্রয়োজন।

আমরা গণ-অভ্যুত্থানের প্রতিনিধি হিসেবে সরকারে এসেছি। আমাদের কিছু অঙ্গীকার আছে। সেটা বাস্তবায়ন করে সরকার ছাড়ার পরিকল্পনা ছিল আমাদের। সেই বিষয়টা এখন পুনর্বিবেচনা করতে হচ্ছে।

প্রথম আলো:

নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাম্প্রতিক একটি বক্তব্য নিয়ে আলোচনা তৈরি হয়েছে। আপনি নিজেও ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বলেছেন, মির্জা ফখরুলের দাবির মধ্যে আরেকটি এক-এগারোর ইঙ্গিত দেখেন। এক-এগারোর সরকারের সময় বিএনপির অভিজ্ঞতা তো সুখকর নয়। তাহলে আপনার কেন মনে হলো, বিএনপির মহাসচিবের বক্তব্যে এক-এগারোর ইঙ্গিত আছে?

নাহিদ ইসলাম: বিএনপির মহাসচিব যে অর্থে নিরপেক্ষ সরকারের কথা বলছেন...। এই সরকার তো যথেষ্ট নিরপেক্ষ। সরকার বিএনপির সঙ্গে একধরনের আলোচনার মধ্য দিয়েই বড় সিদ্ধান্তগুলো নিচ্ছে। রাষ্ট্রপতিকে পরিবর্তনের বিষয়ে ছাত্ররা দাবি জানালেও বিএনপির পক্ষ থেকে যেহেতু সমর্থন ছিল না, ঐকমত্য ছাড়া সরকার এ বিষয়ে এগোয়নি।

আমরা এটাও বলেছি, রাজনৈতিক কার্যক্রমে অংশ নিলে আমরা সরকার থেকে বের হয়ে গিয়েই করব। কিন্তু যেভাবে নিরপেক্ষতার কথা বলা হচ্ছে, তাতে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে সরিয়ে আরেকটা সরকারের পরিকল্পনা বিএনপির আছে কি না বা বিএনপি এটা চায় কি না, সেই প্রশ্ন আসছে। যদি চেয়ে থাকে, সেটা একটা এক-এগারো টাইপের সরকার হবে। আগেরবারের ভুক্তভোগী ছিল বিএনপি। পরে তো আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিলে ওই সরকার (এক-এগারোর) আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসিয়ে দিয়ে গেছে। সে ধরনের কোনো পরিকল্পনা আছে কি না, সেই জায়গা থেকে আমি কথাটা বলেছি। আগেরবারের ভুক্তভোগী হলেও এবারের সুবিধাভোগী তারা (বিএনপি) হতে পারে একটা ‘এক-এগারো’ ধরনের সরকার করলে।

অবশ্য বিএনপির মহাসচিব খুব ইনটেনশনালি (উদ্দেশ্যমূলক) এটা বলেছেন বলেও আমি মনে করি না।

প্রথম আলো:

জুলাই আন্দোলনের সম্মুখসারিতে একটা উল্লেখযোগ্য অংশ ছিল নারীরা। কিন্তু আন্দোলনের পর সংস্কার কিংবা পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা—সব জায়গা থেকে তারা কেন ধীরে ধীরে হারিয়ে গেল? সরকারের কি এখানে কিছু করার নেই?

নাহিদ ইসলাম: এ ক্ষেত্রে আমাদের সমাজের একটা বাস্তবতা আছে। তখন জাতি নারীদের অংশগ্রহণকে সেলিব্রেট (স্বাগত) করেছে। কিন্তু রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণের বিষয়টি মানুষ এখনো ওইভাবে সেলিব্রেট করে না। আপনি দেখবেন, আমাদের যাঁরা নারী আন্দোলনকারী বা সমন্বয়ক আছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁরা কিন্তু নানা ধরনের ‘বুলিংয়ের’ শিকার হচ্ছেন।

আমাদের রাজনীতিতে পেশিশক্তির ব্যবহার, মারামারি-হানাহানির সংস্কৃতি আছে, যেটা এখনো যায়নি। সেই জায়গা থেকে পরিবারগুলোর শঙ্কা থাকে। সমাজ তাঁদের নানাভাবে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। সেই জায়গা থেকে নারীদের বড় অংশ ঘরে ফিরে গেছে। তারপরও আমি মনে করি তাদের মধ্যে এখনো সেই বিপ্লবী চেতনাটা আছে। তাঁরা আমাদের সঙ্গে নানাভাবে অংশগ্রহণ করতে চায়, যুক্ত থাকতে চায়। আমরাও বিভিন্নভাবে উদ্যোগ নেওয়ার চেষ্টা করছি। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস নিজেই একটা কর্মসূচি করেছেন জুলাই কন্যাদের নিয়ে, যে নারী শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও জেলায় আন্দোলনে ছিলেন।

বিদেশে বিভিন্ন লিডারশিপ ও ট্রেনিং প্রোগ্রামে আমরা নারীদের পাঠাচ্ছি। আমরা এমন নানা উদ্যোগ নিচ্ছি। নারীদের রাজনীতি বা নেতৃত্বে আরও বেশি অংশগ্রহণের জন্য আসলে সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরিবর্তনটা দরকার।


 

Link copied!

সর্বশেষ :