বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন মাত্রা যোগ করতে মিয়া মশিউজ্জামান ও ফারুক হাসান নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদ তাদের নাম পরিবর্তন করে ‘আমজনতার দল’ নামে আত্মপ্রকাশ করেছে। নতুন দলটি সার্বভৌমত্ব, স্বনির্ভরতা ও সুশাসনকে মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করে, স্বনির্ভর অর্থনীতি ও সুশাসনে সমৃদ্ধির স্লোগানকে সামনে রেখে এগিয়ে যাবে বলে ঘোষণা দিয়েছে।
মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) ঢাকার পুরানা পল্টনে প্রীতম জামান টাওয়ারে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই পরিবর্তনের ঘোষণা দেন দলের আহ্বায়ক মিয়া মশিউজ্জামান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হাসান এবং দলের অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
গণঅধিকার পরিষদের বিভক্তি ও নতুন দিকনির্দেশনা
২০২১ সালের ২৬ অক্টোবর রেজা কিবরিয়া ও নুরুল হক নুর নেতৃত্বে গণঅধিকার পরিষদ আত্মপ্রকাশ করেছিল। তবে নানা অভ্যন্তরীণ মতপার্থক্য ও নেতৃত্বের দ্বন্দ্বের কারণে ২০২৩ সালে দলটি দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়।
- একপক্ষের নেতৃত্বে ছিলেন নুরুল হক নুর ও রাশেদ খান, যারা নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধন পেয়েছেন।
- অপরপক্ষের নেতৃত্বে ছিলেন মিয়া মশিউজ্জামান ও ফারুক হাসান, যারা নতুনভাবে সংগঠিত হয়ে ‘আমজনতার দল’ নামে রাজনৈতিক মঞ্চে আত্মপ্রকাশ করেছেন।
২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক পদ থেকে রেজা কিবরিয়া সরে দাঁড়ানোর পর থেকেই দুই পক্ষের বিভাজন আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
‘আমজনতার দল’ নামকরণ ও পিনাকীর ভূমিকা
দলটির নামকরণ প্রসঙ্গে দলের অন্যতম নেতা তারেক রহমান বলেন, "পিনাকী দাদা সকল দলের সম্পদ। আমি মনে করি, তিনি যেভাবে চলছেন, ঠিক সেভাবেই সব দলকে গাইড করা উচিত।"
তিনি আরও বলেন, "আমরা দলের নতুন নামের জন্য সবার মতামত চেয়েছিলাম। পরে ভোটাভুটির মাধ্যমে পিনাকী দাদার পছন্দ করা নাম ‘আমজনতার দল’কে কোনোরকম পরিবর্তন ছাড়াই চূড়ান্ত করা হয়।"
নতুন নামটি গণমানুষের কথা চিন্তা করে, সাধারণ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে নির্বাচন করা হয়েছে বলে জানান দলটির নেতারা।
‘আমজনতার দল’-এর মূলনীতি ও রাজনৈতিক অঙ্গীকার
নতুন দলের মূলনীতি হবে:
✅ সার্বভৌমত্ব রক্ষা – দেশের স্বার্থ সুরক্ষিত রাখতে সব ধরনের আগ্রাসনবিরোধী লড়াইকে শক্তিশালী করা।
✅ স্বনির্ভরতা নিশ্চিত করা – বাংলাদেশের অর্থনীতিকে পরনির্ভরশীলতার বাইরে নিয়ে গিয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা।
✅ সুশাসন প্রতিষ্ঠা – দুর্নীতিমুক্ত, জবাবদিহিতামূলক ও গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
দলটির নেতারা জানিয়েছেন, তারা বাংলাদেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও জনগণের ন্যায়সঙ্গত অধিকার আদায়ে সোচ্চার ভূমিকা পালন করবেন।
নতুন দলের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ‘আমজনতার দল’ শিগগিরই একটি জাতীয় কাউন্সিলের আয়োজন করবে, যেখানে দলের গঠনতন্ত্র, কর্মসূচি ও ভবিষ্যৎ রূপরেখা চূড়ান্ত করা হবে। দলটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা, গণআন্দোলনে সক্রিয় থাকা এবং রাজনৈতিক সংস্কার আনতে ভূমিকা রাখার পরিকল্পনা করছে।
দলের নেতারা বলেছেন, তারা তৃণমূল পর্যায়ে দলকে শক্তিশালী করতে দেশব্যাপী সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করবেন এবং সাধারণ জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবেন।
সমাপ্তি
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে নতুন মাত্রা যোগ করতে ‘আমজনতার দল’ আত্মপ্রকাশ করেছে সার্বভৌমত্ব, স্বনির্ভরতা ও সুশাসনকে ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করে। আগ্রাসনবিরোধী লড়াইকে সুসংহত করার অঙ্গীকার নিয়ে দলটি জনগণের জন্য কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। নতুন নাম ও নতুন দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে দলটি ভবিষ্যতে কীভাবে নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থান প্রতিষ্ঠা করতে পারে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
আপনার মতামত লিখুন :