বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ বিষয়ে ভারতের রাজ্যসভায় কথা বলেছেন দেশটির পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কীর্তি বর্ধন সিং। তিনি জানিয়েছেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য বাংলাদেশ সরকার শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের আবেদন জানালেও ভারত সরকার তাতে সাড়া দেয়নি।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) ভারতের রাজ্যসভায় এক আইনপ্রণেতার প্রশ্নের জবাবে কীর্তি বর্ধন সিং বলেন, "বাংলাদেশ সরকার শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ করেছিল। তবে ভারত সরকার সেই অনুরোধে কোনো ইতিবাচক সাড়া দেয়নি।"
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র ও সাধারণ জনগণের গণ-অভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের পতন হয়। এরপর ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছাড়তে বাধ্য হন এবং ভারতে আশ্রয় নেন।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে ২৩ ডিসেম্বর ভারত সরকারকে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক চিঠি পাঠায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। চিঠিতে তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানানো হয়। তবে এই অনুরোধের বিষয়ে ভারত সরকার তখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
গত মাসের শুরুর দিকে পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা এম তৌহিদ হোসেন বলেন, "আমরা এখনো নয়াদিল্লির কাছ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক জবাব পাইনি। তবে আমরা এ বিষয়ে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি।"
গত ৫ ফেব্রুয়ারি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানিয়েছেন, "অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।"
তিনি আরও বলেন, "আমরা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারাধীন মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ থাকা ব্যক্তিদের দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি।"
জুলাই-আগস্ট গণ-আন্দোলনের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনাসহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও জানান, "সরকার ইতোমধ্যে ১০০ জনেরও বেশি অভিযুক্তকে গ্রেফতারের বিষয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। দেশের প্রচলিত আইন ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায় অনুযায়ী ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে।"
ভারতের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধের পরও ভারত শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না নেওয়ার পেছনে কূটনৈতিক হিসাব-নিকাশ কাজ করছে। ভারতের জন্য বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অংশীদার, তাই বিষয়টি স্পর্শকাতর হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই পরিস্থিতি বাংলাদেশ ও ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে। ভারত সরকার এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আরও আলোচনার প্রয়োজন হতে পারে।
এই প্রসঙ্গে ভারতীয় এক কর্মকর্তা বলেন, "বাংলাদেশের অনুরোধ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে। তবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে পারস্পরিক সম্পর্ক ও কূটনৈতিক স্বার্থকে গুরুত্ব দেওয়া হবে।"
শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ প্রশ্নে ভারতের অবস্থান এখনো স্পষ্ট নয়। তবে বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে উঠেছে। শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে কি না, সেটি নির্ভর করছে ভারত সরকারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের ওপর।
আপনার মতামত লিখুন :