সম্প্রতি মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু পাঁচ দিনের সফরে ভারত এসে রাজধানী দিল্লিতে অবস্থান করছেন। মূলত দীর্ঘদিনের সম্পর্কের টানাপোড়েনের ইতি টানতেই প্রেসিডেন্ট মুইজ্জুর এই সফর। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও গভীর করতে এবং মালদ্বীপের বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট নিরসনে এই সফর অন্তত গুরুত্বপূর্ণ। সফরকালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর ভারত সরকার মালদ্বীপকে ৪০ কোটি ডলারের আর্থিক সহযোগিতা প্রদানের ঘোষণা দেয়।
সম্পর্কের টানাপোড়েনের সূচনা
মুইজ্জুর দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই মালদ্বীপ-ভারত সম্পর্কে কিছুটা টানাপোড়েন এসেছিল। এর আগে দ্বীপ রাষ্ট্রটির ওপর ভারতের প্রভাব কমানোর উদ্দেশ্যে মুইজ্জু তার নির্বাচনি প্রচারনায় ঢালাও ভাবে প্রচার করেছিল ‘ভারত হটাও’ নীতি। মূলত চীনপন্থী মালদ্বীপ চেয়েছিল ভারতকে ডিঙ্গিয়ে চীনের সঙ্গে সক্ষতা বাড়াতে। তবে ক্ষমতায় আসার পর মুইজ্জু চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর চেষ্টা করলেও তেমন একটা ফলপ্রসূ হয় নি।
অর্থনৈতিক সংকট ও ভারতের সহযোগিতা
বর্তমানে মালদ্বীপ ভয়াবহ আর্থিক সংকটের মুখোমুখি হয়েছে। তাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে গিয়ে ৪৪ কোটি মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে যা দিয়ে মাত্র দেড় মাসের আমদানির খরচ মেটানো সম্ভব। এই সংকটের সময়ে ভারত সরকারের ৪০ কোটি ডলারের আর্থিক সহযোগিতা মালদ্বীপের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হচ্ছে।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং প্রেসিডেন্ট মুইজ্জু দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন। ভারত সরকার মালদ্বীপের চলমান অর্থনৈতিক সমস্যাগুলো সমাধানে ৩০০০ কোটি টাকার মুদ্রা বিনিময় চুক্তির কথাও ঘোষণা করেছে। এছাড়া স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া মালদ্বীপের ট্রেজারি বিলের জন্য ১০০ মিলিয়ন ডলার রোলওভার করেছে।
প্রতিরক্ষা এবং নিরাপত্তা সহযোগিতা
এছাড়া দুই দেশের মধ্যে সমুদ্র নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়েও আলোচনা হয়। ভারত মালদ্বীপের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে বেশ কিছু প্রকল্পে সহায়তা করছে, যার মধ্যে রয়েছে ‘একাথা’ পোতাশ্রয় প্রকল্প যা মালদ্বীপের ন্যাশনাল ডিফেন্স ফোর্সকে শক্তিশালী করবে।
পর্যটন খাতে সহযোগিতা
ভারতের পর্যটকরা মালদ্বীপের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান ভিত্তি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ভারতীয় পর্যটকদের মধ্যে মালদ্বীপ বয়কটের ডাক ওঠায় মালদ্বীপের পর্যটন খাতে ব্যাপক ধাক্কা লাগে। মুইজ্জু তার ভারত সফরে এই বিষয়টির ওপর বিশেষ ভাবে গুরুত্ব আরোপ করেন এবং আরও বেশি বেশি ভারতীয় পর্যটককে স্বাগত জানানোর আহ্বান জানান।
ভারত ও মালদ্বীপের মধ্যে বিভিন্ন সময় টানাপোড়েন থাকলেও মুইজ্জুর এই সফর দুই দেশের সম্পর্কের নতুন এক ধাপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে এই সফরকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :