ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন লেবাননের শিয়াপন্থী রাজনৈতিক দল ও সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরুল্লাহকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল গত সপ্তাহের শুরুর দিকেই।
গত শুক্রবার রাতে ইসরায়েলের হামলায় নিহত হয়েছেন হিজবুল্লাহ সংগঠনটির প্রধান হাসান নাসরুল্লাহ। তিনি গত তিন দশকের বেশি সময় ধরে নেতৃত্ব দিচ্ছেন হিজবুল্লাহর।
সংবাদমাধ্যম দ্য নিউইয়র্ক টাইমস এর তথ্যমতে, কয়েক মাস ধরেই তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার গতিবিধি অনুসরণ করছিল ইসরায়েলি গোয়েন্দারা। তাঁর অবস্থান নিশ্চিত করেই হামলা করে ইসরায়েল। শুক্রবার রাতে নাসরুল্লাহকে হত্যা করতে মুহুর্তের মধ্যে ৮০টির বেশি বোমা ফেলা হয়।
তবে হিজবুল্লাহর রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে মুখ্য ভূমিকায় থাকেন নাসরুল্লাহর চাচাতো ভাই হাশেম সাফিয়েদ্দিন। তাঁকেই নাসরুল্লাহর পরবর্তী উত্তরসূরি বলে মনে করা হয়। সৌভাগ্যক্রমে শুক্রবার হামলার সময় তিনি নাসরুল্লাহর সঙ্গে ছিলেন না।
নাসরুল্লাহ অনেক বছর ধরেই সরাসরি জনসমক্ষে আসেন না। তবে অনুসারীদের বার্তা দিতেন বিভিন্ন সময়ে টিভিতে দেওয়া ভাষণে মাধ্যমে। হিজবুল্লাহকে মধ্যপ্রাচ্যের জন্য হুমকি স্বরূপ দাবী করতেন এবং ইসরায়েলকে হুঁশিয়ারি দিতেন।
ইসরায়েল–হিজবুল্লাহর এ দ্বন্দ্ব নতুন কিছু নয়, ২০০৬ সালে যুদ্ধে জড়িয়েছিল তারা। এমনকি গত বছর গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর হামাসের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ইসরায়েলে হামলা করে সংগঠনটি। বসে থাকে নি ইসরায়েলও, তারাও দুই সপ্তাহ ধরে পাল্টা হামলা করে।
শুক্রবার রাতে হিজবুল্লাহপ্রধান হাসান নাসরুল্লাহসহ অন্য নেতাদের লক্ষ্য করে রাজধানী বৈরুতসহ লেবাননের বিভিন্ন অঞ্চলে হামলা চালায় ইসরায়েল। হামলায় নিহত হন নাসরুল্লাহ। তবে তার মৃত্যু নিয়ে শুরুতে মুখ খোলেনি হিজবুল্লাহ। পরবর্তীতে শনিবার এক বিবৃতিতে নাসরুল্লাহর মৃত্যুর বিষয়টি তারা নিশ্চিত করে।
লেবাননে হিজবুল্লাহকে লক্ষ্য করে হামলা শুরু হয় ১৭ ও ১৮ সেপ্টেম্বর। দুই দিনে হিজবুল্লাহর হাজার হাজার পেজার ও ওয়াকিটকি বিস্ফোরণ ঘটায় ইজরায়েল। সীমান্ত বর্তী লেবানন অংশে হিজবুল্লাহকে লক্ষ্য করে হামলা চালালেও নিহত হয়েছে বহু বেসামরিক লোকজন।
গত কয়েক দিনের হামলায় লেবাননে মৃত্যু হয়েছে নারী, শিশুসহ ৭০০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু। এছাড়াও ১ হাজার ৮০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। এ হামলায় ১ লাখ ১৮ হাজারের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, ২০০৬ সালের যুদ্ধের পর সবচেয়ে ভয়াবহ ছিল শুক্রবারের দক্ষিণ বৈরুতের এই হামলা।
এ হামলা নিয়ে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী প্রধান হুঙ্কার ছেড়ে বলেন, " যে-ই ইসরায়েলের নাগরিকদের হুমকি দেবে, আমরা জানি, তাদের কাছে কীভাবে পৌঁছাতে হয়"। এদিকে নাসরুল্লাহ নিহত হওয়ার পর হিজবুল্লাহও জানিয়েছে, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তাদের যুদ্ধ চলবে।
নাসরুল্লাহকে হত্যার এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে হামাস, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। এ ঘটনাকে `কাপুরুষতা` বলেও আখ্যায়িত করেন তারা। এছাড়াও এই হত্যাকাণ্ড হিজবুল্লাহর শক্তি বাড়িয়ে দেবে বলে তারা ধারনা করেন।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সাফাই গেয়েছেন ইসরায়েলের পক্ষে। ইসরায়েলকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে হিজবুল্লাহ, হামাস ও হুতির মতো ইরানপন্থী শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে আত্মরক্ষায় ওয়াশিংটন সর্বাত্মক সমর্থন করবে।
আপনার মতামত লিখুন :