বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সুইজারল্যান্ডের ডাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সম্মেলনে একদিনে ১৩টিরও বেশি বৈঠক সম্পন্ন করেছেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) ড. ইউনূস এসব বৈঠক করেছেন।
এই বৈঠকগুলোতে চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি, বিনিয়োগ আকর্ষণ, এবং দেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়। ড. ইউনূস তার বক্তব্য ও বৈঠকগুলোতে বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্ভাবনা ও আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্বের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
চট্টগ্রাম বন্দর: আঞ্চলিক বাণিজ্যের নতুন সম্ভাবনা
প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, ড. ইউনূস চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি নিয়ে গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। বৈঠকে তিনি বলেন, “চট্টগ্রাম বন্দর কার্যক্ষম হলে এটি শুধু বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য নয়, বরং নেপাল, ভুটান, এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের মতো প্রতিবেশী অঞ্চলের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ হবে।”
বন্দর উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা চলাকালীন তিনি বিনিয়োগকারীদের আমন্ত্রণ জানান এবং বন্দর ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ ও আঞ্চলিক সংযোগ জোরদার করার পরিকল্পনা তুলে ধরেন। চট্টগ্রাম বন্দর কার্যক্ষম হলে এটি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে।
ডিজিটাল নিরাপত্তায় অগ্রগতি: মেটার সাথে বৈঠক
ড. ইউনূস মেটার (Meta) শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে বাংলাদেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে আলোচনা হয়। তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন, ফেসবুকের ফ্যাক্ট চেকিং কার্যক্রম চালু রাখা হবে এবং দেশজুড়ে অপতথ্য রোধে মেটা কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।
প্রেস সচিব জানান, “মেটা বাংলাদেশের ডিজিটাল ইকোসিস্টেমের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এবং অপতথ্যের ঝুঁকি হ্রাসে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।” এ উদ্যোগ বাংলাদেশের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর সঠিক ব্যবহারে সহায়তা করবে।
ডাভোসে বৈশ্বিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনা
ড. ইউনূস ২০ জানুয়ারি সুইজারল্যান্ডের ডাভোসে চার দিনের সফরে গিয়েছেন। সেখানে তিনি ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করছেন। এ বৈঠকগুলোতে তিনি বাংলাদেশের অগ্রগতির গল্প এবং বিনিয়োগের সম্ভাবনাগুলো তুলে ধরছেন।
ডাভোস সফরের সময় ড. ইউনূস উন্নয়নশীল দেশের একটি মডেল হিসেবে বাংলাদেশের সাফল্য এবং উন্নয়নমূলক উদ্যোগগুলো নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি আরও উল্লেখ করেন, “বাংলাদেশ কেবল নিজস্ব উন্নয়নেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি আঞ্চলিক উন্নয়ন ও সহযোগিতার একটি কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হতে পারে।
সফরের গুরুত্ব ও প্রভাব
ড. ইউনূসের ডাভোস সফর বাংলাদেশের জন্য কৌশলগত দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তার বৈঠকগুলোতে চট্টগ্রাম বন্দর আধুনিকীকরণের পরিকল্পনা এবং বিনিয়োগ আকর্ষণের সম্ভাবনা যেমন তুলে ধরা হয়েছে, তেমনই বাংলাদেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতার দিকেও বিশেষ মনোযোগ দেওয়া হয়েছে।
এ সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার অবস্থান আরও শক্তিশালী করবে। চট্টগ্রাম বন্দর আঞ্চলিক বাণিজ্যের হাব হয়ে ওঠার সম্ভাবনা তৈরি করছে, যা দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
ড. ইউনূস আগামী ২৫ জানুয়ারি দেশে ফিরবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তার এই সফর বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিকভাবে আরও দৃঢ় অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত করতে সহায়ক হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
আপনার মতামত লিখুন :