নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ, অবনতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি এবং স্বচ্ছ নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে দেশব্যাপী আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়ে এই কর্মসূচি ১০ দিনব্যাপী চলবে এবং দেশের ৬৪ জেলায় জনসভা অনুষ্ঠিত হবে।
শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই কর্মসূচির ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে আনতে হবে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি রোধ করতে হবে এবং অবিলম্বে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে। এসব দাবি আদায়ের জন্য বিএনপি ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাবে।’
তিনি আরও জানান, ‘দেশে ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান, মানুষের মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে আনা এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে এই কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। বিএনপি বিশ্বাস করে, জনগণের শক্তির মাধ্যমেই এই সরকারকে জবাবদিহির আওতায় আনা সম্ভব।’
বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়ে রমজানের পূর্ব পর্যন্ত জেলা ও মহানগর পর্যায়ে ধারাবাহিকভাবে সভা-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এই কর্মসূচির মাধ্যমে দলটি দেশজুড়ে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের চিত্র তুলে ধরবে এবং সরকারের ব্যর্থতা জনগণের সামনে উন্মোচন করবে।
নেতৃবৃন্দ জানান, প্রতিটি জনসভায় দলের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন এবং সরকারের নীতির বিরুদ্ধে কঠোর বক্তব্য তুলে ধরা হবে। এছাড়া, কর্মসূচি চলাকালে বিভিন্ন গণসংযোগ কার্যক্রম পরিচালনার পরিকল্পনাও রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে রিজভী আরও বলেন, ‘বর্তমান সরকার জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে একদলীয় শাসন কায়েম করেছে। দেশের অর্থনৈতিক সংকট, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। অথচ সরকার ব্যর্থতার দায় স্বীকার না করে জনগণের কণ্ঠরোধ করতে দমন-পীড়নের পথ বেছে নিয়েছে।’
তিনি আরও অভিযোগ করেন, ‘পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে রেখেছে। যারা ৫ আগস্টের পরিবর্তনকে মেনে নিতে পারেনি, তাদের চিহ্নিত করতে না পারলে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে সফল হওয়া কঠিন হবে।’
বিএনপির নেতৃবৃন্দ ইঙ্গিত দিয়েছেন, এই কর্মসূচি সফল হলে ভবিষ্যতে আরও কঠোর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হতে পারে। দলে অভ্যন্তরীণ প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছে এবং দলীয় নেতাকর্মীদের মাঠে সক্রিয় থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই আন্দোলন বিএনপির জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ হতে পারে, যা রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে। তবে এই কর্মসূচির মাধ্যমে দলটি কতটা জনসমর্থন অর্জন করতে পারবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
বিএনপির ঘোষিত কর্মসূচির ফলে রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কোনো ধরণের বিশৃঙ্খলা রোধে কঠোর নজরদারি বজায় রাখা হবে। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ বলছে, বিএনপির কর্মসূচি জনস্বার্থবিরোধী এবং তারা এটিকে অস্থিতিশীলতা তৈরির ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে
আপনার মতামত লিখুন :