বাংলাদেশ রবিবার, ১৬ মার্চ, ২০২৫, ২ চৈত্র ১৪৩১

২৪ ঘণ্টার মধ্যে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি উত্তপ্ত পরিস্থিতি

দৈনিক প্রথম সংবাদ ডেস্ক

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৫, ০৪:১৪ পিএম

২৪ ঘণ্টার মধ্যে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি উত্তপ্ত পরিস্থিতি

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি আবার আলোচনায়: ছবি সংগৃহীত

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি নতুন করে আলোচনায় এসেছে। ছয় মাস ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন এবং আন্দোলনের পক্ষ থেকে দলটির নিবন্ধন বাতিলের দাবি তোলা হচ্ছে। এবার এই দাবি জোরালোভাবে সামনে এনেছে জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

গতকাল জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী এক আলোচনা সভায় বলেন, "নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল না করলে বাংলাদেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়া হবে।"

এই দাবির পক্ষে আরও সোচ্চার হয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসউদ। তিনি বলেছেন, "আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হওয়া ও খুনিদের বিচারের আগপর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়ব না।"

কেন এই দাবি উঠছে?

গত কয়েক মাসে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ এনে দলটিকে নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কারণ হলো:

  • জুলাই অভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগের ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক
  • ৫ ফেব্রুয়ারি শেখ হাসিনার ভাষণের পর আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িতে হামলার ঘটনা
  • গাজীপুরে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা এবং তার জেরে এক তরুণের মৃত্যু
  • বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবি, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হয়েছে

বিগত কয়েক মাসে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড এবং আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে।

জাতীয় নাগরিক কমিটির বক্তব্য

জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, "খুনের দায়ে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল করা উচিত। জনগণের দাবি অনুযায়ী অন্তর্বর্তী সরকারকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।"

তিনি আরও বলেন, "যদি এই সমস্যা সমাধান না করা হয়, তাহলে বাংলাদেশকে একটি গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়া হবে।"

জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেছেন, "আমরা চাই আওয়ামী লীগের কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ হোক। তাদের রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই।"

সরকারের প্রতিক্রিয়া

সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবির বিষয়ে বিবৃতি আসছে।

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, "সরকার আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিষয়ে শিগগিরই সিদ্ধান্ত নেবে।"

তবে, আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেছেন, "আওয়ামী লীগের অনেক নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকতে পারে, কিন্তু দল নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত রাজনৈতিকভাবে গুরুতর প্রভাব ফেলবে।"

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি

 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিক্রিয়া

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা সরাসরি আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে মাঠে নেমেছেন।

এই সংগঠনের মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসউদ বলেন, "আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়ব না।"

আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ফেসবুকে লিখেছেন, "ইন্টেরিম সরকার, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করো, করতে হবে।"

গত কয়েকদিন ধরে দেশজুড়ে আওয়ামী লীগবিরোধী বিক্ষোভে এই সংগঠনের নেতাকর্মীরা সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছেন।

বিএনপির অবস্থান

বিএনপি বরাবরই বলছে, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করা উচিত কি না, সে সিদ্ধান্ত জনগণের নেওয়া উচিত।

দলের এক শীর্ষ নেতা বলেন, "আমরা চাই জনগণ সিদ্ধান্ত নিক। রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য সঠিক পন্থা নয়।"

আদালতের অবস্থান

এর আগে ১৯ আগস্ট "সারডা সোসাইটি" নামের একটি সংগঠন আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করে।

২৭ আগস্ট সেই রিটের শুনানি হয় এবং হাইকোর্ট আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আবেদন খারিজ করে দেন।

তবে, আইন অনুযায়ী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চাইলে "সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯" এর আওতায় কোনো সংগঠনকে নিষিদ্ধ করতে পারে।

সাম্প্রতিক পরিস্থিতি

  • দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ ও মিছিল অব্যাহত রয়েছে।
  • ফেসবুকে #ব্যানআওয়ামীলীগ হ্যাশট্যাগ ব্যাপকভাবে ছড়িয়েছে।
  • জানাজার মিছিলেও আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে স্লোগান দেওয়া হয়েছে।
  • আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ কী?

বর্তমানে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল করা হবে কি না, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে বিতর্ক চলছে।

অন্তর্বর্তী সরকার এখন পর্যন্ত দলটিকে নিষিদ্ধের বিষয়ে সরাসরি কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তবে, সরকারপক্ষ থেকে বলা হয়েছে, "আওয়ামী লীগকে রাজনীতি করতে হলে অবশ্যই গণহত্যার বিচারের মুখোমুখি হতে হবে এবং প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।"

এখন প্রশ্ন হলো, সরকার আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেয়? এবং আদালত যদি কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে তা কতটা কার্যকর হবে?

বাংলাদেশের রাজনীতিতে এটি এখন সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হয়ে উঠেছে।

Link copied!

সর্বশেষ :