বাংলাদেশ রবিবার, ১৬ মার্চ, ২০২৫, ২ চৈত্র ১৪৩১

রংপুরে বঙ্গবন্ধুর তিনটি ম্যুরাল গুঁড়িয়ে দিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন

দৈনিক প্রথম সংবাদ ডেস্ক

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২৫, ০৪:০৮ পিএম

রংপুরে বঙ্গবন্ধুর তিনটি ম্যুরাল গুঁড়িয়ে দিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন

রংপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের তিনটি ম্যুরাল বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। বুধবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৯টার দিকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম ম্যুরালটি ভাঙচুর করা হয়, পরে রাতভর আরও দুটি ম্যুরাল গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।

বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে প্রথমে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙচুর করা হয় এবং পরে সেটি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। একইসঙ্গে ক্যাম্পাসে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের নামফলকও ভেঙে ফেলা হয়। পরে শহরের কারমাইকেল কলেজ এবং রংপুর জিলা স্কুল মোড়ে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর আরও দুটি ম্যুরাল ভাঙা হয়।

এই কর্মসূচির নেতৃত্ব দেওয়া আন্দোলনকারীরা দাবি করেন, তারা ফ্যাসিবাদী শাসনের প্রতীক মুছে ফেলতে এই পদক্ষেপ নিয়েছেন। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে চলমান ছাত্র ও জনতার আন্দোলনের প্রতিক্রিয়ায় এই ভাঙচুর সংঘটিত হয়েছে।

প্রথমে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থিত বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালটি ভাঙচুর করা হয় এবং পরে সেটি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। চত্বরটিকে ‘মুক্তমঞ্চ’ নামে ঘোষণা করে আন্দোলনকারীরা। একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল’ ও ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল’-এর নামফলক মুছে দেওয়া হয়।

এরপর রাত পৌনে ১০টার দিকে নগরীর কারমাইকেল কলেজ ক্যাম্পাসের ফটকের সামনে থাকা বঙ্গবন্ধুর আরেকটি ম্যুরাল ভাঙচুর করা হয়। পরে রাত পৌনে ১টার দিকে রংপুর জিলা স্কুল মোড়ে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর তৃতীয় ম্যুরালটি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।

 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুর মহানগর কমিটির যুগ্ম সদস্যসচিব রাজিমুজ্জামান হৃদয় বলেন, “শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে কারমাইকেল কলেজ ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখ মুজিবের ম্যুরালের কবর রচনা করেছি। ফ্যাসিবাদী চিহ্ন মুছে দেওয়া হয়েছে।”

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র নাহিদ হাসান খন্দকার বলেন, “স্বাধীনতার ভাস্কর্য অক্ষুণ্ন রেখে ফ্যাসিবাদের কবর দেওয়া হয়েছে।”

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতি বলেন, “শেখ হাসিনা লাইভে এসে ছাত্র-জনতার উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার প্রতিবাদে আমাদের বুলডোজার কর্মসূচি। ফ্যাসিবাদকে এ দেশ থেকে নিশ্চিহ্ন করা হবে।”

এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ ও সমর্থকরা প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি তুলেছে।

রংপুর মহানগর পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, “আমরা ঘটনা তদন্ত করছি এবং আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকে এটিকে “রাষ্ট্রদ্রোহমূলক কর্মকাণ্ড” হিসেবে আখ্যা দিচ্ছেন, অন্যদিকে আন্দোলনকারীরা দাবি করছে, এটি তাদের “স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের অংশ”

 

রংপুরে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙচুরের ঘটনা দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে এই উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি, তবে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠছে বিভিন্ন মহল থেকে।

Link copied!

সর্বশেষ :