আজ, ১১ অক্টোবর ২০২৪, বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে বিশ্ব ডিম দিবস। ইন্টারন্যাশনাল এগ কমিশনের নির্দেশনায় প্রতিবছর অক্টোবরের দ্বিতীয় শুক্রবার এই দিবসটি উদযাপিত হয়। এবারের প্রতিপাদ্য— “ডিমে পুষ্টি, ডিমে শক্তি, ডিমে আছে রোগমুক্তি”। বাংলাদেশেও দিবসটি উপলক্ষে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল এবং ওয়াপসা-বিবি যৌথ উদ্যোগে রাজধানী ঢাকার কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে দিবসটি পালনের জন্য একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর। এছাড়াও অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ রেয়াজুল হক। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পোলট্রিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শওকত আলী।
বাংলাদেশে ডিম উৎপাদনের হার বিগত কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রায় ২,৩৭৫ কোটি পিস ডিম উৎপাদিত হয়েছে। তবে ডিমের উৎপাদন খরচ নিয়ে কিছু বিতর্ক রয়েছে। সরকারি হিসেবে একটি ডিম উৎপাদনে প্রায় ১১ টাকা খরচ হয়, যা পার্শ্ববর্তী দেশের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।
বাজারে ডিমের দামও বর্তমানে বেশ চড়া। সম্প্রতি রাজধানীর বাজারগুলোতে প্রতি হালি ডিমের দাম ৫৫-৬০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। যদিও দেশে ডিমের উৎপাদন অনেক বেড়েছে, তবুও ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না।
বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, দেশে ডিম উৎপাদনের খরচ এবং বাজারে ডিমের দামের মধ্যে রয়েছে বেশ ফারাক। উৎপাদন খরচ দেখানো হচ্ছে ১১ টাকা তবে বিশেষজ্ঞদের মতে ছোট ও প্রান্তিক খামারগুলোর জন্য উৎপাদন খরচ ১০ টাকার কাছাকাছি এবং বড় কোম্পানিগুলোর জন্য ৮.৫ টাকা।
ডিমের আমদানিতেও একই চিত্র দেখা যাচ্ছে। সম্প্রতি ভারত থেকে প্রায় সাড়ে চার কোটি পিস ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ভারতে প্রতি পিস ডিম উৎপাদন খরচ ৫-৬ টাকা এবং আমদানির পর বাংলাদেশে সেই ডিমের খরচ ৭-৮ টাকার মধ্যে পড়ে। কিন্তু বাজারে সেই ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২ টাকার ওপরে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, গত বছর দেশের একজন মানুষ গড়ে ১২.৭ গ্রাম ডিম ভোগ করেছেন। যা দৈনিক দুই হাজার টনের কাছাকাছি। তবে সরকারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রতিদিন সাড়ে ছয় কোটি পিস ডিম উৎপাদিত হয়। এর ফলে দৈনিক উৎপাদনের সঙ্গে ভোগের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য ফারাক লক্ষ্য করা যায়।
কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম খান বলেন, দেশের ডিমের বাজারে বর্তমানে একটি "নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি" সৃষ্টি হয়েছে। উৎপাদন খরচ অতিরঞ্জিতভাবে দেখানো হচ্ছে। যার ফলে ডিমের বাজারমূল্য অস্বাভাবিকভাবে বেশি রাখা হচ্ছে। ছোট ও প্রান্তিক খামারগুলোতে খরচ কম হলেও বড় প্রতিষ্ঠানগুলো মুনাফা করতে গিয়ে বাজারে উচ্চমূল্য নির্ধারণ করেছে।
বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ) বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ তুলেছে যে বড় কোম্পানিগুলো অস্বাভাবিক মুনাফা করছে। এর ফলে সাধারণ ভোক্তাদের জন্য ডিমের দাম চড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য।
ডিম মানুষের পুষ্টির অন্যতম প্রধান উৎস। মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেণির জন্য ডিম একটি সাশ্রয়ী পুষ্টির উৎস। কিন্তু বর্তমানে ডিমের দাম বেশি হওয়ায় এটি ধীরে ধীরে গরিব মানুষের প্লেট থেকে সরে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন ডিমের উৎপাদন আরও বৃদ্ধি করে এবং বাজারের দামের ভারসাম্য ঠিক রেখে সবার জন্য এটি সহজলভ্য করা সম্ভব।
ডিমের উৎপাদন বাড়লেও বাজারে উচ্চমূল্যের কারণে দেশের সাধারণ মানুষ পুষ্টির অন্যতম এই উৎস থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ডিমের উৎপাদন খরচ ও বাজারমূল্য নিয়ে যে অস্বচ্ছতা তৈরি হয়েছে তা সমাধানের জন্য সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। খামারিদের স্বার্থ রক্ষা এবং ভোক্তাদের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে ডিম সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে যাতে দেশের পুষ্টির চাহিদা মেটানো সম্ভব হয়।
আপনার মতামত লিখুন :