বাংলাদেশ সোমবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০২৫, ৩০ পৌষ ১৪৩১

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্বে সেনাবাহিনী পাচ্ছেন যেসকল ক্ষমতা

দৈনিক প্রথম সংবাদ ডেস্ক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৪, ১২:৩২ পিএম

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্বে সেনাবাহিনী পাচ্ছেন যেসকল ক্ষমতা

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী

স্বল্পকালীন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা পেলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে ১৮৯৮ এর ১২ (১) ধারা অনুযায়ী কমিশনপ্রাপ্ত সেনাবাহিনী কর্মকর্তাদের দেয়া হলো নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা।

এতে ক্ষমতাপ্রাপ্ত সেনাবাহিনী ফৌজদারি কার্যবিধির ১৮৯৮ এর ৬৪, ৬৫, ৮৩, ৮৪, ৮৬, ৯৫(২), ১০০, ১০৫, ১০৭, ১০৯, ১১০, ১২৬, ১২৭, ১২৮, ১৩০, ১৩৩ ও ১৪২ ধারার অপরাধগুলোর বিচার, বিশ্লেষণ এবং সাজার আদেশ করতে পারবেন।

প্রজ্ঞাপনে আরো বলা হয়েছে আগামী দুই মাস সারাদেশের জন্য এ সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে। তবে মেট্রোপলিটন এলাকায় এ দায়িত্ব প্রযোজ্য হবে না।

গত জুলাই মাস জুড়ে কোটা সংস্কার আন্দোলকে ঘিরে ঢাকাসহ সারা দেশে ছড়িয়ে পরে সংঘর্ষ, যা প্রতিরোধে ১৯ জুলাই  দিবাগত রাত থেকে সারা দেশে সেনাবাহিনী মোতায়েন এবং বেশ কয়েকবার কারফিউ জারি করে সরকার।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান এবং ৯ দফা দাবি যখন ১ দফায় নেমে এলে জনতার রোষানলে পরে গত ৫ই আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। পরবর্তী ৮ই আগস্ট শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সুরক্ষার নিমিত্তে সারা দেশে এখনো মোতায়েন রয়েছে সেনাবাহিনী।

বর্তমান এই বিশৃঙ্খল ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে  দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে, বিশেষ করে শিল্পাঞ্চলগুলোতে বেড়ে গেছে নাশকতা। যা চোখে এড়ায়নি অন্তরবর্তীকালীন সরকার। এহেন পরিস্থিতির উন্নতি এবং অরাজকতা মোকাবিলার জন্য সরকার সেনাবাহিনীর কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের হাতে তুলে  দিয়েছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা।

দেশের স্বার্থে, আইনশৃঙ্খলায় সমতা আনতে সীমিত সময়ের জন্য এই দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, পরিস্থিতির উন্নতি হলে তাদের এই দায়িত্ব পালনের প্রয়োজনীয়তা আর থাকবে না।
জাতীয় সংকটে সেনাবাহিনীকে এই দায়িত্ব দেয়ায় দেশের সর্বস্তরের মানুষ সাধুবাদ জানিয়েছে। অতীতেও বিভিন্ন সময় সেনাবাহিনীকে এ ধরনের ক্ষমতা দেয়া হত।  তবে সেনাবাহিনীকে এ ক্ষমতার প্রয়োগ সতর্কভাবে করতে হবে। নচেৎ হীতে বিপরীত হওয়ার আশংকা রয়েছে।
 

আইনের ধারা অনুযায়ী প্রদত্ত ক্ষমতায় একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কি কি ক্ষমতা পেল দেখে নেয়া যাক।

ধারা ৬৪ : ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে অপরাধকারী ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করতে পারবে।

ধারা ৬৫ : অপরাধী গ্রেপ্তারের নির্দেশ বা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে পারেন।
ধারা ৮৩/৮৪/৮৬ : অভিযুক্তের ওয়ারেন্ট অনুমোদন করার ক্ষমতা এবং ওয়ারেন্টে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিকে অপসারণের আদেশ দেওয়ার ক্ষমতা।

ধারা ৯৫(২) : নথিপত্রের জন্য ডাক ও টেলিগ্রাফ কর্তৃপক্ষের দ্বারা অনুসন্ধান এবং আটক করার ক্ষমতা।

ধারা ১০০ : ভুলবসত বন্দিকৃত ব্যক্তিদের হাজির করা এবং অনুসন্ধান ওয়ারেন্ট জারি করার ক্ষমতা।

ধারা ১০৫ : সরাসরি তল্লাশি করার ক্ষমতা।

ধারা ১০৭ : দেশের শান্তি বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার ক্ষমতা ।

ধারা ১০৯ ও ১১০ : সন্দেহভাজন ব্যক্তির ভালো আচরণের জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দেয়ার ক্ষমতা।

ধারা ১২৬ : জামিনের নিষ্পত্তি করার ক্ষমতা।

ধারা ১২৭, ১২৮ ও ১৩০ : বেআইনি সমাবেশের ছত্রভঙ্গ করার আদেশ দানের ক্ষমতা এবং বেসামরিক শক্তি ব্যবহার করার ক্ষমতা।

ধারা ১৩৩ ও ১৪২ : স্থানীয় বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা হিসেবে ক্ষেত্র বিশেষে আদেশ জারি করার ক্ষমতা।

এগুলো ছাড়াও মোবাইল কোর্ট আইন, ২০০৯ এর মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করার ক্ষমতা থাকবে।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তার উপস্থিতিতে গঠিত অপরাধগুলো বিবেচনায় নিয়ে অভিযুক্তের স্বীকারোক্তির পর ম্যাজিস্ট্রেট সংশ্লিষ্ট আইন অনুযায়ী অপরাধীকে সাজা দিতে পারেন। তবে দুই বছরের বেশি কারাদণ্ড দিতে পারবেন না।

 

Link copied!

সর্বশেষ :