বাংলাদেশ রবিবার, ১৬ মার্চ, ২০২৫, ২ চৈত্র ১৪৩১

জুলাইয়ের শহীদ ফাহমিন জাফরের মায়ের চোখে ঘুম নেই

দৈনিক প্রথম সংবাদ ডেস্ক

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৫, ০৮:২৭ পিএম

জুলাইয়ের শহীদ ফাহমিন জাফরের মায়ের চোখে ঘুম নেই

জুলাইয়ের শহীদ ফাহমিন জাফর

রাজধানীর উত্তরায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন টঙ্গী সরকারি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ফাহমিন জাফর। ১৮ জুলাই আন্দোলনে যোগ দেওয়ার সময় পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত হয়ে প্রাণ হারান তিনি। ছেলের হত্যার বিচার চেয়ে আজও চোখের জল ফেলেন তার মা মোসাম্মৎ শিল্পী।

ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন ছিল ফাহমিনের

ফাহমিন জাফরের জন্ম ২০০৬ সালের ১০ জুলাই। তার বাবা শেখ আবু জাফরের চার সন্তানের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন তিনি। স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) পড়ার। মা মোসাম্মৎ শিল্পীর সঙ্গে মামাবাড়িতে থেকে পড়াশোনা করতেন ফাহমিন।

হত্যার দিন সকাল ১০টায় ফাহমিন তার বাবার সঙ্গে শেষবারের মতো কথা বলেন। ফোনে জানতে চাইলে সে জানায়, "আন্দোলনে আছি বাবা"। তখন তাকে দ্রুত বাসায় ফিরে আসতে বলেছিলেন তার বাবা। কিন্তু সে ফিরল, তবে লাশ হয়ে।

গুলিতে ঝাঁজরা শরীর, শেষ কল বাবার নম্বরে

আন্দোলনের সময় পুলিশ সরাসরি গুলিবর্ষণ করলে গুরুতর আহত হন ফাহমিন। তার শরীর ছররা গুলিতে ঝাঁজরা হয়ে যায়। এরপর আহত অবস্থায় উত্তরার একটি মার্কেটের সিঁড়িতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। সহযোদ্ধারা তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে গেলেও বাঁচানো সম্ভব হয়নি।

তার ফোনের কললিস্টে সর্বশেষ নম্বর ছিল বাবার। কেউ একজন সেই নম্বরে ফোন করে জানান, "ফাহমিন আহত হয়েছে, দ্রুত হাসপাতালে আসুন"। কিন্তু হাসপাতালে পৌঁছে তার স্বজনরা দেখতে পান, ফাহমিনের নিথর দেহ হাসপাতালের বিছানায় পড়ে আছে।

‘আমার বাবু আর নেই!’—মায়ের কান্না থামেনি
ফাহমিনের মা শিল্পী হাসপাতালে গিয়ে ছেলেকে জড়িয়ে ধরে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। তার ভাষায়, "আমার বাবু ইঞ্জিনিয়ার হয়ে পরিবারের হাল ধরতে চেয়েছিল। অথচ স্বৈরাচারী সরকারের গুলিতে তার রক্ত ঝরল।"

হাসপাতালেও বাধা দেয় পুলিশ

ফাহমিনের মৃত্যুর খবর পেয়ে তার পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালে যেতে চাইলে পুলিশ তাদের পথে পথে হয়রানি করে। মায়ের অভিযোগ, "হাসিনার পেটোয়া বাহিনী আমাকে হাসপাতাল যেতে বাধা দেয়, অশালীন আচরণ করে।"

একজন চিকিৎসক ফাহমিনের পরিবারকে দ্রুত লাশ নিয়ে যেতে বলেন এবং সতর্ক করেন, "দেরি করলে পুলিশ লাশ গায়েব করে দিতে পারে।"

‘বাবুর ছবি চোখে ভাসে, ঘুমাতে পারি না’
ফাহমিনের মা এখনো ছেলের স্মৃতি আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছেন। তার কণ্ঠে তীব্র আক্ষেপ, "পুলিশের গুলিতে ঝাঁজরা হয়ে যাওয়া আমার বাবুর ছবি চোখে ভাসে। সেটি মনে পড়লে আমি ঘুমাতে পারি না।"

সন্তান হত্যার বিচার চান মা

শোকার্ত মা মোসাম্মৎ শিল্পী বলছেন, "আমার বাবুসহ সব মায়ের কোল খালি করা সন্তানের হত্যার বিচার চাই। আমি খুনি হাসিনার ফাঁসি চাই!"

Link copied!

সর্বশেষ :