নভেম্বর মাসেই বাংলাদেশ রেলওয়ে `পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প` এর ১৭২ কিলোমিটার রেলপথে ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা করেছে। এর ফলে ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী হয়ে যশোর এবং খুলনায় রেলপথে যাত্রার সময় প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টা কমে আসবে, আর যশোর-বেনাপোল রুটে প্রায় ৪ ঘণ্টা সাশ্রয় হবে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এমন কিছু রুটে একই ট্রেন দিনে দুইবার চালানোর পরিকল্পনাও করছে।
প্রকল্পের সূচনা
গত বছরের ১০ অক্টোবর প্রথমবারের মতো পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে আন্তঃনগর ট্রেন ঢাকা থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা স্টেশন পর্যন্ত চালানো হয়, যা ৮২ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করেছিল। এখন প্রকল্পের বাকি ৯০ কিলোমিটার রেলপথ সম্পূর্ণ প্রস্তুত। এর মধ্যে ভাঙ্গা থেকে মুকসুদপুর, লোহাগড়া, এবং নড়াইল হয়ে যশোর পর্যন্ত রেলপথও রয়েছে। পূর্ণাঙ্গ রেলপথ চালুর জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ে ২০ নভেম্বরের মধ্যে ট্রেন চালানোর দিনক্ষণ নির্ধারণের পরিকল্পনা করছে।
এই প্রকল্পে লুপ এবং সাইড লাইনের জন্য অতিরিক্ত ৪৩.২ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হয়েছে, যার ফলে প্রকল্পের মোট দৈর্ঘ্য দাঁড়িয়েছে ২১৫.২ কিলোমিটার।
নতুন যাত্রাপথ এবং ট্রেনের পরিকল্পিত নাম
পদ্মা রেল সংযোগের মাধ্যমে যাত্রীরা আরও স্বল্প সময়ে ঢাকা থেকে খুলনা ও বেনাপোল যেতে পারবেন। ঢাকা-খুলনা রুটে ট্রেনের নতুন নামকরণ হতে পারে `প্রভাতি` এবং `গোধূলী`। এই রুটে ‘সুন্দরবন এক্সপ্রেস’ এবং ‘চিত্রা এক্সপ্রেস’ এবং ঢাকা-বেনাপোল রুটে ‘বেনাপোল এক্সপ্রেস’ চালানো হতে পারে।
দূরত্ব ও সময় সাশ্রয়
বর্তমানে ঢাকা থেকে খুলনা পর্যন্ত ভ্রমণ সময় লাগে প্রায় ৭ ঘন্টা ৩৫ মিনিট, যেখানে খুলনায় পৌঁছতে ৪১২ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে হয়। পদ্মা রেলপথের মাধ্যমে এই দূরত্ব কমে আসবে ২৪০ কিলোমিটারে, যা ৩ ঘন্টা ৩৫ মিনিটের মতো সময় বাঁচাবে।
বেনাপোল রুটেও ব্যাপক সময় সাশ্রয় হবে। বর্তমানে বেনাপোল এক্সপ্রেসে ৩৬৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে যেতে ৭ ঘন্টা ৩৫ মিনিট লাগে, কিন্তু নতুন রেলপথে যশোর হয়ে ১৯৩ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে বেনাপোল পৌঁছতে মাত্র সাড়ে ৩ ঘন্টা লাগবে।
রেলপথের কাঠামো ও গতি
এই রেলপথটি ঘন্টায় ১২০ কিলোমিটার গতির ব্রডগেজ লাইনের মাধ্যমে তৈরি। ঢাকা থেকে পদ্মবিলা জংশন পর্যন্ত একটানা একটি রেলপথ, যেখানে থেকে একটি শাখা যশোরের রূপদিয়া এবং অন্যটি খুলনার সিঙ্গিয়া স্টেশনের সাথে সংযুক্ত করা হয়েছে। খুলনাগামী ট্রেনগুলো পদ্মবিলা থেকে সিঙ্গিয়া হয়ে খুলনা স্টেশনে পৌঁছবে।
প্রকল্পের সার্বিক অবস্থা ও পরিকল্পিত ট্রেন সংখ্যা
পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে নতুন এই রেলপথ চালু হওয়ায় একই ট্রেন দিনে দুইবার চালানোর কথা ভাবা হচ্ছে। এতে আরও বেশি যাত্রী সেবা দিতে পারবে রেলওয়ে। ঢাকা-খুলনা এবং ঢাকা-বেনাপোল রুটে আন্তঃদেশীয় মৈত্রী এক্সপ্রেস চালানোর পরিকল্পনাও রয়েছে।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের মন্তব্য
বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী বলেন, `এই নভেম্বরেই পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্প পুরোপুরি চালু হচ্ছে। ফলে ঢাকা-খুলনা রেলপথের দূরত্ব কমবে, যাত্রার সময় সাশ্রয় হবে, এবং এতে রেলওয়ের আয়ও বৃদ্ধি পাবে`। পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের পরিচালক মো. আফজাল হোসেন বলেন, `পূর্ণাঙ্গ প্রকল্প চালুর জন্য ভাঙ্গা স্টেশনে সিগনালিংয়ের কাজ চলমান। আশা করা হচ্ছে কাজটি সপ্তাহের মধ্যে শেষ হবে এবং ২০ নভেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি চালু হবে`।
উপসংহার
পদ্মা রেল সংযোগের মাধ্যমে ঢাকা-খুলনার যাত্রীদের জন্য রেলপথ আরও সহজ, দ্রুত এবং আরামদায়ক হবে, যা দেশের পরিবহন ব্যবস্থায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।
আপনার মতামত লিখুন :