রাজধানীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম আহত হয়েছেন। বুধবার (তারিখ উল্লেখ করুন) রাত সোয়া ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুলার রোডে ব্রিটিশ কাউন্সিলের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, একটি দ্রুতগামী প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে উঠে গেলে সারজিস আলম দুর্ঘটনার শিকার হন। স্থানীয়রা তাৎক্ষণিকভাবে তাঁকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) নিয়ে যান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনার সময় সারজিস আলম ফুলার রোড দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। ঠিক তখনই একটি সাদা রঙের প্রাইভেট কার অতিরিক্ত গতিতে এসে হঠাৎ করে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফুটপাতের দিকে চলে আসে। গাড়িটি সজোরে ধাক্কা দিলে সারজিস আলম রাস্তায় পড়ে যান এবং তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত লাগে।
ঘটনার পরপরই আশপাশের মানুষ ছুটে আসেন এবং তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করেন। খবর পেয়ে শাহবাগ থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে গাড়িটি জব্দ করে এবং চালককে আটক করে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সারজিস আলমের মাথায় ও হাতে গুরুতর আঘাত লেগেছে। তবে তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে এবং চিকিৎসকরা তাঁকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছেন।
একজন চিকিৎসক বলেন, “তিনি মাথায় আঘাত পেয়েছেন, তবে বড় ধরনের শারীরিক জটিলতা এখনো দেখা যায়নি। আমরা পর্যবেক্ষণে রেখেছি এবং প্রয়োজনীয় সব চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।”
সারজিস আলমের পরিবারের সদস্যরা দ্রুত হাসপাতালে ছুটে আসেন। তাঁরা এ ঘটনায় শোকাহত এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
একজন স্বজন বলেন, “আমরা আশাবাদী, তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন। তবে এমন দুর্ঘটনা যেন আর না ঘটে, সে জন্য প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন।”
ঘটনার পরপরই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তদন্ত শুরু করেছে। শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানান, “আমরা গাড়িটি আটক করেছি এবং চালককে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ নির্ণয়ে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে।”
পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, গাড়ির চালক অতিরিক্ত গতি ও অসতর্কতার কারণে নিয়ন্ত্রণ হারান। এছাড়া, চালক মাদকাসক্ত ছিলেন কি না, তা যাচাই করতে তাঁর রক্ত পরীক্ষা করা হচ্ছে।
এই দুর্ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। অনেকে ঢাকার রাস্তায় বেপরোয়া গাড়ি চালানোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
নাগরিক অধিকার সংগঠনগুলোর নেতারা বলছেন, “ঢাকার রাস্তায় বেপরোয়া গাড়ি চালানো এখন ভয়াবহ সমস্যায় পরিণত হয়েছে। প্রশাসনের উচিত কড়াকড়ি আরোপ করা এবং অপরাধীদের দ্রুত শাস্তির আওতায় আনা।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশে সড়ক নিরাপত্তা আইন আরও কঠোরভাবে প্রয়োগ করা প্রয়োজন। প্রতিদিন অসংখ্য দুর্ঘটনা ঘটছে, যার জন্য অসতর্ক চালনা, ট্রাফিক আইন অমান্য এবং পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকাকে দায়ী করা হচ্ছে।
নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের এক কর্মী বলেন, “এ ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সরকার ও প্রশাসনের আরও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। ট্রাফিক নিয়ম মেনে না চললে সাধারণ মানুষের জীবন হুমকির মুখে পড়ে।”
সারজিস আলম জাতীয় নাগরিক কমিটির একজন গুরুত্বপূর্ণ সংগঠক হিসেবে কাজ করছেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে নাগরিক অধিকার, সুশাসন ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিয়ে কাজ করছেন। তাঁর নেতৃত্বে সংগঠনটি বিভিন্ন আন্দোলন ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করেছে।
সারজিস আলমের দুর্ঘটনা সড়ক নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার দুর্বলতাকে আবারও সামনে এনেছে। সাধারণ মানুষ ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে এ ধরনের ঘটনা আরও বাড়বে।
এদিকে, সারজিস আলমের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে চিকিৎসকরা নিয়মিত আপডেট দিচ্ছেন। তাঁর দ্রুত সুস্থতার জন্য সহকর্মী, পরিবার ও শুভানুধ্যায়ীরা দোয়া করছেন।
আপনার মতামত লিখুন :