সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ডের ১৩ বছর পেরিয়ে গেলেও বিচার প্রক্রিয়া এখনও অমীমাংসিত রয়ে গেছে। ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া ফ্ল্যাটে তাঁদের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়। হত্যাকাণ্ডের পর থেকে তদন্তের দায়িত্ব বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে হস্তান্তরিত হয়েছে, তবে কার্যকর ফলাফল এখনও অনুপস্থিত।
র্যাবের তদন্ত: ছয় বছরের স্থবিরতা
২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পায়। তদন্তের প্রথম ছয় বছরে (২০১২-২০১৮) র্যাব বিভিন্ন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার ও জিজ্ঞাসাবাদ করলেও হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনে উল্লেখযোগ্য কোনো সাফল্য অর্জন করতে পারেনি। এ সময়ে র্যাব আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য ১১২ বার সময় বাড়ানোর আবেদন করে।
হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি, বঁটি, ছুরির বাঁট, সাগরের হাত বাঁধা ওড়না ও রুনির পরনের কাপড় ডিএনএ পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পরীক্ষাগারে পাঠিয়েছিল র্যাব। পাশাপাশি সাগর-রুনির ভাড়া বাসার ভাঙা গ্রিলের অংশ, ঘটনাস্থলে পাওয়া চুল, ভাঙা গ্রিলের পাশে পাওয়া মোজা, দরজার লক, দরজার চেইন ও ছিটকিনির ডিএনএ পরীক্ষার জন্য সেখানে পাঠানো হয়।
পিবিআইয়ের তদন্ত: নতুন আশার আলো?
২০১৮ সালে মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)-এর কাছে হস্তান্তর করা হয়। তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর পিবিআই নথিপত্র নিয়ে বিশ্লেষণ ও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তারা তদন্ত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে। যুক্তরাষ্ট্রের পরীক্ষাগার থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রুনিকে পেছন থেকে ডান হাত দিয়ে পেটের ডান পাশে কোপ দেওয়া হয়েছে। তাঁর পরনের টি–শার্টে ওই ব্যক্তির ডিএনএ পাওয়া গেছে। সবুজ রঙের ওড়না দিয়ে সাগরের হাত–পা বাঁধা ছিল। সেখানে আরেকজনের ডিএনএ পাওয়া গেছে।পিবিআই যুক্তরাষ্ট্রের পরীক্ষাগার থেকে প্রাপ্ত ডিএনএ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সন্দেহভাজন দুই ব্যক্তিকে শনাক্তের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।মামলার বাদী ও রুনির ভাই নওশের আলম বলেন,
পিবিআই আমার সঙ্গে কয়েকবার কথা বলেছে। সবকিছু মিলিয়ে মনে হচ্ছে, সরকার ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারবে। তবে তদন্তের ফল না পাওয়া পর্যন্ত আশাবাদী হতে পারছি না।
টাস্কফোর্স গঠন: তদন্তে গতি আনার প্রচেষ্টা
২০২৪ সালের ২৩ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মামলাটির তদন্তে চার সদস্যের একটি টাস্কফোর্স গঠন করে। টাস্কফোর্সকে ছয় মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করে হাইকোর্টে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। খুনের রহস্য উদ্ঘাটন হওয়ার মতো এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন দিতে টাস্কফোর্স আদালতের নির্দেশমতো কাজ করছে। পিবিআই প্রধান মো. মোস্তফা কামাল টাস্কফোর্সের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
সাংবাদিক সমাজের প্রতিক্রিয়া: দ্রুত বিচারের দাবি
সাংবাদিক সমাজ ও সাধারণ জনগণ এই হত্যাকাণ্ডের দ্রুত ও সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানিয়ে আসছে। টাস্কফোর্সের গঠন তদন্তে নতুন গতির সঞ্চার করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :