দেশে বলপূর্বক গুমের ঘটনা নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিশনের সুপারিশ ঘিরে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, গুমের অভিযোগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২২ সদস্যকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে এই খবরকে ভিত্তিহীন ও ভুয়া বলে দাবি করেছেন গুম বিষয়ক তদন্ত কমিশনের প্রধান বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী।
কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কোনো নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের বরখাস্ত করার সুপারিশ কমিশন করেনি। বিচারপতি মইনুল ইসলাম বলেন, কিছু টিভি চ্যানেল ও গণমাধ্যম ভুল তথ্য প্রচার করছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমগুলো এই ভুল তথ্য সংশোধন করবে।
ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার সুপারিশ
তদন্ত কমিশন জানিয়েছে, গুমের ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২২ সদস্যের বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার সুপারিশ করা হয়েছে। এদের মধ্যে ডিজিএফআই, র্যাব এবং পুলিশের সদস্য রয়েছেন। কমিশনের মতে, তদন্তের স্বার্থে তাদের সঙ্গে কথা বলার প্রয়োজন রয়েছে।
গুমের ঘটনা ও অভিযোগ
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের নির্দেশে বলপূর্বক গুমের ঘটনা তদন্তে একটি পৃথক কমিশন কাজ শুরু করে। কমিশন প্রধান জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত সাড়ে ৩ হাজার অভিযোগ জমা পড়েছে। এর মধ্যে তদন্তে দেখা গেছে, বিগত সরকারের আমলে ১,৬০০ জনেরও বেশি মানুষ গুমের শিকার হয়েছেন।
অভিযোগের তথ্য অনুযায়ী, ২০০ জন ভুক্তভোগী এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। বাকি ১,৪০০ জনকে পরবর্তীতে অবৈধ অস্ত্র রাখা বা চরমপন্থার মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।
বিতর্কিত বরখাস্তের খবর
গুমের ঘটনায় অভিযুক্ত ২২ জন সদস্যকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার খবর বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রচারিত হলেও তা মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়েছে। তদন্ত কমিশন স্পষ্ট করেছে যে, এ ধরনের কোনো সুপারিশ করা হয়নি। বরং কমিশনের কাজ কেবল প্রমাণ সংগ্রহ করা এবং অভিযোগ যাচাই করা।
ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ
গুম তদন্ত কমিশন অভিযোগগুলো আরও গভীরভাবে তদন্ত করছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তদন্তের স্বচ্ছতা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য কমিশন গণমাধ্যম ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সহায়তা চেয়েছে।
এই বিভ্রান্তি সত্ত্বেও, গুমের মতো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কমিশনের কার্যক্রম গুরুত্বপূর্ণ বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
আপনার মতামত লিখুন :