অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে অধ্যাপক ইউনূসের অভিজ্ঞতা

৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ব্যাপক আন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হন শেখ হাসিনা। এরপর ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী শপথ গ্রহণ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। দায়িত্ব নেওয়ার ছয় মাস পর, তিনি প্রকাশ করলেন কীভাবে তাঁকে এই দায়িত্ব নিতে বলা হয়েছিল।

সম্প্রতি বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনে অংশ নিতে সুইজারল্যান্ডের দাভোস সফরে গিয়েছিলেন অধ্যাপক ইউনূস। সেখানে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের বৈদেশিকবিষয়ক প্রধান ভাষ্যকার গিডেয়েন রাখমানের সঙ্গে এক পডকাস্টে তিনি এসব অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন।

প্রথম প্রস্তাব ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ

অধ্যাপক ইউনূস জানান, তিনি প্রথম ফোনকলটি পান যখন তিনি প্যারিসের একটি হাসপাতালে ছিলেন। তখন তাঁর ছোট একটি অস্ত্রোপচার হয়েছিল। বাংলাদেশে চলমান পরিস্থিতির খোঁজখবর তিনি প্রতিদিন মোবাইলে দেখতেন। সে সময় ছাত্রনেতারা তাঁকে ফোন করে বলেন, “শেখ হাসিনা চলে গেছেন, আমাদের সরকার গঠন করতে হবে, আপনাকে দায়িত্ব নিতে হবে।” কিন্তু ইউনূস প্রথমে রাজি হননি।

তিনি বলেন, ‘আমি বলেছিলাম, না, আমি সেই ব্যক্তি নই। আমি কিছু জানি না এবং এতে যুক্ত হতেও চাই না।’

কিন্তু ছাত্রনেতারা তাঁকে বোঝাতে থাকেন যে তারা আর কাউকে খুঁজে পাননি। তখন তিনি তাদের বলেন, ‘একদিন সময় নাও, চেষ্টা করো, যদি কাউকে পাও, তাহলে আমাকে আবার জানাও।’ ২৪ ঘণ্টা পর ছাত্রনেতারা আবার ফোন করে বলেন, ‘আমরা অনেক চেষ্টা করেছি, কিন্তু সম্ভব হয়নি, আপনাকে আসতেই হবে।’ তখন তিনি তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘তোমরা রাজপথে লড়াই করেছ, জীবন দিয়েছ। তোমাদের জন্য আমার কিছু করা উচিত।’

আরও পড়ুন

ড. ইউনূস সুইজারল্যান্ডে একদিনেই ১৩টির বেশি বৈঠক সেরেছেন

অপ্রত্যাশিত ঘোষণার খবর

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘কিছুক্ষণ পর এক নার্স এসে আমাকে ফুলের তোড়া দিলেন এবং বললেন, “আপনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী!” আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “আপনি কোথা থেকে জানলেন?” তিনি বললেন, “সব টেলিভিশনে প্রচার হচ্ছে।”’

এর কিছুক্ষণ পর হাসপাতালের বোর্ড সদস্যরা এসে তাঁকে অভিনন্দন জানান এবং বলেন, বিকেলের আগে তাঁকে হাসপাতাল ছাড়তে অনুমতি দেওয়া হবে না। এরপর তিনি হাসপাতাল পরিচালকের কাছে দ্রুত দেশে ফেরার অনুমতি চান। পরিচালক সম্মত হন এবং বলেন, “আপনি এখন প্রধানমন্ত্রী, আমরা আপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করব।”

দেশে ফেরা ও নতুন সরকারের সূচনা

এরপর ফরাসি সেনাবাহিনীর একটি দল তাঁকে বিমানবন্দরে পৌঁছে দেয়। তিনি বাণিজ্যিক ফ্লাইটে দেশে ফেরেন। এদিকে দেশে নতুন সরকারের রূপরেখা তৈরি হচ্ছিল। বিমানবন্দরে নামার পর তিনি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন এবং সবাইকে শান্তি, ধৈর্য ও ঐক্য বজায় রাখার আহ্বান জানান।

এভাবেই অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়