বাংলাদেশ রবিবার, ২৬ জানুয়ারি, ২০২৫, ১৩ মাঘ ১৪৩১

বাড়ি ফেরা হলো না কবি হেলাল হাফিজের, একাকী জীবনের অবসান ঘটিয়ে পাড়ি দিলেন পরপারে

দৈনিক প্রথম সংবাদ ডেস্ক

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৩, ২০২৪, ০৯:৫৮ পিএম

বাড়ি ফেরা হলো না কবি হেলাল হাফিজের, একাকী জীবনের অবসান ঘটিয়ে পাড়ি দিলেন পরপারে

কবি হেলাল হাফিজ আর নেই।

বাংলা সাহিত্যের প্রেম ও দ্রোহের অমর কবি হেলাল হাফিজ আর নেই। শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) রাজধানীর শাহবাগে সুপার হোস্টেলের একটি কমন ওয়াশরুমে পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হন তিনি। এরপর আহত অবস্থায় দ্রুত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

কবির মৃত্যুর ঘটনা

শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ খলিল মনসুর জানিয়েছেন, দুপুরের দিকে কবি হোস্টেলের একটি কমন ওয়াশরুমে যান। অনেকক্ষণ পরও তিনি বাইরে না আসায় অন্য বাসিন্দারা ওয়াশরুমের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে দেখতে পান, কবি অচেতন অবস্থায় পড়ে আছেন এবং তার মাথা ফেটে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, স্ট্রোক বা শারীরিক জটিলতার কারণে তিনি পড়ে যান। ঐ ওয়াশরুমে একটি বেসিন ভাঙা অবস্থায় পাওয়া গেছে, যা তার আঘাতের কারণ হতে পারে।

হেলাল হাফিজের জীবন ও সাহিত্যকর্ম

নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার বড়তলী গ্রামে ১৯৪৮ সালের ৭ অক্টোবর জন্ম নেওয়া হেলাল হাফিজ শৈশব থেকেই সাহিত্যচর্চা শুরু করেন। ষাটের দশকের উত্তাল সময়ে তার লেখালেখি শুরু হলেও প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ প্রকাশিত হয় ১৯৮৬ সালে। বইটি তাকে রাতারাতি জনপ্রিয় করে তোলে।

এরপর দীর্ঘ বিরতির পর ২০১২ সালে প্রকাশিত হয় দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘কবিতা একাত্তর’, এবং ২০১৯ সালে প্রকাশিত হয় তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘বেদনাকে বলেছি কেঁদো না’। তার লেখা কবিতা শুধু সাহিত্যের পাঠক নয়, সাধারণ মানুষের মাঝেও বিপুল প্রভাব ফেলেছে। তার বিখ্যাত পঙক্তি—“এখন যৌবন যার, মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়” স্বাধীনতা আন্দোলন ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের জন্য এক অনুপ্রেরণা হিসেবে বিবেচিত হয়।

কবির পুরস্কার ও সম্মাননা

কবিতায় অসামান্য অবদানের জন্য হেলাল হাফিজ ২০১৩ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার অর্জন করেন। এ ছাড়া তিনি পেয়েছেন যশোর সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার (১৯৮৬), আবুল মনসুর আহমদ সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৭) এবং নেত্রকোণা সাহিত্য পরিষদের খালেকদাদ চৌধুরী পুরস্কারসহ আরও অনেক সম্মাননা।

অসুস্থতা ও একাকী জীবন

গ্লুকোমা, কিডনি জটিলতা, ডায়াবেটিস এবং স্নায়ুর সমস্যায় দীর্ঘদিন ভুগছিলেন হেলাল হাফিজ। কোভিড-১৯ পরবর্তী সময় থেকে তিনি শাহবাগের সুপার হোস্টেলে একাকী জীবনযাপন করছিলেন। পরিবার তাকে বাসায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও তিনি থাকতে চাননি।

জানাজা ও দাফন

কবিকে মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হবে। শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) সকালে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। পরে জাতীয় প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে আরেকটি জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হবে।

উপসংহার

দ্রোহ ও প্রেমের কবি হেলাল হাফিজ কেবল একজন কবি ছিলেন না; তিনি ছিলেন গণতান্ত্রিক আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধের এক অনুপ্রেরণার নাম। তার লেখা সবসময় দ্রোহ, প্রেম এবং মানবতার পক্ষে আওয়াজ তুলেছে। তার মৃত্যুতে বাংলা সাহিত্য হারিয়েছে এক নক্ষত্র।
 

Link copied!

সর্বশেষ :