সিলেটের কানাইঘাট উপজেলায় নিখোঁজ হওয়ার সাত দিন পর শিশুকন্যা মুনতাহা আক্তার জেরিনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ, যাদের মধ্যে মুনতাহার গৃহশিক্ষিকা মার্জিয়া, তার মা এবং নানী রয়েছেন।
নিখোঁজের ঘটনা
৩ নভেম্বর, রবিবার, শিশু মুনতাহা তার পরিবারের সঙ্গে স্থানীয় একটি ওয়াজ মাহফিলে গিয়েছিল। সকাল থেকে পরিবারের সাথে সময় কাটানো এই শিশুটি বিকেলের দিকে নিখোঁজ হয়। পরিবারের লোকজন এবং স্থানীয়দের সহায়তায় আশেপাশের এলাকায় খোঁজাখুঁজি এবং মাইকিং শুরু হয়। কিন্তু মুনতাহার সন্ধান না পেয়ে তার বাবা শামীম আহমদ কানাইঘাট থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। মুনতাহার প্রবাসী ভাই বোনের সন্ধানদাতাকে পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা করেন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই শিশুটির খোঁজে পোস্ট করেন।
মরদেহ উদ্ধার ও তদন্ত
১০ নভেম্বর, রবিবার ভোর ৪টার দিকে স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তায় পুলিশ মুনতাহার মরদেহ উদ্ধার করে। ঘটনাস্থলটি ছিল বাড়ির পাশের একটি খাল, যেখানে কাদামাটির মধ্যে মরদেহ লুকানো ছিল। মুনতাহার গৃহশিক্ষিকা মর্জিয়া আক্তার, তার মা আলিফজান এবং নানী কুতুবজানকে পুলিশ আটক করেছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ভোররাতে আলিফজান মরদেহ খাল থেকে সরিয়ে পুকুরে ফেলার চেষ্টা করছিলেন, যা স্থানীয় আবদুল ওয়াহিদ দেখতে পান এবং চিৎকার করেন।
ওসি আব্দুল আউয়াল জানান, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, অপহরণের পর শিশুটিকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয় এবং মরদেহ খালের কাদামাটির মধ্যে পুঁতে রাখা হয়। মুনতাহার লাশে আঘাতের চিহ্ন, গলায় রশি বাঁধা, এবং পোড়ার মতো দাগ রয়েছে।
গ্রেফতার ও জিজ্ঞাসাবাদ
পুলিশ মুনতাহার গৃহশিক্ষিকা মর্জিয়া এবং তার পরিবারকে আটক করেছে। মর্জিয়া এবং তার মা আলিফজান প্রাথমিকভাবে হত্যার দায় স্বীকার করলেও হত্যার সুনির্দিষ্ট কারণ এখনো জানা যায়নি। পুলিশ ঘটনার পেছনের কারণ খুঁজতে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে।
সামাজিক প্রতিক্রিয়া ও শোক
মুনতাহার নির্মম মৃত্যুর ঘটনায় পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। স্থানীয়রা বিক্ষুব্ধ হয়ে মর্জিয়ার ঘর ভেঙে আগুন ধরিয়ে দেয়। মুনতাহার মা-বাবা এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের আহাজারি শুনে উপস্থিত সকলকেই ব্যাথিত করেছে। মুনতাহার বাবা শামীম আহমদ আহাজারি করে বলেন, "আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই। আর যেনো কোনো মা-বাবার বুক এভাবে খালি না হয়।
উপসংহার
মুনতাহার মতো নিষ্পাপ শিশুর এ ধরনের নির্মম হত্যাকাণ্ডে পুরো দেশবাসী শোকাহত। ঘটনাটির প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটনের জন্য পুলিশ তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে এবং এ বিষয়ে যথাযথ বিচার দাবি করছে মুনতাহার পরিবার ও স্থানীয়রা।
আপনার মতামত লিখুন :